ওজন কমানোর কথা উঠলে নানা দামি পানীয় বা জটিল রেসিপির দিকে ছোটেন অনেকে। অথচ দেশি রান্নাঘরেই আছে এমন এক টক, গাঢ় রঙের ফল, যা হজমক্ষমতা বাড়ায়, অতিরিক্ত খিদে কমায় এবং পেটের মেদ ঝরায়। সেই ফল ভেজানো জল এখন স্বাস্থ্য সচেতনদের প্রিয় পানীয় হয়ে উঠেছে। যদিও বাংলার হেঁশেলে এখনও জনপ্রিয় হয়নি কোকাম। ফলটি মূলত ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ধরে, অর্থাৎ মহারাষ্ট্র, গোয়া, কর্নাটক এবং কেরলের মতো রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। তবে বড় বড় দোকানে বা অনলাইনে শুকনো ফল হিসেবে এখানেও বিক্রি হয় তা। কেউ কেউ আবার সিরাপ বা পাউডার হিসেবেও কিনে খান।
কী ভাবে কোকাম খাবেন? ছবি: সংগৃহীত।
কোকাম কেন এত উপকারী?
কোকামে থাকে একটি বিশেষ প্রাকৃতিক উপাদান, হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড (এইচসিএ), যা অতিরিক্ত খিদে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে বার বার খাওয়ার ইচ্ছে দমন করার শক্তি বেড়ে যায়। পাশাপাশি, চর্বি গলিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিডের। কোকামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যৌগ গার্সিনলের প্রদাহনাশী গুণ রয়েছে। এর প্রভাবে হজমশক্তি উন্নত হয়, গ্যাস-অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যও কমায়। এতে রয়েছে ভিটামিন সি-ও, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে, উপরন্তু লড়াই করে ফ্রি র্যাডিকালের সঙ্গেও। কোকাম দেহে কার্বোহাইড্রেটকে মেদে পরিণত হতে বাধা দেয়। তাই নিয়মিত পান করলে ওজন নিয়ন্ত্রণে ভাল ফল পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনক ভাবে কোকামের হাইড্রক্সিসাইট্রিক অ্যাসিড সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে বলে মনমেজাজ ভাল হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে এই ফল খেলে। তা ছাড়াও এই ফলে রয়েছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন।
কী ভাবে কোকাম-জল তৈরি করবেন?
৪-৫টি টুকরো শুকনো কোকাম হালকা গরম জলে ভিজিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট রাখলেই কোকাম তার রং, স্বাদ আর গুণাগুণ জলে ছাড়তে শুরু করে। জল ছেঁকে নিয়ে হলে সরাসরি খেয়ে ফেলতে পারেন। চাইলে সামান্য বিটনুন, গোটা জিরে এবং পুদিনাপাতা মিশিয়ে স্বাদবৃদ্ধি করতে পারেন। খাওয়ার আগে এক গ্লাস কোকাম ভেজানো জল অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখবে।
আরও পড়ুন:
কোন সময়ে খেলে সবচেয়ে ভাল?
সকালে জলখাবারের আগেও খাওয়া যায়, আবার ব্যায়ামের পর খেলেও শরীরে শক্তি বাড়ে।
কিছু সতর্কতা
যাঁদের রক্তচাপ কম বা শরীর খুব দ্রুত জলশূন্য হয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা পরিমাণ বুঝে এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে খাবেন। যাঁরা পাকস্থলির রোগে ভোগেন, তাঁরাও কোকামের বিষয়ে সতর্ক হবেন। প্রথমে অল্প পরিমাণে শুরু করলেই ভাল।
(এই প্রতিবেদন সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা। আপনি কোকাম ভেজানো জল খেতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।)