পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে পরবর্তী প্রজন্মেরও তা হতে পারে বলেই আশঙ্কা করা হয়। মা-বাবা বা খুব ঘনিষ্ঠ আত্মীয়, যাঁর সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, তাঁদের কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে স্বাভাবিক ভাবে ভয় থেকে যায়। অনেকে ভাবেন, যে তাঁরাও কোনও না কোনও সময়ে মারণরোগের কবলে পড়তে পারেন। ক্যানসার হবে কি না, বা ভবিষ্যতে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না,তা ধরতে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হল জিন টেস্টিং। জিনগত বিন্যাস বিশ্লেষণ করলেই আগাম বোঝা যায়, যে ক্যানসারের বীজ লুকিয়ে আছে কি না। জিনের পরীক্ষা সময়সাপেক্ষ এবং খরচসাপেক্ষও বটে। এই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় অনেকের কাছেই বিষয়টি জটিল। জিনের এই পরীক্ষাই এ বার বিনামূল্যে হতে চলেছে দেশে। কর্কটরোগ নির্মূল করার লক্ষ্যে বড়সড় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
রক্তের ক্যানসার ও অগ্ন্যাশয়ের কয়েক রকম ক্যানসারের শনাক্তরণে জিনের পরীক্ষা করা হবে বলে খবর। রক্তের ক্যানসার ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকেমিয়া (সিএমএল) এবং পিত্তথলির ক্যানসার কোলাঞ্জিওকার্সিনোমার পরীক্ষায় জিন টেস্টিং করা হয়। এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়ছে। দেশে রক্তের ক্যানসারের রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ সিএমএল রোগী। অথচ রোগ গোড়ায় ধরা পড়লে বা রোগটি হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, জানা গেলে আগে থেকেই তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সার্ভেয়ার ইন্ডিয়া নামে এক ফরাসি ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা জিনের পরীক্ষা শুরু করবে। এই সংস্থার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে দেশের অন্যতম বড় জেনেটিক ল্যাবোরেটরি মেডজিনোম এবং বায়োটেকনোলজি কোম্পানি স্ট্র্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস।
আরও পড়ুন:
রক্তের ক্যানসার ও পিত্তথলির ক্যানসার শনাক্তকরণে দুটি জেনেটিং টেস্টিং হবে— আইডিএইচ১ এবং আইডিএইচ২। বর্তমানে এই দু’টি টেস্ট করতে খরচ পড়ে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে পিত্তথলির ক্যানসারের আশঙ্কাআগাম জানতে যে ধরনের বায়োমার্কার টেস্ট করা হয়, তার খরচ ৭০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা অবধি। দেশে বহু মানুষই এমন ক্যানসারে আক্রান্ত হন এবং আগে থেকে ধরা না পড়ায় তার চিকিৎসাও খুব জটিল হয়ে ওঠে। সাধারণ দেখা গিয়েছে, ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সেই এই দুই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। যাঁদের পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। রক্তের ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। উপযুক্ত চিকিৎসা ও কেমোথেরাপির পরেও বাঁচার হার ২৫ শতাংশ বা তারও কম হতে পারে।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, জিনগত পরীক্ষা করলে ধরা পড়বে কোন কোন জিনে বদল হচ্ছে। ঠিক সেই জায়গার কোষগুলিকে ধ্বংস করতে কী ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন, তা বোঝা যাবে। এতে যেমন ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আগেই তাকে আয়ত্তে আনা সম্ভব হবে, তেমনই শরীরের সুস্থ কোষগুলি অক্ষত থাকবে।