সারা দিনে আপনার হাত জেনে বা না জেনে কত কী ছুঁয়ে ফেলে, তার হিসাব রাখেন কি? কম্পিউটারের কি বোর্ড থেকে শুরু করে শৌচাগারের ফ্ল্যাশ করার বোতাম কিংবা বাসে-ট্রেনের হ্যান্ডেল, মোবাইল, ব্যাগ, জলের কল, সিঁড়ির রেলিং, লিফ্টের বোতাম, দরজার হাতল— এমন অনেক জায়গা যেখানে আরও পাঁচজনের হাত পড়ে। যেখান থেকে জীবাণু ছড়ায়। করোনা অতিমারির সময়ে এই বিষয়গুলি নিয়ে কিছুটা সচেতন হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। ইদানীং অধিকাংশই আবার ফিরে গিয়েছেন পুরনো অভ্যাসে। কিন্তু তার ফলে কী হচ্ছে?
কারও প্রতিদিন বদহজমের সমস্যা লেগেই আছে। কারও খাওয়া-দাওয়ার সামান্য পরিবর্তনেই বাঁধছে পেটের রোগ। পরিস্থিতি তেমন হলে বমি, মাথাঘোরার মতো সমস্যাও হচ্ছে। হচ্ছে জ্বর-জ্বালা আরও নানা অসুখ বিসুখ। বিরক্ত হয়ে এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ভাবছেন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু আসল সমস্যা শরীরে নয়, দৈনন্দিন হাত পরিষ্কার রাখার অভ্যাসে। হাত সবচেয়ে বেশি জীবাণুর বাহক। আর সেই জন্যই চিকিৎসকেরা বলেন, শুধু ভাল করে হাত ধুলেই ৮০ শতাংশ রোগ দূরে রাখা যায়।
হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং আমেরিকার সেন্টার্স ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, রোগ দূরে রাখার সেরা উপায় হল হাত ধোয়া। তবে সেই হাত ধোয়া শুধু জলের তলায় হাত কচলে নেওয়া নয়। সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আছে।
১। প্রথমে পরিষ্কার জলের নীচে হাত রাখুন।
২। হাত ভেজানোর পরে হাতে ততটা সাবান নিন, যাতে ঘষলে হাতের পাতায় সম্পূর্ণ সাবান লেগে যায়।
৩। দু’হাত ঘষে ফেনা তৈরি করুন। নখের ডগা দিয়ে দু’হাতের পাতা, আঙুলের মাঝখানে এবং হাতের পিঠের অংশ ঘষুন।
৪। নখের নীচের অংশও পরিষ্কার করুন।
৫। ২০ সেকেন্ড ধরে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। ভাবছেন ঘড়ি কোথায় পাবেন। মনে মনে ‘হ্যাপি বার্থডে’ গানটা দু’বার গান। তা হলেই ২০ সেকেন্ড পেরোবে।
৬। হাত জলে ভাল ভাবে ধুয়ে নিন।
৭। হ্যান্ড ড্রায়ার বা পরিষ্কার কাপড়ে হাত মুছে নিন
কখন হাত ধোবেন?
হাত ঠিক করে ধোয়া যেমন জরুরি, তেমনই হাত বারে বারে ধোয়াও জরুরি। দিনে এক বার ভাল ভাবে হাত ধুলেন। বাকি সময় ধুলেন না, তাতে লাভ হবে না কোনও।
১। প্রতি বার খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন
২। প্রতি বার শৌচাগার ব্যবহারের পরে হাত ধুয়ে নিন।
৩। নাকে হাত দিলে, হাঁচলে বা কাশলেও হাত পরিষ্কার করুন।
৪। বাসে-ট্রেনে সফর করার পরে কিংবা সিঁড়ির রেলিং বা লিফ্টের বোতামে হাত দেওয়ার পরেও হাত ধোয়া উচিত।
৫। কোনও রোগীর ঘরে বা হাসপাতালে গেলেও হাত ধোয়া উচিত।
৬। নোংরায় হাত দিলে তো হাত ধোবেনই।
আরও পড়ুন:
সাবান না থাকলে কী করবেন?
সব সময় সাবান পাওয়া সম্ভব নয়। তবে অতিমারির সময় থেকে স্যানিটাইজ়ার সহজেই পাওয়া যায়। সঙ্গে রাখা ভাল। ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে, এমন স্যানিটাইজ়ার হাতে নিয়ে হাত ধোয়ার মতো করেই হাতের সর্বত্র ভাল ভাবে ঘষে হাত শুকিয়ে নেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তাতেও হাতে থাকা অধিকাংশ জীবাণু নষ্ট হবে। তবে স্যানিটাইজ়ার ক্ষতিকর রাসায়নিক বা ধুলো-ময়লা দূর করতে পারে না। তাই সম্ভব হলে প্রতি বার সাবান এবং জল দিয়েই হাত ধোয়ার চেষ্টা করুন।