ভিটামিন ডি নিয়েই যত চিন্তা। অন্যান্য ভিটামিন খাবার বা সাপ্লিমেন্ট থেকে সহজে পাওয়া গেলেও, ভিটামিন ডি অত সহজে মেলে না। ভিটামিন ডি-এর অন্যতম প্রধান উৎস হল সূর্যালোক। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রখর রোদে থাকা তো সম্ভব নয়। বিশেষ করে এই গরমের দিনে কিছু ক্ষণ রোদে থাকলেই শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। তা হলে উপায়? ভিটামিন ডি কোথা থেকে পাওয়া যাবে?
সহজে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করতে অনেকেই সাপ্লিমেন্টের উপর ভরসা রাখেন। তবে চিকিৎসকেরা বলেন, অতিরিক্ত পরিমাণে সাপ্লিমেন্ট খেলে তার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষ করে ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্ট নির্দিষ্ট ডোজ়ে না খেলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতি মিলিলিটারে ২০ ন্যানোগ্রাম ভিটামিন ডি থাকা দরকার। এই মাত্রা কমে গেলে হাড় ভঙ্গুর তো হবেই, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমবে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে মানসিক স্বাস্থ্যে। ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হবে, মানসিক চাপ-উদ্বেগ বাড়বে, অবসাদও গ্রাস করতে পারে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের গবেষণা অনুযায়ী ১৯-৭০ বছরের মধ্যে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা যদি নিয়মিত ০.০১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি খান, তাহলে ভাল।
আরও পড়ুন:
ভারতের মতো দেশে যেখানে রোদের অভাব নেই, সেখানেই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি হচ্ছে। ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে আগেই তা বলা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন, সূর্যের আলো শুধু নয়, খাওয়াদাওয়াও এমন ভাবে করতে হবে যা থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এখন বেশির ভাগ লোকজনই বাতানুকূল ঘরে বসে কাজ করেন। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা গায়ে রোদ লাগবে, এমনটা কখনওই সম্ভব হবে না। ছোটরাও আজকাল খুব বেশি বাইরে বেরিয়ে খেলাধূলা করে না। তাই তাদের ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে উপায় কী?
তিন রকম খাবার থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যেতে পারে—
মাছ
অনেকেই ভাবে টুনা, কর্ড বা ম্যাকারেলের মতো মাছেই ভিটামিন ডি থাকে। তা নয়। বাঙালিরা রোজ যে মাছ খান, তার কয়েকটিতেও কিন্তু ভিটামিন ডি থাকে। যেমন রোজ যে ধরনের মাছ বেশি রান্না হয় বাড়িতে তার মধ্যে রুই মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে ১৫০-২০০ আইইউ (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট) ভিটামিন ডি থাকে। কাতলা, ইলিশ, পাবদা, রূপচাঁদা, মৌরলা মাছেও ভাল পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে।
ঘি
প্রাণিজ প্রোটিন থেকেই যে শুধু ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে তা নয়, অনেকেই জানেন না ঘি-তেও কিন্তু ভিটামিন ডি থাকে। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, এক চামচ (১৩ গ্রামের মতো) ঘি থেকে প্রায় ১৫-২০ আইইউ ভিটামিন ডি পাওয়া সম্ভব। যদি ভাতের পাতে কেউ দু’চামচ ঘি খান, তা হলেও চাহিদা কিছুটা পূরণ করা যাবে। তা ছাড়া ঘি-তে ভিটামিন এ, ই, কে থাকে। শরীরে ক্যালশিয়াম শোষণে সাহায্য করে ঘি। পরিমিত পরিমাণে খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যও ভাল থাকবে।
ডিমের কুসুম
ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস। ৪০-৫০ আইইউ ভিটামিন ডি পাওয়া যায় একটি ডিমের কুসুমে। কোলেস্টেরলের ভয়ে যাঁরা ডিমের কুসুম খান না, তাঁরা ভিটামিন ডি-এর জন্য খেতেই পারেন। তবে ডিমের খোলাতেও ভাল পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে। দিনে একটি বা দু’টি সেদ্ধ ডিম খেলে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি অনেকটাই মিটবে। তবে ডিম মেপেই খেতে হবে। কী ধরনের ডায়েট করেন, শরীরচর্চা করেন কি না, তার উপরেই নির্ভর করবে সবকিছু। বেশি ভিটামিন ডি পেতে দিনে ৪-৬টি ডিম খেয়ে ফেললে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হতে পারে।