হাঁটলে ওজন ঝরে। হাঁটলে পেশির ক্ষমতাও বাড়ে। কিন্তু হাঁটবেন কী ভাবে? ফিটনেস বৃদ্ধির জন্য হাঁটার নানা ধরনের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েই থাকে। তবে সম্প্রতি ইন্টারনেটে আগ্রহ বাড়িয়েছে হাঁটার একটি বিশেষ পদ্ধতি— ‘১২-৩-৩০’। অনেকেরই দাবি এই পদ্ধতিতে হাঁটলে ওজন ঝরবে দ্রুত। পেশির শক্তিও বাড়বে বেশি। কিন্তু ১২-৩-৩০ পদ্ধতিটি আসলে কী?
টরন্টো নিবাসী ফিটনেস প্রশিক্ষক ড্যান গো সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা করেছেন এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে। ড্যান লিখেছেন, ‘‘একটা বিশেষ ধরনের হাঁটার পদ্ধতি নিয়ে খুব হইচই হচ্ছে ইদানীং। ১২-৩-৩০। আর দেখা যাচ্ছে এই পদ্ধতির উপকারিতার বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও রয়েছে। এই পদ্ধতিতে পেশির স্বাস্থ্য ভাল হওয়ার পাশাপাশি, হার্টও ভাল থাকে। দ্রুত ওজনও কমে বলে দেখা গিয়েছে।’’
কিন্তু ১২-৩-৩০ হাঁটার পদ্ধতিটি আসলে কী রকম?
ওই তিনটি সংখ্যা আসলে হাঁটার একটি নির্দিষ্ট নিয়ম তৈরি করে দেয়।
১২
ইনক্লাইন। ট্রেডমিলের ইনক্লাইন ১২ শতাংশে সেট করতে হবে, যাতে পাহাড় চড়া বা চড়াইয়ে হাঁটার মতো জোর লাগে শরীরে। ড্যান বলছেন, ট্রেডমিলে ৫ শতাংশ ইনক্লাইনে হাঁটলে সাধারণ হাঁটার থেকে ৫২ শতাংশ বেশি ফ্যাট ঝরে। ১০ শতাংশ ইনক্লাইনে হাঁটলে ১১২ শতাংশ বেশি ক্যালরি ঝরে। ১২ শতাংশ ইনক্লাইনে হাঁটাকে বলা হয় ফ্যাট টর্চিং টেরিটরি। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি মেদ ঝরে ওই পদ্ধতিতে হাঁটলে।
৩
এই সংখ্যাটি ব্যবহার করা হয় হাঁটার গতি বোঝাতে। হাঁটার গতি হতে হবে ৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা, যা প্রায় ৪.৮ কিমি প্রতি ঘণ্টার সমান। দ্রুত হাঁটতে হলে এই গতিটিকে আদর্শ বলে মনে করা হয়।
৩০
সময় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ উপরোক্ত দু’টি শর্ত মেনে একটানা ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
অল্প আয়াসে বেশি মেদ ঝরানোর জন্য সপ্তাহে এই পদ্ধতিতে ৩-৫ দিন পর্যন্ত হাঁটার পরামর্শ দিচ্ছেন ড্যান।
এই পদ্ধতি কীভাবে সাহায্য করে?
১২-৩-৩০ হাঁটার পদ্ধতি ফিটনেস বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত কার্যকর একটি উপায়। কারণ—
১। ক্যালরি খরচ হয় বেশি: সমতলে হাঁটার তুলনায় ১২ শতাংশ চড়াইয়ে হাঁটলে শরীরকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ফলে সাধারণ হাঁটার চেয়ে অনেক বেশি ক্যালরি খরচ হয়।
২। হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি: এতে হৃৎস্পন্দনের মাত্রা বাড়ে। কার্ডিও বা যে এক্সারসাইজ় করলে হৃদ্যন্ত্র এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, এই পদ্ধতিতে হাঁটলেও সেই একই ফল পাওয়া যায়।
৩। পেশির শক্তি বাড়ে : চড়াইয়ে হাঁটলে পায়ের পেছনের পেশি বা গ্লুটস এবং হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে বেশি। ফলে ওই পেশির শক্তি বাড়ে। শরীরের নীচের অংশের ক্ষমতা এবং সহ্যশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৪। ওজন কমে: ওজন দ্রুত কমানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটি অত্যন্ত কার্যকর বলে জানাচ্ছেন ফিটনেস প্রশিক্ষকেরা। রোজ নিয়ম করে এই রুটিন মেনে চললে দৈনিক ক্যালেরি খরচের পরিমাণ বাড়বে। স্বাভাবিক ভাবেই ওজন কমবে দ্রুত।
৫। আঘাতের সম্ভাবনা কম : দৌড়োনো বা অন্যান্য ব্যায়ামে এটি পায়ের অস্থিসন্ধিতে কম প্রভাব ফেলে। হাঁটু এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধিতে আঘাতের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
সচেতন থাকুন
যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে বা নতুন শরীরচর্চা শুরু করে থাকেন, তবে প্রথমে কম ঢাল এবং কম সময় দিয়ে শুরু করুন। ধীরে ধীরে শরীর অভ্যস্ত হয়ে উঠলে আপনি পুরো ১২-৩-৩০ রুটিনে যেতে পারেন। প্রয়োজনে একজন ফিটনেস প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন।