Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্যসচেতনদের মধ্যে হইচই ফেলেছে ‘এ২’ ঘি! সাধারণ ঘিয়ের থেকে এটি কিসে আলাদা? কেন খাবেন?

এ যুগের স্বাস্থ্যসচেতনেরা ‘সুপারফুড’ খুঁজতে ব্যস্ত। অর্থাৎ এমন খাবার, যা শুধু গুটিকয়েক পুষ্টিগুণে সীমাবদ্ধ নয়। এক খাবারেই থাকবে নানা পুষ্টিগুণ। সেই সুপারফুডের দুনিয়ায় আধুনিকতম সংযোজন এ২ ঘি।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৬

ছবি : সংগৃহীত।

ঘি কিনতে প্রতি মাসে কত খরচ করেন? সাধারণ ১০০ গ্রামের ঘিয়ের কৌটো মুদির দোকানে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। ঝর্না, মর্টন ডেয়ারি, লক্ষ্মী ঘিয়ের মতো বাংলার নিজস্ব ব্র্যান্ডের ভাল গাওয়া ঘি কিনতে চাইলে ৫০০ গ্রামের শিশির দাম পড়বে ৪৫০-৫০০ টাকার আশপাশে। আর দেশজ ব্র্যান্ডগুলো ‘দেশি ঘি’ নামে যে ঘি বিক্রি করে, তার ৫০০ গ্রামের প্যাকেট বা কৌটো পাওয়া যায় ৩০০-৩৫০ টাকায়। কিন্তু ওই একই পরিমাণ ঘি কিনতে যদি হাজার দুয়েক টাকা দিতে হয়, রাজি হবেন কি? কেনই বা হবেন! কিন্তু যদি বলা হয়, ওই ঘি হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে ডায়াবিটিস রোধ করতে সাহায্য করে, লিভার ভাল রাখে কিংবা ক্যানসারের মদত দিতে পারে এমন ক্ষতিকর বৈশিষ্ট্য বহন করে না, তা হলে?

বাজারে এমন ঘি সত্যিই পাওয়া যায়! তার নাম এ ২। ওই ঘিয়ের প্রতি লিটারের দাম না হক সাড়ে তিন হাজার টাকা! আর আপাতত এই ঘি নিয়েই হইচই স্বাস্থ্যসচেতন দুনিয়ায়।

দেশে তো বটেই বিদেশেও চাহিদা বাড়ছে এ২ ঘিয়ের। প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দাম দিয়ে তা কিনছেনও স্বাস্থ্যপ্রেমী মানুষজন। কারণ, তাঁদের ধারণা, এই ঘি এক ধরনের ‘সুপারফুড’।

কেন এই ধারণা? কেন এর এত বেশি দাম, এতে কী কী গুণ রয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে জেনে নেওয়া যাক এই মহার্ঘ্য ঘি আসলে কী বস্তু! সাধারণ ঘিয়ের সঙ্গে এর তফাতই বা কোথায়?

সাধারণ ঘি বনাম এ২ ঘি

১. দুধ: ঘি বানানো হয় দুধ থেকে। আর সেই দুধেই দুই ঘিয়ের মূলগত পার্থক্য। এ২ ঘি তৈরি হয় গির, সাহিওয়াল এবং রাঠির মতো ভারতীয় জাতের গরুর দুধ থেকে। অন্য দিকে, সাধারণ ঘি তৈরি করা হয় জার্সি বা হোলস্টেইনের মতো পশ্চিমা জাতের গরু অথবা সঙ্কর জাতের গরুর দুধ থেকে।

২. প্রোটিন: এই দুই ধরনের দুধের পুষ্টিগুণেও পার্থক্য থাকে। গির, সাহিওয়াল এবং রাঠির মতো গরুর দুধে থাকে এ২ বিটা-কেসিন প্রোটিন। আর অন্যান্য গরুর দুধে থাকে এ১ বিটা-কেসিন। নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে এ১ বিটা কেসিন শরীরে নানা রোগের কারণ হতে পারে।

৩. পদ্ধতি: তফাত রয়েছে ঘি বানানোর পদ্ধতিতেও। গরুর দুধকে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে তাতে দইয়ের সাজা মিশিয়ে দই জমতে দেওয়া হয় সারা রাত। তার পরে সেই দই কাঠের লাঠি দিয়ে মথন করে আলাদা করা হয় মাখন বা ননী। সেই মাখন বা ননীতে জাল দিয়ে তৈরি হয় এ২ ঘি। এই পদ্ধতিকে বলা হয় কোল্ড প্রেস বা বিলোনা প্রক্রিয়া। প্রাচীন ওই পদ্ধতি মেশিনে বানানোর সময় সঠিক ভাবে পালন করা হয় না।

সাধারণ ঘি তে থাকা এ১ বিটা কেসিন কি ক্ষতিকর?

এ১ বিটা কেসিন সরাসরি ক্ষতিকর না বললেও কিছু কিছু গবেষণা ওই প্রোটিনের সঙ্গে কয়েকটি রোগের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে— টাইপ ১ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আর্টেরিওস্ক্লেরোসিস, অটিজ়ম, সিজোফ্রেনিয়া, শিশুর সাডেন ডেথ সিন্ড্রোম ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে এ১ বিটা কেসিন প্রোটিনের উপস্থিতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে এ২ ঘি ওই প্রোটিন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হওয়ায় ওই ঘিকে বেশি নিরাপদ বলেও মনে করছেন অনেকে।

পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী বলছেন, “এ২ ঘি তাঁদের জন্যও ভাল, যাঁদের আইবিএস বা হজমের সমস্যা রয়েছে। কিংবা যাঁরা ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্ট, অর্থাৎ দুগ্ধজাত খাবার খেতে পারেন না, তাঁরাও এই নিশ্চিন্তে ঘি খেতে পারবেন।”

এ২ ঘি কে সুপারফুড বলার কারণ কী?

এ যুগে সুপারফুড বলার হয় সেই খাবারকে যাতে নানা ধরনের উপকারী পুষ্টিগুণ থাকে এবং যা শরীরের নানা জৈব প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ভাবে চালাতে সাহায্য করে। এ২ ঘিয়েও রয়েছে নানা ধরনের উপকারী পুষ্টি। এতে আছে:

ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি, ত্বক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য।

ভিটামিন ডি: ক্যালশিয়াম শোষণ করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।

ভিটামিন ই: এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা ফ্রি র‍্যাডিক্যাল দূরে রাখে। আর এই বৈশিষ্ট্য ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

ভিটামিন কে২: হার্টের স্বাস্থ্য এবং হাড়ের ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া রোধে করে।

ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৯ ফ্যাটি অ্যাসিড: হার্ট এবং মস্তিষ্কের কাজে সাহায্য করে।

কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড: ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমাতে পারে। আর যেহেতু প্রদাহ পরোক্ষে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই একে ক্যানসার প্রতিরোধকও বলা যায়।

কেন এত দাম?

প্রথমত, খাঁটি এ২ ঘি বানাতে হলে যে বিলোনা বা কোল্ডপ্রেস প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা সময়সাপেক্ষ। আর সময় সব সময়েই দামি। তা ছাড়া গির, সাহিওয়াল এবং রাঠির মতো ভারতীয় জাতের গরুর দুধের দাম বেশি। আর এই ঘিয়ে এ ১ বিটা কেসিন প্রোটিন না থাকাও এ ২ ঘিয়ের দাম বেশি হওয়ার কারণ।

সাধারণ ঘি ছেড়ে কি এ২ ঘি খাবেন?

পুষ্টিবিদ শ্রেয়া জানাচ্ছেন যে কোনও ভাল ঘিকেই সুপারফুড বলা হয়। তার কারণ এতে থাকা নানা ভিটামিন এবং এর হাই স্মোক পয়েন্ট। সাধারণ তেল এক বার ব্যবহারের পর দ্বিতীয় বার ব্যবহার করলে তা কোলেস্টেরলের কারণ হতে পারে। কারণ সাধারণ তেল এক বার গরম করলেই স্মোক পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। ঘিয়ের ক্ষেত্রে তা হয় না। তাই তো হার্টের জন্য ভাল।

শ্রেয়া বলছেন, “সাধারণ ঘি আর এ২ ঘিয়ে ওই স্মোক পয়েন্ট বা পুষ্টিগুণের বিশেষ তফাত নেই। তবে এটা ঠিকই যে এ২ ঘিয়ে এ১ বিটা কেসিন নেই। হজম করাও সুবিধাজনক। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এই ঘি সকলের সামর্থ্যের মধ্যে নয়।”

পুষ্টিবিদের পরামর্শ, এ২ ঘি বলে বাজারে যত ঘি বিক্রি হচ্ছে, তার খাঁটিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাই এই ঘি কিনে খেতে চাইলে ভাল ভাবে যাচাই করে কিনুন।

A2 Ghee Benefits healthy ghee Healthy Fat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy