সবাই জানেন, মন ভাল থাকলে মানুষ হাসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মন ভাল থাকলেই কি হাসে, না কি হাসলে মন ভাল থাকে? এই নিয়েই মনোবিজ্ঞানে আছে এক অভিনব ধারণা, ‘ফেসিয়াল ফিডব্যাক হাইপোথিসিস’। সহজ ভাবে বললে, মুখের অভিব্যক্তি মনের অনুভূতিকে প্রভাবিত করতে পারে।
কী বলে এই তত্ত্ব
এই তত্ত্বের মূল ভাবনা সহজ: মুখের পেশি যখন আনন্দ, বিস্ময় বা রাগের মতো অভিব্যক্তি তৈরি করে, তখন সে সব সঙ্কেত মস্তিষ্কে যায়। ফলে, মস্তিষ্ক ধরে নেয়, মনে সেই আবেগই তৈরি হয়েছে। তবে এমন হতেই পারে যে, মুখে হাসলেও মনে অন্য কোনও আবেগ লুকিয়ে। কিন্তু মস্তিষ্ক যে সঙ্কেত পেয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে শরীরে সেরোটোনিন বা ডোপামাইনের মতো রাসায়নিকের নিঃসরণ ঘটে, যা মনের অবস্থাকে বদলে দিতে পারে।
উদাহরণ দিয়ে বললে, কেউ জোর করে হাসলেও কিছু ক্ষণের মধ্যে মন খানিকটা হালকা লাগে। কিন্তু রাগে মুখ শক্ত করলে, ঠোঁট কামড়ালে অথবা কষ্টে মুখ চেপে রাখলে মানসিক চাপ আরও বাড়তে পারে। মনোবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘থেরাপি হিসেবে এই পন্থা যে খুব ব্যবহার করা হয়, তা নয়। এটা তত্ত্ব হিসেবেই বেশি রয়ে গিয়েছে মনোবিজ্ঞানের জগতে। তবে বিষণ্ণতা কাটানোর জন্যই এই অনুশীলন করানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। ধরা যাক, আমার মনখারাপ। কিন্তু সেই সময়ে আমি যদি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জোর করেই একটু হাসার চেষ্টা করি বা মুখভঙ্গিতে ইতিবাচক অনুভূতির ছাপ প্রকাশ করি, তাতে দেখা যাবে, ধীরে ধীরে আমার মনখারাপের পরিমাণ একটু হলেও কম হবে। এখান থেকেই লাফিং ক্লাবের তত্ত্বটা তৈরি হয়েছিল। প্রাচীনকালে অবসাদের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হত। তবে পরে বোঝা যায়, এটা একমাত্র পদ্ধতি হতে পারে না।’’
মনোবিদ জানাচ্ছেন, এই তত্ত্বটি চার্লস ডারউইনের। পরে সিলভান এস. টমকিন্স এবং ক্যারল ইজার্ডের মতো মনোবিজ্ঞানীরা আরও গবেষণা চালান। এই ধারণাটি জেমস-ল্যাঞ্জের আবেগ-তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এর মূল কথা, শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া (যেমন মুখের পেশির নড়াচড়া) আবেগ তৈরি করে।
বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিষয়টি কতটা সত্য বা কার্যকর, তা নিয়েও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। মনোবিদেরা তাই বলেন, মুখের অভিব্যক্তি আবেগ তৈরি করে না, কিন্তু আবেগকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারে। মুখের পেশি থেকে স্নায়ুর মাধ্যমে বার্তা যায় ব্রেনস্টেমে, যা আবেগ নিয়ন্ত্রণের অংশ। হাসলে শরীরে এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিন বাড়ে, যা মানসিক চাপ কমায়। মুখভঙ্গির সঙ্গে শরীরের ভঙ্গিও বদলায়, যেমন সোজা হয়ে দাঁড়ানো বা দৃঢ় দেহভঙ্গি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। হালকা হাসি বা গভীর শ্বাস নিয়ে মুখে প্রশান্ত ভাব রাখলে স্নায়ু শান্ত হয়। আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও এই পদ্ধতি কার্যকর। যেমন, ধ্যান মনকে শান্ত করে, মুখের প্রশান্ত ভাবও একই ভাবে মস্তিষ্কে শান্তির বার্তা পাঠায়।