অস্তরাগের সূর্য দেখতে দেখতে মনের মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানো রোম্যান্টিক অবসরযাপনের ‘শেষ কথা’ মনে হতেই পারে। কিন্তু সূর্যাস্ত সবার কাছে ঠিক ততটা রোম্যান্টিসিজ়ম বয়ে আনে না। কারও কারও কাছে সূর্যাস্ত অভিশাপের মতো। কারণ, প্রকৃতির মতো তাঁদের জীবনেও সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার ঘনায়। সেই অন্ধকার বিষণ্ণতার। একাকিত্বের। উদ্বেগের। অস্তাচলের সূর্য যাঁদের জীবনে এমন অন্ধকার নামিয়ে আনে, তাঁদের অস্বস্তির একটি নাম আছে। ‘সানসেট অ্যাংজ়াইটি’, যে সমস্যা ভারতে খুব বিরলও নয়।
সানসেট অ্যাংজ়াইটি বা সূর্যাস্ত-পরবর্তী উদ্বেগ বা বিষণ্ণতায় ভারতে অনেকেই ভোগেন বলে জানাচ্ছেন মনোবিদ সোনাল খাঙ্গারোট। তিনি বলছেন, ওই অনুভূতি অন্য উদ্বেগ বা বিষণ্ণতার চাইতে আলাদা। যাঁদের ওই সমস্যা হয়, তাঁদের মনে সূর্যাস্তের পরেই অনুশোচনা, অনুতাপবোধ, শূন্যতাবোধ কিংবা অসম্পূর্ণতার বোধ কাজ করতে শুরু করে। মনোবিদ বলছেন, শীতকালে দিন কম, রাত বেশি হওয়ার জন্যও অনেকের উদ্বেগের সমস্যা দেখা দেয়। তাকে বলা হয় সিজ়নাল অ্যাফেক্টিভ ডিজ়অর্ডার। কিন্তু সানসেট অ্যাংজ়াইটির সঙ্গে তাকেও এক করে দেখলে চলবে না।
দিন ফুরোনোর সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার উৎসাহে ভাটা পড়াকে স্বাভাবিক বলে মেনেও নেন অনেকে। ছবি: সংগৃহীত।
কী করে বুঝবেন, ‘সানসেট অ্যাংজ়াইটি’ আছে কি না?
অনেকে বোঝেনই না, তাঁদের সানসেট অ্যাংজ়াইটি রয়েছে। মনোবিদ বলছেন, দিন ফুরোনোর সঙ্গে সঙ্গে কাজ করার উৎসাহে ভাটা পড়াকে স্বাভাবিক বলে মেনেও নেন অনেকে। কিন্তু সমস্যা চিহ্নিত করতে না পারলে তা থেকে প্রতিকার পাওয়াও অসম্ভব। মনোবিদ বলছেন, ‘‘আগে দেখুন, উপসর্গগুলি মিলছে কি না। সন্ধে নামার সঙ্গে সঙ্গে কি শূন্যতা বা একাকিত্বের বোধ গ্রাস করতে শুরু করে? একা থাকার ভয়ও চেপে বসে কি? এমনকি মনে হয়, কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেল? সেই সমস্ত বোধ কি স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে? তবে কোনও মনোবিদের পরামর্শ নিতে পারেন।’’
কোনও শারীরিক সমস্যা কাজ করে কি?
দেহঘড়ির ভূমিকা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন মনোবিদ। তিনি বলছেন, যে হেতু অধিকাংশ মানুষ সকালে কাজ করেন এবং রাতে ঘুমোন, তাই আঁধার নামলেই শরীরও নিজেকে বিশ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে শুরু করে, বিশ্রামের সহায়ক হরমোন মেলাটোনিনের নিঃসরণ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে কারও শরীর যদি মেলাটোনিন হরমোনের প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়, তবে তা শরীরের স্বাভাবিক ভারসম্য নষ্ট করবে। তাতে অস্বস্তি তৈরি হবে। মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হবে।
রাতের সঙ্গে নিঃসঙ্গতাবোধ বা অপ্রিয় ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে যাঁদের, তাঁদেরও সমস্যা হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
মানসিক সমস্যাও কারণ
অনেকের কাছেই সূর্যাস্ত সম্পূর্ণতার প্রতীক। সূর্যাস্তের পরেও কাজ শেষ না হওয়া তাঁদের মধ্যে অসম্পূর্ণতার বোধ তৈরি করতে পারে। আর এ থেকেই আসতে পারে অনুশোচনা এবং পরবর্তী কালে বিষণ্ণতাবোধ এবং একাকিত্বের বোধও। আবার রাতের সঙ্গে নিঃসঙ্গতাবোধ বা অপ্রিয় ঘটনার স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে যাঁদের, তাঁদেরও সমস্যা হতে পারে।
কী ভাবে সমাধান হতে পারে?
মানসিক স্থিরতা এবং শান্তি বজায় রেখে বর্তমানে মনঃসংযোগ করার যে সমস্ত যোগাসন বা প্রাণায়াম রয়েছে, তা অভ্যাস করলে কাজ হতে পারে। ওই ধরনের আসন বা প্রাণায়াম বা ধ্যানকে বলা হয় ‘গ্রাউন্ডিং এক্সারসাইজ়’। এর মধ্যে গভীর শ্বাস নেওয়া, ঠান্ডা কিছু হাতে নিয়ে অনুভব করা, স্ট্রেচিং, ধ্যান করার মতো ক্রিয়াও রয়েছে। এ ছাড়া মনোবিদের তত্ত্বাবধানে কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপির মাধ্যমেও সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে জানাচ্ছেন সোনাল।