Advertisement
E-Paper

আদা কি সত্যিই হজমের গোলমাল সারায়? বমি ভাব দূর করতে কতটা কার্যকরী?

পেটের গোলমাল ঠেকানো হোক বা বমি বন্ধ করা— ওষুধের বিকল্প হিসেবে আদায় ভরসা রাখেন অনেকেই। এখন কথা হল, আদা কি সত্যিই পেটের সমস্যা কমাতে পারে?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১০:০২
What is the science on ginger as a treatment for nausea and other stomach woes

আদার গুণ কতটা, কী বলছে গবেষণা? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

যে প্রদেশেরই রান্না হোক না কেন, হেঁশেলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মশলা হল আদা। কেবল মশলা হিসেবেই নয়, ভেষজ হিসেবেও আদার অনেক গুণ রয়েছে। ঋতু পরিবর্তনের সময়ে গলা খুসখুসে কাশি হলেও চটজলদি ঘরোয়া টোটকা হিসেবে মুখে রাখা যায় আদাকুচি। দীর্ঘ সময়ে গাড়ি বা বাসে যাত্রার সময়ে বমি ভাব হলে মুখে দু’-এক টুকরো শুকনো আদা ফেললেই আরাম। নিমেষে উধাও হবে বমি ভাব। হজমের গোলমাল মেটাতে গ্রিন টি-র মতো আদা চায়ের গুরুত্বও কম নয়। কাজেই পেটের গোলমাল ঠেকানো হোক বা বমি বন্ধ করা— ওষুধের বিকল্প হিসেবে আদায় ভরসা রাখেন অনেকেই। এখন কথা হল, আদা কি সত্যিই পেটের সমস্যা কমাতে পারে?

আদা কী কী গুণে গুণী, সে নিয়ে পরীক্ষা হচ্ছে বিশ্বের নানা জায়গায়। লেবাননের ডার্টমাউথ হিচকক মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ছোটখাটো কিছু পরীক্ষা ও সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আদা খাওয়া নিরাপদ। আদার নানা গুণের মধ্যে আপাতত বমি ভাব দূর করা ও হজমের গোলমাল মেটানোর দিকেই নজর দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, আদা সে পরীক্ষায় উতরে গিয়েছে। বমি বমি ভাব দূর করা বা বমি বন্ধ করতে আদা সত্যিই কার্যকরী।

আদার অনেক গুণ।

আদার অনেক গুণ। ছবি: ফ্রিপিক।

কী ভাবে কাজ করে আদা?

আদার দুই মূল উপাদান জিঞ্জারল ও শোগাওল বমিভাব বন্ধ করে বিশেষ ভূমিকা নেয় বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। মস্তিষ্কের ‘ভমিটিং সেন্টার’, অর্থাৎ মেডুলা অবলাংগাটার কাছাকাছি এলাকা যেখানে ওই অনুভূতি তৈরি হয়, এবং যে পথ দিয়ে সঙ্কেত বাহিত হয়ে আসে, সেই পথটা অবরুদ্ধ করে দিতে পারে আদায় থাকায় ওই দুই উপাদান। ফলে যাঁর প্রচণ্ড বমিভাব হচ্ছে বা বমি হচ্ছে, তিনি যদি আদার কুচি মুখে রাখেন, তা হলে বমি বন্ধ হবে বা বমিভাব দূর হবে কিছু সময়ের মধ্যেই। এই বিষয়ে অবশ্য কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জেরিয়াট্রিক বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের বক্তব্য, “আদা কী ভাবে খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন ও কখন খাচ্ছেন, তার উপরেই সব কিছু নির্ভর করবে। কারও শুকনো আদা খেলে উপকার বেশি হয়, কেউ আদা দিয়ে চা খেলে উপকার পাবেন, কারও আবার জলে ভিজিয়ে রাখা আদা খেলে হজম ভাল হয়। কাজেই শরীর বুঝে এবং পরিমাণমতো আদা খেলে কাজ হতে পারে। তবে গা গোলানো, বমিভাব বা হজমের সমস্যা দূর করতে আদাই যে একমাত্র উপায়, তা ভেবে ফেললে চলবে না।”

বমি ভাব, হজমের সমস্যা মেটাতে পারে আদা, তবে কী ভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে।

বমি ভাব, হজমের সমস্যা মেটাতে পারে আদা, তবে কী ভাবে খাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে। ছবি: ফ্রিপিক।

আদার কিছু সাপ্লিমেন্ট আছে, যেগুলি নিয়েও গবেষণা চলছে। সেই সব সাপ্লিমেন্টের বেশির ভাগই তৈরি হয়েছে শুকনো আদার গুঁড়ো দিয়ে। অনেকের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এমন সাপ্লিমেন্টও বমিভাব দূর করতে পারে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের মর্নিং সিকনেস, গাড়িতে চড়ে যাওয়ার সময়ে মোশন সিকনেসের কারণে মাথা ঘোরা বা বমিভাব দূর করতে ওই সাপ্লিমেন্টগুলি বিশেষ ভাবে কার্যকরী হয়। কেমোথেরাপি বা কোনও জটিল অস্ত্রোপচারের পরে বমিভাব বা ঘন ঘন বমি হওয়ার সমস্যা অনেকেরই হয়। সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শে আদা দিয়ে তৈরি সাপ্লিমেন্ট খেলে উপকার হয়। আদা ভাল, তবে সকলের ক্ষেত্রেই কার্যকরী হবে কি না, তা বলা যায় না, এমনই মত মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিকের। তাঁর মতে, “হজমের গোলমাল মেটাতে আদা উপকারী বটে, এর ভেষজ গুণ অনেক কাজেই আসে, তবে আদা দিয়েই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা বলা যায় না।”

শুকনো আদা কুচি মুখে রাখলে বমি ভাব দূর হয়।

শুকনো আদা কুচি মুখে রাখলে বমি ভাব দূর হয়। ছবি: ফ্রিপিক।

ফ্লোরিডার কয়েক জন বিজ্ঞানী আদার গুণাগুণ নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এ বছরই তেমন কিছু পরীক্ষা হয়েছে। কয়েক জন অন্তঃসত্ত্বাকে প্রতি দিন ৫০০ থেকে ১৫০০ মিলিগ্রাম আদার সাপ্লিমেন্ট খাইয়ে দেখা গিয়েছে, তাঁদের বমিভাব, মাথা ঘোরার সমস্যা দূর হয়েছে। তবে তাঁদের ঘন ঘন বমি করার অভ্যাস যে একেবারে নির্মূল হয়েছে, তা নয়। কিন্তু খানিকটা কমেছে। একই রকম পরীক্ষা ২০২৪ সালেও হয়। কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে এমন ১০০ জনকে প্রতি দিন ১২০০ মিলিগ্রাম করে শুকনো আদার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি সাপ্লিমেন্ট খাওয়ানো হয়। তাতে দেখা যায়, কেমোথেরাপি শুরুর দিন থেকে শুরু করে চার দিন আদার সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পর তাদের বমিভাব কমে যায় অনেকটাই।

২০২৩ সালে ডিসপেপসিয়ার রোগীদের আদা খাইয়ে দেখা হয়। হজম সংক্রান্ত গোলমাল ও পেটের নানা সমস্যাকে একসঙ্গে ডিসপেপসিয়া বলা হয়। বমিভাব, অম্বল, পেটব্যথা, কিছু খেলেই গলা-বুক জ্বালা, পেট ফাঁপা, আবার পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠাকাঠিন্য ও ডায়েরিয়া হওয়া— সব একসঙ্গে হলে তাকে বলা হয় ডিসপেপসিয়া। এমন রোগীকেও আদা খাইয়ে দেখা যায়, তাঁদের পেটের সমস্যা, গলা জ্বালা অনেকটাই দূর হয়েছে। তবে ডায়াবিটিসের রোগী বা যাঁরা রক্ত পাতলা হওয়ার ওষুধ খান, তাঁরা রোজ রোজ আদা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।

গবেষকেরা মত দিয়েছেন, পেটের ক্রনিক সমস্যা, মোশন সিকনেস, অম্বল, গ্যাসের সমস্যায় দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম করে আদা খেলে উপকার হতে পারে। তবে আদা কী ভাবে খেলে বেশি উপকার হবে, সে নিয়ে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

যতগুলি পরীক্ষা হয়েছে, তা দেখে গবেষকেরা মত দিয়েছেন, কাঁচা আদা শুকিয়ে বা আদার পাউডার বেশি কার্যকরী হতে পারে। আদা দিয়ে চা-ও ভাল। যাঁরা কাঁচা আদা পছন্দ করেন না, তাঁদের জন্য সাপ্লিমেন্টই ভাল। তাই বলে আদা দিয়ে তৈরি পানীয় বা আদা চা বলে প্যাকেটবন্দি যে টি-ব্যাগ বিক্রি হয়, তা কেনার আগে সতর্ক হতে হবে। ওই ধরনের পানীয়ে আদার পরিমাণ খুবই কম থাকে, বদলে শর্করার মাত্রা বেশি থাকে। সে সব কেনার আগে লেবেল ভাল করে পড়ে নিতে হবে।

ginger acidity Acid Reflux
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy