ঠান্ডা জাঁকিয়ে না পড়লেও তার আমেজ কিছুটা বোঝা যাচ্ছে মাঝ নভেম্বরেই। আর তার সঙ্গে আরও একটি বিষয় অনেকেই খেয়াল করে থাকবেন। দুপুর পেরোলেই হালকা ঘুম ঘুম ভাব চেপে বসছে শরীরে। কাজে আলস্য আসছে। মনে হচ্ছে, মাথাটা কোথাও রেখে খানিক ক্ষণ গড়িয়ে নিতে পারলে ভাল লাগত। শীতে এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। দিনের মাঝামাঝি গিয়ে এই ঝিমিয়ে পড়াকে বলা হয় ‘এনার্জি ক্র্যাশ’। আশার কথা এই যে, এই ঝিমুনি, ক্লান্তি বা এনার্জি ক্র্যাশ সমল দেওয়া সম্ভব। আর তার চাবিকাঠি লুকিয়ে সকালের প্রথম খাবারেই।
মুম্বইয়ের এক পুষ্টিবিদ রমিতা কৌর জানাচ্ছেন, প্রাতরাশে সামান্য বদল করেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। শীতকালে শরীরকে উষ্ণ রাখতে এবং সারাদিন ধরে সঠিক এনার্জি বজায় রাখতে হলে প্রাতরাশের থালায় এমন কিছু বিশেষ পুষ্টিগুণ রাখতে হবে যা সারা দিন শরীরকে চনমনে থাকতে সাহায্য করবে।
১. কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট
কোন খাবারে পাবেন: ওটস, লাল আটার রুটি, মাল্টি গ্রেন ব্রেড, রাগি বা বাজরার মতো দানা শস্য।
কেন জরুরি: এই সব খাবার ধীরে ধীরে হজম হয়, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায় না। এটি দীর্ঘ সময় ধরে এবং ধীরে ধীরে শরীরে শক্তির জোগান দেওয়ার প্রক্রিয়া জারি রাখে। ফলে দুপুরের খাবার খাওয়ার আগে পর্যন্ত বা দিনের অর্ধেকটা সময়েই শরীরে স্ফূর্তি থাকে।
২. প্রোটিন
কোন খাবারে পাবেন: ডিম, দই , ছোলা/মুগ ডালের অঙ্কুরিত বীজ, এবং পনির।
কেন জরুরি: প্রোটিনও হজম হতে বেশি সময় নেয়, এটি কার্বোহাইড্রেটের সঙ্গে মিশে খাবার ভেঙে শক্তি জোগানোর প্রক্রিয়াকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করে। তা ছাড়া এটি পেশির গঠনেও সাহায্য করে। যা পেশির ক্লান্তি দুর করতে সাহায্য করে।
৩. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট
কোন খাবারে পাবেন: বাদাম ও বীজ, যেমন কাঠবাদাম, আখরোট, চিনা বাদাম, তিল, অল্প পরিমাণে ঘি বা মাখন।
কেন জরুরি: ফ্যাট শরীরে উষ্ণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্ফূর্তির জোগান দিতেও সাহায্য করে। এই ধরনের খাবারে যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে তা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং সার্বিক সুস্থতার জন্যও দরকারি।
৪. ফাইবার
কোন খাবারে পাবেন: শীতকালীন শাকসবজি, যেমন গাজর, পালংশাক, মেথি। পেয়ারা, কলা, আপেলের মতো ফল এবং দানা শস্য।
কেন জরুরি: ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে মন্থর করে এবং রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। যা রোগ প্রতিরোধ এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য প্রয়োজনীয়।
৫. ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট
কোন খাবারে পাবেন: কমলালেবু, লেবু, ব্রকলি, পালং শাক, এবং গাজর।
কেন জরুরি: শীতকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়া জরুরি। কারণ এই সময়ে ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি এবং নানা রকমের রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। ভিটামিন সি , এ, ই সমৃদ্ধ খাবার সে সবার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।
আর যা সাহায্য করবে
শক্তির জোগান বজায় রাখা : কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন একসঙ্গে খেতে হবে। এতে শরীরে শক্তি উৎপন্ন হবে ধীরে ধীরে এবং দীর্ঘ ক্ষণ ধরে। এর ফলে দুপুরে হঠাৎ ক্লান্ত হয়ে পড়া, ঝিমিয়ে পড়া বা ‘এনার্জি ক্র্যাশ’ হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
বিপাক বৃদ্ধি: আদা, হলুদ, গোলমরিচ, দারচিনি, বা লবঙ্গের মতো মশলা প্রাতরাশে মিশিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরের বিপাকের হার বাড়বে। শরীরে যাওয়ার খাবার ভেঙে শক্তি এবং তাপ তৈরি হয় বিপাকের প্রক্রিয়ায়। সকাল থেকেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দিনভর শরীর উষ্ণ ও সক্রিয় থাকবে।
জল খাওয়া: শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সাধারণত জল কম খাওয়া হয়। সে জন্য এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শরীরে ডিহাইড্রেশন বা জলাভাব হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এর থেকেও ক্লান্তি আসতে পারে শরীরে। ঠান্ডার মরসুমে তাই খেয়াল করে পর্যাপ্ত জল খাওয়া জরুরি। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম জল এবং সারা দিনে বেশ কয়েক বার আদা-লেবু চা, মসলা চা, গ্রিন টি বা স্যুপের মতো খাবার খাওয়া উচিত।