ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে আর আপনারও মনে হল, পাড়ার দোকান থেকে শিঙাড়া বা কচুরি অথবা খানকয়েক পেঁয়াজি-আলুর চপ এনে খাবেন। সঙ্গে থাকবে ঘন দুধের চা। তা হলেই সন্ধেটা জমে যাবে। রাতের বেলাও যদি একটু তেল-ঝাল মশলাদার রান্না হয়, তা হলে তো সোনায় সোহাগা! বৃষ্টির দিনে রাতে গরম গরম ফুলকো লুচি দিয়ে পাঁঠার মাংস মন্দ লাগবে না। গরম কম, কাজেই এমন খেলে শরীরের ক্ষতি তেমন হবে না বলেই ভেবে নিলেন। আর তার পরেই শুরু হল গন্ডগোল। বর্ষার সময়েই কিন্তু সবচেয়ে বেশি পেটের গোলমাল ভোগায়। কারণ, তাপমাত্রা কমলেও আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে না। ভ্যাপসা গরম থেকেই যায়, আর সেই সঙ্গে হাজারো ব্যাক্টেরিয়া-ভাইরাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। খাবার ও জল থেকে বিষক্রিয়া সবচেয়ে বেশি হয় এই সময়ে। আর তাতেই কলেরা, টাইফয়েড, ঘন ঘন ডায়েরিয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
বর্ষাকালেই কিন্তু সবচেয়ে ভেবেচিন্তে খাবার খাওয়া উচিত। এমনটাই জানাচ্ছেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর মতে, বদহজমের সমস্যা, জলবাহিত রোগ ইত্যাদি বৃদ্ধি পায় বর্ষার সময়েই। হয়তো দেখবেন, পছন্দের শাকপাতা থেকেই সংক্রমণ ঘটল। কারণ, শাকপাতা ভাল করে জীবাণুমুক্ত না করতে পারলে তাতে জন্মানো কিছু জীবাণু পেটের সংক্রমণের কারণ হয়ে উঠতে পারে। আবার কাঁচা আনাজের স্যালাড, দীর্ঘ সময় কেটে রাখা ফল ফ্রিজে থাকলেও তার থেকে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই বৃষ্টির দিনে কী কী খাবেন আর কোন কোন খাবার ছোঁবেনই না, তা জেনে রাখা জরুরি।
কী কী খেলে ভাল?
টাটকা ও গরম খাবার খাওয়া জরুরি। যা-ই খান না কেন, বাড়িতে রান্না করা খাবার খাওয়াই জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ, টাটকা খাবারই খেতে হবে। ফ্রিজে রাখা দু’দিনের বাসি খাবারও পেটের গোলমালের কারণ হতে পারে।
সব্জি সব সময়ে সেদ্ধ করে নিতে হবে। কাঁচা আনাজ নুনজলে ভিজিয়ে রাখতে হবে কিছু ক্ষণ। তার পর ভাল করে পরিষ্কার করে সেদ্ধ করতে হবে। কাঁচা আনাজ এই সময়ে না খাওয়াই ভাল।
আরও পড়ুন:
পেট ঠান্ডা করতে দই, ঘোল, বাড়ির তৈরি লেবু-চিনির শরবত খেতে পারেন। এই সময়ে ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই জল বেশি করে খান।
রোজের পাতে সব্জি দিয়ে স্যুপ বা চিকেন স্ট্যু রাখলে ভাল। নিরামিষ খেলে সব রকম সব্জি দিয়ে পাতলা ঝোল বানিয়ে খেতে পারেন। ছোট মাছ খাওয়া ভাল। মাছের নানা রকম রেসিপি বাড়িতে বানিয়ে খান।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল বেশি করে খেতে হবে, যেমন পেয়ারা, মুস্বাম্বি, লেবু জাতীয় ফল। নানা রঙের বেলপেপার পাতে রাখলে ভাল।
দানাশস্য, যেমন ওটস, ডালিয়া, কিনোয়া খেতে পারলে ভাল হয়। সকালের জলখাবারে ভাজাভুজি না খেয়ে রাগির খিচুরি বা রাগি দিয়ে তৈরি রুটি ও সব্জি খেলে পুষ্টি বেশি হবে।
কী কী খাবেন না?
রেস্তরাঁ বা বাইরের খাবার তেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বানানো হয় না। তাই শরীর খারাপ হওয়ার একটা বড় আশঙ্কা থেকেই যায়। তেলমশলা দেওয়া খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল।
রাস্তায় বিক্রি হওয়া কাঁচা স্যালাড, কাটা ফল খাবেন না। রাস্তা থেকে কেনা দই, লস্যি, ফলের রস বা যে কোনও রকম শরবত না খাওয়াই ভাল।
নটে, পুঁই বা পালং শাকে এই সময়ে নানা রকম পোকা হয়। তাই শাকপাতা কম খেলেই ভাল। যদি শাক খেতে হয়, তা হলে নুন-গরম জলে ধুয়ে নিতে হবে।
মাশরুম বর্ষার সময়ে দ্রুত পচে যায়। তাই মাশরুম এই সময়ে এড়িয়ে চলাই ভাল।
সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া বর্ষার সময়ে কম খাওয়াই ভাল। সামুদ্রিক খাবার খেতে হলে তা ভাল করে জীবাণুমুক্ত করে তবেই খেতে হবে।
খাবার তৈরির আগে হাত ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। রান্নাঘর সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ফ্রিজও পরিষ্কার করতে হবে। কাঁচা মাছ বা মাংস বেশি দিন ফ্রিজে ফেলে না রাখাই ভাল।