কোথাও বেড়াতে গিয়েছেন, অথচ নিজের তোয়ালে নিয়ে আসতে ভুলে গিয়েছেন। কিংবা দাড়ি কামানোর রেজ়ার ব্যাগে ভরার কথা মনে থাকেনি। তা হলে কী করবেন? অন্যের ব্যবহার করা তোওয়ালে বা রেজ়ার ব্যবহার করবেন কি?
এ দেশে বহু পরিবারে একই স্নানঘর ব্যবহার করেন একাধিক সদস্য, তাঁরা কি স্নানঘরের সব জিনিস অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন, নাকি নিজেরটি আলাদা রাখবেন? এ ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা ভাল।
আমেরিকার হ্যাবিট কোচ বা অভ্যাস প্রশিক্ষক কেটি ডে প্রায়ই তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে নানা ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নিয়ে অনুগামীদের সতর্ক করে থাকেন। সেখানেই তিনি আলোচনা করেছেন স্নানঘরের অভ্যাস নিয়েও। তিনি বলছেন, ‘‘স্নানঘরের পাঁচটি জিনিস ব্যক্তিগত রাখাই ভাল।’’ অর্থাৎ অন্য কারও ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তাতে স্বাস্থ্য ভাল থাকবে।
ছবি: শাটারস্টক।
কেন ব্যবহার করবেন না?
কেটি জানাচ্ছেন, স্নানঘরে মানুষ নিজেকে পরিষ্কার করেন। ফলে নানা ধরনের ময়লা, জীবাণু, ব্যাক্টেরিয়া থেকে যেতে পারে তাঁর ব্যবহার করা জিনিসপত্রে। বিশেষ করে কাপড়, প্লাস্টিক, সিন্থেটিক জাতীয় জিনিস বা ধাতব জিনিসে দীর্ঘ ক্ষণ জীবিত থাকতে পারে ব্যাক্টেরিয়া। তাই এই ধরনের জিনিস অন্যেরটি না নেওয়াই ভাল। কারণ, তাঁর মতে, ‘‘আপনি জানেন না কার শরীর বাহিত হয়ে কোন ব্যাক্টেরিয়া আপনার শরীরে এসে বাসা বাঁধবে।’’
কোন পাঁচটি জিনিস ব্যবহার করবেন না?
যাপনের অভ্যাস সংক্রান্ত প্রশিক্ষক পাঁচটি জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলছেন।
১। তোয়ালে
অন্যের ব্যবহার করা তোয়ালে ব্যবহার করতে বারণ করছেন কেটি। এ ব্যাপারে ব্রুকলিনের একটি ঘটনার উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। কেটি বলছেন, ‘‘ব্রুকলিন হাইস্কুলের ফুটবল টিমের অনেক জন সদস্য এক সঙ্গে একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন একবার। ভাইরাসটি বেশ ক্ষতিকর। নাম স্ট্যাফিলোককাস অরাস। এটি ত্বক এবং নরম পেশি তন্তুতে সংক্রমণ ঘটায়। যা কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রাণঘাতীও হতে পারে। পরে জানা গেল ফুটবল খেলার পরে ড্রেসিংরুমে এসে তাঁরা একই তোয়ালে সবাই ব্যবহার করেছিলেন। যার থেকে ওই সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। পরে জানা যায়, ওই ছাত্রদের কারও কারও পরিবারের সদস্যও ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।’’ অর্থাৎ তোয়ালে থেকে ভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ আছে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, নিজের তোয়ালে নিজের কাছেই রাখা।
২। লুফা
লুফা বা গায়ের মৃতকোষ দূর করার জন্য যে ছোবড়া ব্যবহার করা হয়, তাতে অনেক সময়েই অন্যের গায়ের মৃতকোষ, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি লেগে থাকে। আর যেহেতু তা দীর্ঘক্ষণ স্নানঘরে আর্দ্র অবস্থায় পড়ে থাকে, তাই তাতে জীবাণু আরও বেশি করে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। সেই লুফা আপনার ত্বকে লাগলে র্যাশ এবং জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। তাই প্রত্যেকের লুফা আলাদা আলাদা হওয়া উচিত এবং প্রত্যেক বার ব্যবহারের পর তা রোদে ভাল শুকিয়ে নেওয়া উচিত।
৩। রেজ়ার
ত্বকে থাকা জীবাণু থেকে যেতে পারে রেজ়ারেও। শুধু তা-ই নয় অনেক সময় দাড়ি কাটতে গিয়ে ত্বক কেটে ছড়েও যায়। ফলে ত্বকের উপরিভাগে থাকা মৃতকোষের পাশাপাশি অন্যান্য জীবাণুও সংক্রমিত হতে পারে রেজ়ারে। যেহেতু রেজ়ারে ইস্পাতের মসৃণ ব্লেড থাকে। তাই ভাল ভাবে পরিষ্কার না করলে সেই জীবাণু দীর্ঘ ক্ষণ থেকে যেতে পারে। যা দাড়ি কাটার সময় সংক্রমিত হতে পারে অন্যের ত্বকেও।
৪। সাবানের বার
ই কোলাই, সালমোনেলা, স্ট্যাফিলোককাস অরাসের মতো ব্যাক্টেরিয়া এবং নোরো ভাইরাস, রোটা ভাইরাসের মতো জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে সাবানের বার থেকে। তাই অন্যের ব্যবহৃত সাবানের বার ব্যবহার না করাই শ্রেয়। বদলে লিক্যুইড সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে, যা থেকে সংক্রমণ হওয়ার কোনও ভয় নেই।
৫। ব্রাশ
সচরাচর কেউ অন্যের ব্রাশ ব্যবহার করেন না। তবু সাবধান হওয়ার জন্য জেনে রাখা ভাল— বলছেন কেটি। কারণ তিনি বলছেন, অন্যের দাঁতমাজার ব্রাশ ব্যবহার করলে তার থেকে সেই সব ভাইরাসও শরীরে প্রবেশ করতে পারে যা সাধারণত রক্তের মাধ্যমে সংবাহিত হয়। যেমন হেপাটাইটিস সি।