মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। বিষয়টি কতখানি চিন্তার, তা বছর দুয়েক আগের একটি হিসাব দেখলে বোঝা যাবে। শুধু ২০২২ সালেই ২৩ লক্ষ মহিলা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই বছরই স্তন ক্যানসারের কারণে মারা গিয়েছেন ৬ লক্ষ ৭০ হাজার জন!
পরিস্থিতি এমনই যে, উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। তারা জানিয়েছে, যদি এই ধারা এ ভাবেই চলতে থাকে তবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার হার এবং তা থেকে হওয়া মৃত্যু আরও ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে স্তন ক্যানসার নিয়ে ক্ষীণ আশার আলো দেখাল একটি গবেষণাপত্র। যা প্রকাশিত হয়েছে ‘ইউরোপীয়ান জার্নাল অফ ক্যানসার’-এ। তাতে বলা হচ্ছে, অলিভ অয়েল যা আদতে জলপাইয়ের তেল, তা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ইউরোপীয়ান জার্নাল অফ ক্যানসারে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্র তাৎপর্যপূর্ণ।
কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন গবেষকেরা?
গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ১৩ বছর ধরে ১১ হাজার ৪৪২ জন মহিলার স্বাস্থ্যের উপর নজর রেখেছিলেন গবেষকেরা। তাঁদের খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাপন, এমনকি স্বাস্থ্যের নানা পরিবর্তনে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রেখে দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত মহিলা নিয়মিত অলিভ অয়েল খেয়েছেন, তাঁদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমেছে। আর যাঁরা খাননি, তাঁদের শরীরে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়েছে।
গবেষকেরা বিষয়টি আরও বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘হিসাব করে দেখেছি, প্রতি এক টেবিল চামচ অতিরিক্ত অলিভ অয়েল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি আরও কিছুটা কমেছে।’’
আরও পড়ুন:
কতটা কমছে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি?
তবে এই হিসাব সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে তাঁদের উপর যাঁদের ইস্ট্রোজেন বা প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর কম। অর্থাৎ যাঁদের হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা খুব বেশি নেই। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে ওই হরমোনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা সত্ত্বেও ইউরোপীয়ান জার্নাল অফ ক্যানসারে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্র তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সমস্ত মহিলা কম অলিভ অয়েল খেয়েছেন, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ছিল ০.৬৭ শতাংশ। আর যাঁরা অলিভ অয়েল বেশি খেয়েছেন, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি তার থেকে ৩৩ শতাংশ কমেছে।
গবেষণাটি করেছে ইটালিয়ান রিসার্চ হসপিটালাইজ়েশন অ্যান্ড হেল্থকেয়ার ইনস্টিটিউট-সহ আরও বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থা। তবে এর আগে গ্রিসের এথেন্স ইউনিভার্সিটিও অলিভ অয়েল এবং ক্যানসারের ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করেছে। সেই গবেষণার ফল বলছে, এই তেল নিয়মিত খেলে তা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করতে পারে। স্তন ক্যানসার আর অলিভ অয়েল সংক্রান্ত আরও একটি গবেষণার উল্লেখ প্রায়ই করা হয়ে থাকে চিকিৎসক মহলে। সেই গবেষণাটি করা হয়েছিল স্পেনে। তাতে ৬০-৮০ বছর বয়সি মহিলাদের শারীরিক পরিবর্তন এবং পুষ্টির বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছিল, যাঁরা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেয়েছেন, তাঁদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি ৬২-৬৮ শতাংশ কমেছে।
অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ডিএনএ-র ক্ষতি রোধ করতে পারে।
কেন অলিভ অয়েল উপকারী?
অলিভ অয়েলে রয়েছে জৈবসক্রিয় ফেনোলিক উপাদান। তবে তা বেশি পাওয়া যায় এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে। তাতে থাকে জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট পলিফেনল। বিভিন্ন গবেষণাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ওই পলিফেনল ক্যানসার যুক্ত কোষের ক্ষতি করতে পারে। অথচ স্বাভাবিক কোষগুলিকে সুস্থ রাখে।
অলিভ অয়েলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ডিএনএ-র ক্ষতি রোধ করতে পারে। পাশাপাশি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং প্রদাহও কমাতে পারে। যা ক্যানসারের নেপথ্য কারণগুলির একটি।
বিভিন্ন পশুপাখির উপরে করা বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে । অলিভ অয়েল টিউমার রোধ করতে পারে। ক্যানসার-যুক্ত কোষের শক্তিক্ষয়ও করতে পারে। সেই সব গবেষণায় এ-ও দেখা গিয়েছে যে, বেশি পরিমাণে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেলে আকারে ছোট এবং কম সংক্রামক টিউমার হয়েছে।
আরও পড়ুন:
খেয়াল রাখা জরুরি
তবে এটা মাথায় রাখা দরকার, ক্যানসার প্রতিরোধে শুধু অলিভ অয়েল কখনওই নিরাময়ের একমাত্র উপায় হতে পারে না। নিরাময়ে সাহায্য করতে পারে মাত্র। তাই জীবনযাপনের অন্যান্য স্বস্থ্যকর অভ্যাসও বজায় রাখতে হবে।