মন ভাল নেই? পছন্দের খাবার দেখলেই কি মেজাজে বদল আসে? চকোলেট দেওয়া পেস্ট্রি হোক বা চিপ্স কিংবা বিরিয়ানি! এই সব জিনিস লোভনীয় খাবারের তালিকায় পড়ে। এগুলি খেতে সুস্বাদু হলেও, স্বাস্থ্যকর একেবারেই নয়। সাময়িক ভাবে এই সব খাবার মন ভাল করলেও, আসলে এর খারাপ প্রভাবই পড়ে শরীরে।
তবে শরীর এবং মন একই সঙ্গে ভাল রাখতে অস্বাস্থ্যকর নয়, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় থাকা অনেক কিছুই যেমন শরীর ভাল রাখতে সাহায্য করে তেমন মনও ভাল রাখে। আসলে দু’টি বিষয় অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস অল্প মাত্রায় প্রয়োজন হলেও তা জরুরি। মন এবং মেজাজে এর প্রভাব যথেষ্ট। যেমন ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে মেজাজে তার প্রভাব পড়ে। অবসাদও হয় এ থেকে।’’
গুরুগ্রামের পুষ্টিবিদ সোহম সিংহরায় এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, ‘‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করলে, অল্পে ক্লান্ত হয়ে পড়ার প্রবণতা যেমন কমানো সম্ভব, তেমনই এতে মনের উপরেও প্রভাব পড়ে।’’ তাঁর পরামর্শ—
দিন শুরু করবেন কী ভাবে?
· প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজের যথাযথ সমন্বয়ই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।
· দিন শুরু করা উচিত কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার দিয়ে। এগুলি হজম হতে বেশি সময় নেয় সাধারণত ধীরে ধীরে পাচিত হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করে। কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সাধারণত গোটা শস্যে পাওয়া যায়। সেই তালিকায় মিলেট, ওট্স, ব্রাউন রাইসের মতো খাবার রাখা যেতে পারে।
· শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান প্রোটিন। খাদ্যে প্রোটিনের অভাব থাকলে দ্রুত ক্লান্তি আসতে পারে। দিনভর কাজে শক্তির অভাব যাতে না হয় সে কারণে ডাল জাতীয় খাবার, পনির, টোফু, কাবলি ছোলা, সয়াবিনের মতো খাবার পাতে রাখতে পারেন।
· সকাল শুরু করা যেতে পারে ভেজানো বাদাম দিয়ে। চিনেবাদাম, কাঠবাদাম, আখরোট থাকতে পারে তালিকায়। হার্টের স্বাস্থ্য থেকে ত্বক ভাল রাখতে দরকার স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। বিভিন্ন রকম বীজ যেমন তিসি, তিল, চিয়া, কুমড়োর বীজে মেলে সেই উপাদান। স্বল্প মাত্রায় খাবারে সেগুলিও রাখতে পারেন।
· পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের অভাব হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তাই ফলমূল, শাকসব্জি থাকতেই হবে পাতে। খাবার হজম করা এবং শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপের জন্য দরকার জল। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য জল খাওয়া ততটাই জরুরি।
মন ভাল রাখবে বীজ!
· অবসাদ, উদ্বেগের সমস্যা হলেও মনোরোগ চিকিৎসকেরা পুষ্টিকর খাবার খেতেই বলেন। মুসাম্বির রস থেকে ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে বলেন তালিকায়। ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে এমন খাবার পালং শাক, কুমড়োর বীজ, বাদাম— এগুলি স্নায়ুকে শিথিল রাখতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। বাদাম বা বীজ খেলে সঙ্গে সঙ্গে মন ফুরফুরে হয় না বটে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি সুফল মেলে।
· তিসি, চিয়া বীজ, আখরোটে মেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এতে থাকা ইপিএ এবং ডিএইচএ মেজাজ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। মস্তিষ্কের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধিতেও ডিএইচএ জরুরি।
· সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটার মেজাজের সঙ্গে সম্পর্কিত। কারও যদি মনঃসংযোগে সমস্যা হয়, অবসন্ন লাগে, কাজের ইচ্ছে চলে যায়, ধরে নেওয়া হয় মস্তিষ্কে ডোপামিনের মাত্রা কমে গিয়েছে। সেরোটোনিনের নেতিবাচক প্রভাব খুব বেশি। যেমন, হাল ছেড়ে দেওয়া, অপরাধবোধে ভোগা ইত্যাদি উপসর্গ বোঝায় সেরোটোনিনের মাত্রার হেরফের। বিন, সয়াবিন, কড়াইশুঁটি, দুধ, ডিম, কিছু কিছু মাছে মেলে ভিটামিন বি। স্নায়ুতন্ত্রের উপর এই ভিটামিনের গুরুতর প্রভাব থাকে। ঠিক সে কারণেই মনের খেয়াল রাখতে হলে খাদ্যতালিকায় এগুলি থাকা প্রয়োজন।
· অশান্ত মন শান্ত করতে হলে তুলসী, ক্যামোমাইলের চা কাজে আসতে পারে। কারণ, এগুলির মধ্যে স্নায়ুকে আরাম দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
পুষ্টিবিদ শম্পা বলছেন, ‘‘ভিটামিন এ, সি, সেলেমিয়াম, আয়রনের মতো ভিটামিন, খনিজের মাত্রার হেরফের হলেও মানসিক স্বাস্থ্যে তার প্রভাব পড়তে পারে। ’’