ডায়াবিটিস হলে মিষ্টি তো বটেই, ভাত–আলুও চলে যায় না-এর খাতায়। করোলা–লাউয়ের রস, মেথি ভেজানো জল, কাঁচা হলুদ-সহ রাজ্যের শাক–সব্জিই তখন পথ্য। মিষ্টি শরবত, নরম পানীয়ের জায়গা নেয় আমলকি–অ্যালো ভেরা জুস। মাছ–মাংস খাওয়ার ব্যাপারেও হাজারটা নিষেধাজ্ঞা। রেড মিটের প্রশ্ন নেই। একটা ডিম খেতে হলেও হাজার প্রশ্ন। তৈলাক্ত মাছে হাই ক্যালোরি, তাই সেও প্রায় ব্রাত্য। তা হলে খাবে কী?
ডায়াবিটিসের রোগীদের খিদে পেলেই বাটি ভর্তি মুড়ি-শসা বা শুকনো চিঁড়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখানেও অবশ্য প্রশ্ন আছে। কেউ বলেন ডায়াবেটিকদের মুড়ি খাওয়া ভাল, এতে রক্তে শর্করা বশে থাকবে। আবার কেউ ভলেন, মুড়িতে ইউরিয়া বেশি, কাজেই তা নৈব নৈব চ। এখন কথা হল, মুড়ি বা চিঁড়ে— কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর?
ডায়াবিটিসে কোনটি ভাল— মুড়ি না চিঁড়ে?
চিঁড়ের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) কম। জিআই ৩০ থেকে ৬০-এর মধ্যে। চিঁড়ে খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়বে না। কিন্তু মুড়িতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। অনেকেই জানেন না, মুড়িতে জিআই-এর মাত্রা প্রায় ৭০ থেকে ৮০। তাই মুড়ি বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে। সে দিক থেকে চিঁড়েই ভাল।
চিঁড়েতে ফাইবারের মাত্রা মুড়ির চেয়ে অনেক বেশি। তাই চিঁড়ে খেলে যেমন পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকবে, তেমনই রক্তে শর্করাও বাড়তে পারবে না। তা ছাড়া চিঁড়ের ফাইবার সহজপাচ্য। ওট্স, কর্নফ্লেক্স, ব্রাউন ব্রেডের মতো খাবার খেলে যাঁদের হজমে সমস্যা হয়, তাঁরা অনায়াসেই চিঁড়ে খেতে পারেন।
মুড়ি প্রক্রিয়াজাত। কিন্তু চিঁড়ে প্রক্রিয়াজাত নয়। তাই পুষ্টিগুণ অক্ষত থাকে। চিঁড়েতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন বি থাকে যা শরীরের জন্য ভাল। পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে চিঁড়ে।
ডায়াবিটিসে ভাত বা রুটি মেপেই খেতে বলা হয়। তবে শরীরে শক্তির জোগান দিতে কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। সে দিক থেকে চিঁড়ে বেশি ভাল। তবে চিঁড়ে খেলে তা নিয়ম মেনেই খেতে হবে। সব্জি দিয়ে পোহা বানিয়ে খাওয়া ভাল। এতে সব্জির ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টও শরীরে যাবে। বেশি করে ঘি, গুড় বা চিনির পরিমাণে লাগাম টানতে হবে।