ঋতুস্রাব চলাকালীন পেটে যন্ত্রণা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু যন্ত্রণা যদি অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তখনই তা চিন্তার। অনেক মেয়েরই মাসের চারটে দিন ভারী ঋতুস্রাব হয়, সঙ্গে তলপেট ও শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে যন্ত্রণা শুরু হয়। অনেক সময়ে এই যন্ত্রণা এতটাই অসহ্য হয়ে ওঠে, যে ব্য়থানাশক ওষুধ খেতেও বাধ্য হন অনেকে। এই ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ডিসমেনোরিয়া’।
প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে এক জন মহিলা এই সমস্যায় ভোগেন। তাঁদের কাছে মাসের ওই কয়েকটা দিন দুঃস্বপ্নের মতো। হটব্যাগ, প্যারাসিটামল বা অন্য কোনও ব্যাথানাশক ওষুধ খেয়ে ভীষণ কষ্টদায়ক সমস্যাকে জোর করে চেপে রাখার চেষ্টা চলে। যন্ত্রণাদায়ক ঋতুস্রাবের নানা কারণ থাকতে পারে। কী কী সেই কারণ?
১) হরমোনের ওঠানামা, জরায়ুর সঙ্কোচনের কারণে পেট, তলপেট, কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা হতে থাকে। শরীরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতেও ব্যথা শুরু হয়। হরমোনের গোলমাল এর একটি কারণ।
আরও পড়ুন:
২) দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। তখন ব্যথা শুরু হয়।
৩) ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন মাসিক ঋতুচক্রের সময়ে জরায়ুর আবরণে প্রদাহ তৈরি করে। তখন ফাইব্রয়েড হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ‘ইউটেরাইন ফাইব্রয়েড’ হলে ঋতুস্রাবের সময়ে অত্যধিক রক্তপাত হয়, যন্ত্রণাও বাড়ে।
৪) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) থাকলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যায়। এর কারণে হরমোনের তারতম্যও ঘটে, ফলে ঋতুকালীন সময়ে নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
৫) জরায়ুতে সিস্ট হলেও এমন সমস্যা হতে পারে। এখনকার মেয়েদের সবচেয়ে বড় শারীরিক সমস্যা ‘ওভারিয়ান সিস্ট’। এর ফলে অনিয়মিত বা অতিরিক্ত ঋতুস্রাব, অল্প বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। ঋতুস্রাব খুব বেদনাদায়কও হয় অনেকের।
ব্যথা কমানোর উপায় কী?
এই সময়ে শরীরে ভিটামিন ডি-র জোগান প্রয়োজন। যে কোনও ব্যথা-বেদনা এড়াতে এই ভিটামিন দারুণ উপকারী। ভিটামিন ডি হাড় ও পেশীর ব্যথার সঙ্গেও লড়তে পারে। ঋতুস্রাব চলাকালীন রোদ্দুরে গিয়ে কিছু ক্ষণ দাঁড়ান। উপকার পাবেন। বেশি করে শাকসব্জি ও ফলও খেতে হবে।
ব্যথা বেশি হলে আদা দিয়ে লাল চা বা গ্রিন টি খেলে উপকার হবে। ডার্ক চকোলেট খেলেও অনেক সময়ে ব্যথা কমে। হলুদ জরায়ুতে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও হলুদ হল ইস্ট্রোজেনের প্রাকৃতিক উৎস। শরীরে প্রদাহ নাশ করে।
হরমোনের ওঠানামার জন্যই এই সময়ে পেটে ব্যথা হয়। তাই হরমোন ঠিক করতে রোজ আধ ঘণ্টা করে অন্তত যোগাসন করুন। এতে পেশি শক্তিশালী হয় ও হরমোন জনিত সমস্যাও কমে যায়। ফলে ঋতুস্রাবের সময়েও অত কষ্ট হয় না।
ঋতুস্রাবের সময়ে ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে যন্ত্রণা কম হয়। তার জন্য পালংশাক, কলা, কাঠবাদাম, ডার্ক চকোলেট রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন। সেই সঙ্গেই বাদাম ও নানা রকম বীজ খেলে ওই সময়ে পুষ্টির ঘাটতি কম হবে। পর্যাপ্ত জল পান করতেই হবে। টাটকা ফলের রস বা সব্জির স্যুপ রোজ খেতে পারলে ভাল হয়।