আমের মরসুম একেবারে শেষ পর্বে। এখন শুরুর দিকের বহু উৎকৃষ্ট আমই আর পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এথনও বাজারে রয়েছে ল্যাংড়া, চৌসা, বোম্বাই, আম্রপালি ইত্যাদি। আম খেতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা আম আগামী এক বছর খেতে না পাওয়ার দুঃখে হাতের নাগালে যে আম পাচ্ছেন, তা-ই খাচ্ছেন। আর হয়তো একটু বেশিও খাচ্ছেন। কিন্তু বুঝে খাচ্ছেন কি?
এমনিতে আম ভাল। আমে ভরা অ্যান্টি- অক্সিড্যান্ট। আমে ভরপুর ভিটামিন এবং খনিজও। আম খেলে শরীর ভাল থাকার পাশাপাশি ত্বকও ভাল থাকে। কিন্তু আম যতই ‘ফলের রাজা’ হোক, তেমন তেমন পরিস্থিতিতে এই ফল বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী বলছেন, অতিরিক্ত আম খেলে তার প্রভাব পড়ে শরীরে। বেশি আম খাওয়ার তেমনই কিছু কু-প্রভাবের কথা জেনে রাখা ভাল।
বেশি আম খাওয়ার কী কী সমস্যা?
১। হজমের সমস্যা: আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা অন্ত্রের জন্য ভাল হলেও বেশি ফাইবার শরীরে গেলে তা থেকে হজমের সমস্যা, পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটি এবং তার ফলে ডায়েরিয়াও হতে পারে। এমনকি, বেশি আম খেলে পেটে ব্যথাও হতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ।
২। হাইপারক্যালেমিয়া : আমে রয়েছে পটাশিয়াম। রক্তে অতিরিক্ত বেশি পটাশিয়াম জমা হলে হাইপারক্যালেমিয়া হতে পারে। তবে খুবই বিরল পরিস্থিতিতে এই সমস্যা হতে পারে। রক্তে পটাশিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি লিটারে। ৩.৫-৫.০ এমএমওএল। এই মাত্রা ৫.৫ বা তার বেশি হলে হাইপার ক্যালেমিয়া হতে পারে। তবে হাইপার ক্যালেমিয়া হলে তা কিডনির ক্ষতি করতে পারে। পেশিদৌর্বল্য, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাও হতে পারে।
৩। ওজন বৃদ্ধি: আমে ক্যালোরি থাকে অত্যন্ত বেশি। তাই বেশি আম খেলে এবং তার সঙ্গে পল্লা দিয়ে শরীর চর্চা না করলে বা ক্যালোরি না ঝরালে ওজন বাড়তে পারে।
৪। ডায়াবিটিস: আমে রয়েছে সুক্রোজ, গ্লুকোজের মতো প্রাকৃতিক চিনি। তাই যাঁদের ডায়াবিটিসের সমস্যা রয়েছে তাঁদের আম মেপে খাওয়া উচিত। না হলে অতিরিক্ত চিনি শরীরে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন শ্রেয়া।
৫। অ্যালার্জি, ত্বকের সমস্যা : অনেকের ক্ষেত্রে আম অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এতে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি বা মুখে ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন শ্রেয়া। এ ছাড়াও বেশি আম খেলে ত্বকে সমস্যা হতে পারে। আমের খোসায় থাকা প্রদাহবিরোধী উপাদানের জন্য মুখে, বিশেষ করে ঠোঁটের চার পাশে দাগ, ফুস্কুড়ির মতো সমস্যা হতে পারে।
দিনে ক’টি আম খাওয়া নিরাপদ?
পুষ্টিবিদ শ্রেয়া বলছেন, ‘‘এক জন সুস্থ মানুষ দিনে ৩টি ছোট মাপের আম খেতে পারেন বা দু’টি বড় আম খাওয়া যায়।’’ তবে ডায়াবিটিসের রোগী বা প্রিবায়োটিকদের ক্ষেত্রে আম কতটা খাওয়া উচিত, তা তাঁদের চিকিৎসকের থেকে জেনে নেওয়া উচিত।