গরমে স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসাবে আমপানা খাওয়ার চল রয়েছে গোটা দেশেই। বঙ্গেও জনপ্রিয় এই শরবত। তবে এখানে আমপানাকে বলা হয় আমপোড়া শরবত। প্রবল গরমে ঠান্ডা আমপোড়া শরবতের গ্লাসে চুমুক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যে শীতল ভাব আসে, তা তো রয়েছেই। এ ছাড়াও এই শরবতের আরও বাড়তি উপকার আছে বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু সেই ধারণা কি ভুল? উমঙ্গ মালহোত্র নামের এক ক্লিনিক্যাল ডায়েটিসিয়ান জানাচ্ছেন, পুরোপুরি ভুল নয়। তবে যে ভাবে এই পানীয় সাধারণত খাওয়া হয়ে থাকে, তাতে উপকারের থেকে ক্ষতিই হয় বেশি।
কোন অভ্যাসে বিপদ?
সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়োয় বিষয়টি সবিস্তার ব্যাখ্যা করেছেন পুষ্টিবিদ। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা অনেকেই শরবতে মিষ্টি খেতে ভালবাসি। আমপানাতেও অনেকে মিষ্টি স্বাদ আনার জন্য চিনি বা গুড় ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে শরবত খাওয়ার মূল উদ্দেশ্যটিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’
গ্রীষ্মকালে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসম্য নষ্ট হয়ে যায়। যা থেকে দেখা দিতে পারে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা। আমপোড়া শরবত ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি শরীরে আর্দ্র ভাবও বজায় রাখে। সেই সঙ্গে শরীর সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণের জোগানও দেয় কাঁচা আমে থাকা ভিটামিন, খনিজ এবং বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। তবে আমপানায় চিনি দিলে ঠিক এর উল্টো কাজ হয় বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ।
কী ভাবে ক্ষতি হয়?
উমঙ্গ বলছেন, চিনি শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার প্রক্রিয়ার ক্ষতি করে। কারণ প্রক্রিয়াজাত চিনি ইনস্যুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে কিডনি শরীর থেকে সোডিয়াম বার করে দিতে শুরু করে। তাতে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রাও কমতে থাকে।
এ ছাড়া, চিনি শরীরে অসমোটিক এফেক্টেরও কারণ হতে পারে। এতে শরীর কোষ থেকে জল টেনে তা রক্তে মেশায়। যাতে রক্তে থাকা শর্করার মাত্রা কমে। ফলে কোষের আর্দ্রতা বজায় রাখার বদলে তাতে জলাভাব বা ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়। কোষের ক্ষতি হয়। তা থেকে ক্ষতি হয় পেশিরও।
প্রতিকার কী?
সাধারণত আমকে পুড়িয়ে বা সেদ্ধ করে তার ক্বাথের সঙ্গে জিরে গুঁড়ো, বিটনুন মিশিয়ে তৈরি করা হয় আমপোড়া শরবত। এতে চিনি বা গুড় বা ওই জাতীয় কোনও মিষ্টির ব্যবহার না করেই খেতে বলছেন পুষ্টিবিদ। মিষ্টির বদলি হিসাবে তুলসীপাতা, এলাচ বা সামান্য আদা ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন তিনি।