Advertisement
১০ মে ২০২৪

জগন্নাথদেবের রথের রশি একবার ছোঁয়ার জন্য কেন আকুল হন ভক্তরা

রথের রশিতে টান দিলেই হবে পূণ্যলাভ— এই বিশ্বাস চিরকালীন। দেশ জুড়ে শুরু হতে চলেছে রথযাত্রার উৎসব। আগামী ৪ জুলাই ২০১৯ রথযাত্রা। রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রথের রশি একটিবার স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন ভক্তরা।

পার্থপ্রতিম আচার্য
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

রথের রশিতে টান দিলেই হবে পূণ্যলাভ— এই বিশ্বাস চিরকালীন। দেশ জুড়ে শুরু হতে চলেছে রথযাত্রার উৎসব। আগামী ৪ জুলাই ২০১৯ রথযাত্রা। রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রথের রশি একটিবার স্পর্শ করার জন্য আকুল হয়ে পড়েন ভক্তরা। পুরী, মাহেশ থেকে কলকাতায় ইসকনের রথ— সর্বত্রই রথের রশি ছুঁয়ে দেখার জন্য মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথদেবের রথের রশি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না।

কথিত আছে, এক সময় পুরীর রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রশি ছুঁয়ে সেই রথের চাকার তলায় আত্মঘাতী হতেন ভক্তরা। কিন্তু কেন? মানুষের বিশ্বাস, শ্রীপুরুষোওমের চাকার নীচে প্রাণ বিসর্জন দিতে পারলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বর্গারোহণ করা যায়।

শ্রীচৈতন্যদেবের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সনাতন গোস্বামী অসুস্থতার কারণে একবার রথযাত্রার দিন জগন্নাথদেবের চলন্ত চাকার তলে প্রাণ বিসর্জন দিতে চেয়েছিলেন। তখন মহাপ্রভুই তাঁকে বলেন, “সনাতন!! এ রকম দেহত্যাগে যদি কৃষ্ণকে পাওয়া যেত, তা হলে এক মূহূর্তের মধ্যে আমিও আমার লক্ষ জন্ম তাঁর শ্রীচরণে সমর্পণ করতাম। কিন্তু দেহত্যাগে কৃষ্ণকে পাওয়া যায় না। এরকম দেহত্যাগ হচ্ছে তমোগুণ। তমোগুণে কৃষ্ণকে পাওয়া যাবে না। ভক্তি ছাড়া, ভজন ছাড়া তাঁকে পাওয়ার উপায় নেই।”

আরও পড়ুন: ১৪২৬ সনের রথযাত্রার নির্ঘণ্ট

ইন্দ্রনীলময় পুরাণের মতে, জগন্নাথের রথের রশি সামান্য স্পর্শ করলেও পুনর্জন্ম হয় না। শ্রীজগন্নাথের বামন অবতার রথে। সেই রথ দর্শন করার পর একটু টানতে পারলেই পুনর্জন্মের কষ্ট ভোগ করতে হয় না।

সূতসংহিতায় রয়েছে, ‘রথে তু বামনাং দৃষ্টা, পুনর্জন্ম ন বিদতে।’ অতএব ধার্মিক হিন্দু বিশ্বাস করেন যে, রথের রশি ছোঁয়ার থেকে বড় পূণ্য আর কিছুতে হয় না।

রথযাত্রার এই মহাযাত্রা নিয়ে কপিল সংহিতায় আছে, ‘গুণ্ডিচাখ্যং মহাযাত্রা যে পশ্যন্তি মুদনিতাঃ/সর্বপাপ বিনির্মুক্তা তে যান্তি ভুবন মম।’ অর্থাৎ জগন্নাথদেব বলছেন, গুণ্ডিচা মহাযাত্রায় যে ব্যক্তি আমাকে দর্শন করবে, সে কালক্রমে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার ভুবনে যাবে।

রথের রশি ছুঁয়ে রথ টানা শুধু নয়,বেশির ভাগ মানুষ রথের রশি যতটুকু পারেন ছিঁড়েও নেন। টুকরো টুকরো রথের রশির সুতো মাদুলি করে সন্তানদের হাতে ও গলায় পরিয়ে দেন। বড়রাও পরেন। তাঁদের বিশ্বাস, এই মাদুলি সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করবে। অসুখ হলেও তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠা যাবে। অনেকেই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন। ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে ওঠেন। এ রকম কারও মাথায় রশির টুকরো অংশ ছুঁইয়ে দিলে কিংবা তাঁর বালিশের নীচে রেখে ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন আসে না। স্কন্দপুরাণ, বামদেব সংহিতার প্রসঙ্গ টেনে বলা যায় যে, জগন্নাথদেবের রথের দড়ি ধরে টানতে পারলে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয়। রথ বা উল্টোরথে দেখা যায়, ছোট-ছেলেমেয়েরা খেলনা রথ টানলে, পথচলতি বয়স্ক লোকেরাও সেই রথের রশি একবার ছোঁন। আসলে মানুষের বিশ্বাসটাই বড় কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lord Jagannath rathyatra Rashi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE