Advertisement
০২ মে ২০২৪
Shravana Putrada Ekadashi

শ্রাবণ মাসের পুত্রদা বা পবিত্রারোপিণী একাদশীর মাহাত্ম্য এবং নির্ঘণ্ট ও সয়মসূচি

সবাই তখন বললেন, “হে মুনিবর। শাস্ত্রে আছে যে, পূণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয়। তাই আপনি এমন একটি পূণ্যব্রতের উপদেশ করুন, যাতে তার পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেন।”

পার্থপ্রতিম আচার্য
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৯ ১২:১২
Share: Save:

একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে প্রভু! শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কী, তা কৃপা করে আমাকে বলুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে মহারাজ! এখন আমি সেই পবিত্র ব্রতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, যা শোনামাত্রই বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়। মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবণ করুন। প্রাচীন কালে দ্বাপর যুগের শুরুতে মহিজীৎ নামে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তিনি মাহিষ্মতি নগরে রাজত্ব করতেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, তার মনে বিন্দুমাত্র সুখ-শান্তি ছিল না। কেননা তিনি ছিলেন অপুত্রক। নিজেকে অত্যন্ত দুর্ভগা মনে করে রাজা চিন্তাগ্রস্থ হলেন। ব্রাহ্মণদের সামনে গিয়ে বলতে লাগলেন, “হে প্রজাবৃন্দ! তোমরা শোন। আমি এই জন্মে তো কোনও পাপ করিনি, অন্যায় ভাবে আমার রাজকোষ বৃদ্ধি করিনি, ব্রাহ্মণ বা দেবতাদের সম্পদ কখনও গ্রহণ করিনি, উপরন্তু প্রজাদেরকে পুত্রের মতো পালন করেছি। ধর্ম অনুযায়ী পৃথিবী শাসন করেছি। দুষ্টদের যথানুরূপ দণ্ড দিয়েছি, সজ্জন ব্যক্তিদের যথাযোগ্য সম্মান করতেও কখনও অবহেলা করিনি। তাই হে ব্রাহ্মণগণ, এই প্রকার ধর্মপথ অবলম্বন করা সত্ত্বেও কেন আমার পুত্র লাভ হল না, তা আপনারা কৃপা করে অনুসন্ধান করুন।”

রাজার এই প্রকার কাতর উক্তি শুনে ব্যথিত রাজভক্ত পুরোহিত ব্রাহ্মণগণ রাজার মঙ্গলের জন্য গভীর বনে ত্রিকালজ্ঞ ঋষির কাছে যেতে মনস্থ করলেন। বনের মধ্যে ঋষিদের আশ্রম দেখতে দেখতে তাঁরা এক মুনির সন্ধান পেলেন। তিনি দীর্ঘায়ু, নীরোগ, নিরাহারে ঘোর তপস্যায় মগ্ন ছিলেন। সর্বশাস্ত্র বিশারদ ধর্মতত্ত্বজ্ঞ ও ত্রিকালজ্ঞ সেই মহামুনি লোমশ নামে পরিচিত। ব্রহ্মার এক কল্প অতিবাহিত হলে মুনিবরের গায়ের একটি লোম পরিত্যক্ত হত। এই কারণে এই মহামুনির নাম লোমশ। তাঁকে দেখে সকলেই ধন্য হলেন। তাঁরা পরস্পর বলতে লাগলেন যে, আমাদের বহু জন্মের সৌভাগ্যের ফলে আজ আমরা এই মুনিবরের সাক্ষাৎ লাভ করলাম। তারপর ঋষিবর তাঁদের সম্বোধন করে বললেন, “কী কারণে আপনারা এখানে এসেছেন এবং কেনই বা আমার এত প্রশংসা করছেন, তা স্পষ্ট করে বলুন। আপনাদের যাতে মঙ্গল হয়, আমি নিশ্চয়ই তার চেষ্টা করব।” ব্রাহ্মণেরা বললেন, “হে ঋষিবর। আমরা যে জন্য এখানে এসেছি, আপনি তা কৃপা করে শুনুন। এ পৃথিবীতে আপনার মতো ব্যক্তি আর কোথাও নেই। মহিজীৎ নামে এক রাজা নিঃসন্তান হওয়ায় অতি দুঃখে দিনযাপন করছেন। আমরা তাঁর প্রজা। তিনি আমাদের পুত্রের মতো পালন করেন। কিন্তু তিনি পুত্রহীন বলে আমরাও সবাই মর্মাহত। তার দুঃখ দূর করতে আমরা এই বনে প্রবেশ করেছি। হে ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ! রাজা যাতে পুত্রের মুখ দর্শন করতে পারেন, কৃপা করে তার কোনও উপায় আমাদের বলুন।”

তাঁদের কথা শুনে মুনিবর ধ্যানমগ্ন হলেন। কিছু সময় পরে রাজার পূর্বজন্ম বৃত্তান্ত বলতে লাগলেন। এই রাজা পূর্বজন্মে এক দরিদ্র বৈশ্য ছিলেন। একবার তিনি একটি অন্যায় কার্য করে ফেলেন। ব্যবসা করবার জন্য তিনি এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত করতেন। এক সময় জৈষ্ঠ্য মাসে শুক্লপক্ষের দশমীর দিনে কোথাও যাওয়ার পথে তিনি অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন। গ্রাম প্রান্তে একটি জলাশয় দেখতে পান। সেখানে জলপানের জন্য যান। একটি গাভী ও তার বাছুর সেখানে জলপান করছিল। তাদের তাড়িয়ে দিয়ে তিনি নিজেই জলপান করতে লাগলেন। এই পাপকর্মের ফলে তিনি পুত্রসুখে বঞ্চিত হয়েছেন। কিন্তু পূর্ব জন্মের কোনও পুণ্যের ফলে তিনি এই রকম নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছেন।

আরও পড়ুন: ১৪২৬ সনের ঝুলনযাত্রার নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি

সবাই তখন বললেন, “হে মুনিবর। শাস্ত্রে আছে যে, পূণ্য দ্বারা পাপক্ষয় হয়। তাই আপনি এমন একটি পূণ্যব্রতের উপদেশ করুন, যাতে তার পাপ দূর হয় এবং আপনার অনুগ্রহে তিনি পুত্রসন্তান লাভ করতে পারেন।” লোমশ মুনি বললেন, “শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষের পবিত্রারোপণী একাদশী ব্রত অভিষ্ট ফল প্রদান করে। আপনারা যথাবিধি তা সকলে পালন করুন।”

লোমশ মুনির উপদেশ শুনে আনন্দ চিত্তে গৃহে প্রত্যাবর্তন করে তাঁরা রাজাকে সে সকল কথা জানালেন। তারপর সকলে মিলে মুনির নির্দেশ অনুসারে ব্রত পালন করলেন। তাঁদের সকলের পূণ্যফল রাজাকে প্রদান করলেন। সেই পূণ্যের প্রভাবে রাজমহিষী গর্ভবতী হলেন। উপযুক্ত সময়ে বলিষ্ঠ, সর্বাঙ্গসুন্দর এক পুত্রসন্তানের জন্ম দান করলেন। ভবিষ্যোত্তর পুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। এই ব্রত মাহাত্ম্য যিনি পাঠ বা শ্রবণ করবেন তিনি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হবেন এবং পুত্রসুখ ভোগ করে অবশেষে দিব্যধাম প্রাপ্ত হবেন।

আরও পড়ুন: জ্যোতিষ সম্বন্ধে এমন কিছু তথ্য যা আপনাকে চমকে দেবে (তৃতীয় অংশ)

এখন জেনে নেওয়া যাক ১৪২৬ সনের এই পুত্রদা বা পবিত্রা একাদশীর নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে):

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:

একাদশী আরম্ভ:

বাংলা তারিখ: ২৪ শ্রাবণ ১৪২৬, শনিবার।

ইং তারিখ: ১০/০৮/২০১৯।

সময়: সকাল ১০টা ০৯ মিনিট থেকে।

একাদশী শেষ:

বাংলা তারিখ: ২৫ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৮/২০১৯।

সময়: সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত।

একাদশী উপবাস:

বাংলা তারিখ: ২৫ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৮/২০১৯।

সময়: সকাল ১০টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত।

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে:

একাদশী আরম্ভ:

বাংলা তারিখ: ২৪ শ্রাবণ ১৪২৬, শনিবার।

ইং তারিখ: ১০/০৮/২০১৯।

সময়: দুপুর সওয়া ১টা থেকে।

একাদশী শেষ:

বাংলা তারিখ: ২৫ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৮/২০১৯।

সময়: বেলা ১২টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।

একাদশী উপবাস:

বাংলা তারিখ: ২৫ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৮/২০১৯।

সময়: বেলা ১২টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shravana Putrada Ekadashi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE