বয়স হয়েছিল ১১৪ বছর! কিন্তু, দৌড়নোর পথে বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি কখনও। শেষমেশ পথদুর্ঘটনায় জীবনের দৌড় থামল পঞ্জাবের সেই কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বীর ফৌজা সিংহের। সোমবার জালন্ধরের কাছে বিয়াস পিন্ড গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় শোকস্তব্ধ বিশ্বের ক্রীড়ানুরাগী মহল।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নিজের গ্রাম বিয়াস পিন্ডেই ছিলেন ফৌজা। সোমবার দুপুর সাড়ে ৩টে নাগাদ রাস্তা পার হওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ি বৃদ্ধ দৌড়বীরকে ধাক্কা মারে। সঙ্গে সঙ্গে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন:
ফৌজার মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে পঞ্জাবে। পঞ্জাবের রাজ্যপাল গুলাব চাঁদ কাটারিয়া নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘কিংবদন্তি ম্যারাথন দৌড়বিদ এবং সহনশীলতার প্রতীক সর্দার ফৌজা সিংহের মৃত্যুতে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। ১১৪ বছর বয়সেও তিনি অতুলনীয় মনোবল নিয়ে আমার সঙ্গে ‘নেশামুক্ত রঙলা পঞ্জাব’ গড়ার পদযাত্রায় যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর উত্তরাধিকার মাদকমুক্ত পঞ্জাব গড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’’
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল পঞ্জাবের জলন্ধরে জন্মগ্রহণ করেন ফৌজা। ছোট থেকেই তাঁর পা ছিল সরু ও দুর্বল। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত ঠিক করে হাঁটতেও পারতেন না। তাই বন্ধুমহলে ব্যঙ্গ করে ‘ডান্ডা’ বলে ডাকা হত তাঁকে। ৮৯ বছর বয়সে একের পর এক স্বজনের মৃত্যু তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ওই বছরই দৌড়নো শুরু করেন ফৌজা। দৌড়োন একের পর এক ম্যারাথন। ২০০০ সালে ফৌজা লন্ডনে তাঁর প্রথম ম্যারাথন ৬ ঘণ্টা ৫৪ মিনিটে শেষ করেন। এর পর একে একে নিউ ইয়র্ক, মুম্বই, হংকং, গ্লাসগোর মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ম্যারাথনে অংশ নেন। ২০১১ সালে ১০০ বছর বয়সে টরন্টো ওয়াটারফ্রন্ট ম্যারাথন শেষ করে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। অর্জন করেন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ‘ম্যারাথন ফিনিশার’-এর খেতাব। এক দিনে আটটি বিশ্বরেকর্ডও গড়েন তিনি। ১০১ বছর বয়স পর্যন্তও ফৌজা বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক দৌড়ে অংশগ্রহণ করেছেন। আত্মজীবনী ‘পাগড়িওয়ালা টর্নেডো’-তে সে কথা বিস্তারিত লিখেছেন তিনি। তাই এ হেন কিংবদন্তির মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বিশ্বের ক্রীড়ানুরাগী মহল।