Advertisement
E-Paper

বাঘ হাজরিকা উপেক্ষিত লাচিত উদ্‌যাপনে, বিতর্ক

ইতিহাসবিদ, লেখিকা অঞ্জু শান্ডিল্য জানান, মোগলদের হাতে পরাজিত স্বর্গদেও জয়ধ্বজ সিংহ ঘিলাঝারিঘাটের সন্ধির শর্ত অনুসারে কন্যা রমণী গাভরুকে অওরঙ্গজ়েবের ছেলে আজমের সঙ্গে বিয়ে দিতে বাধ্য হন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:১৭
আহোম বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০ বছরের জন্মদিন।

আহোম বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০ বছরের জন্মদিন। ছবি সংগৃহীত।

আহোম বীর লাচিত বরফুকনের ৪০০ বছরের জন্মদিনে দিল্লিতে উৎসব পালিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নতুন করে ইতিহাস লেখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু লাচিতকে হিন্দু বীর প্রমাণের প্রয়াসের পাশাপাশি শরাইঘাট যুদ্ধের অপর সেনাপতি, ইসমাইল সিদ্দিকি ওরফে বাঘ হাজরিকার কথা একেবারে নস্যাৎ করার সমান্তরাল প্রচেষ্টা চলছে বলে সরব হয়েছেন অসমের বিশিষ্ট জন, ইতিহাসবিদেরা। নিজে দিল্লির মোগল দরবার থেকে এলেও বাঘ মোগলবিজয়ে আহোম সেনার অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন।

ইতিহাসবিদ, লেখিকা অঞ্জু শান্ডিল্য জানান, মোগলদের হাতে পরাজিত স্বর্গদেও জয়ধ্বজ সিংহ ঘিলাঝারিঘাটের সন্ধির শর্ত অনুসারে কন্যা রমণী গাভরুকে অওরঙ্গজ়েবের ছেলে আজমের সঙ্গে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। তাঁর নতুন নাম হয় রহমত বানু বেগম। এই রমণীই মোগল দরবারে কিশোর ইসমাইলের বীরত্ব দেখে তাকে অসমে পাঠান। অসমে এসে গরিয়াজানের কাছে গরিয়াগাঁওতে থাকত সে। ইসমাইল খালি হাতে বাঘ মারায় রাজা জয়ধ্বজের ছেলে চত্রধ্বজ সিংহ তাঁকে বাঘ উপাধি দেন ও হাজার সেনার নেতা তথা ‘হাজরিকা’ করে দেন। শরাইঘাটের যুদ্ধ প্রসঙ্গে কথিত আছে, ইটাখুলিতে মোতায়েন করা মোগল কামানের জন্য আহোম বাহিনী উত্তর-গুয়াহাটি দখল করতে পারছিল না। বাঘ জানতেন, মোগল গোলন্দাজেরা ফজ়রের নমাজ পড়ার সময় কামান ছেড়ে একজোট হয়ে নমাজ পড়বেই। তাই কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে গোপনে বাঘ ইটাখুলির দিকে বাঁধের তলায় অপেক্ষা করতে থাকেন। নমাজ শুরু হতেই উঁচু বাঁধে উঠে তাঁরা মোগল কামানের ভিতরে জল ঢেলে অকেজো করে আসেন। আহোমরা আচমকা হানা দিলে মোগলরা কামান থেকে গোলা ছুড়তে ব্যর্থ হয়। ফলে আহোম বাহিনী উত্তর পার দখল করে। আহোম বাহিনীতে লাইধন খাঁ, পেটুয়ার মতো অনেক মুসলিমই যুদ্ধ করেছিলেন। হিলৈধারী ভেকুলি বরুয়া ছিলেন লাচিতের প্রধান দেহরক্ষী।

কিন্তু হিন্দু জাগরণ মঞ্চের দাবি, বাঘ কাল্পনিক চরিত্র। বাঘের ঘটনা সত্যি হলে আহোম ইতিহাসে তাঁর কথা লেখা থাকত। লাচিতের বীরত্বকে খাটো করতেই বাঘ হাজরিকার চরিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু বাঘ হাজরিকার বীরত্বের কথা সূর্যকুমার ভুঁইঞা, এম এম হাজরিকা, তুলন গোঁহাইদের বইতে বিশদে লেখা আছে। লাচিতকে সাহায্য করা ও যুদ্ধে বীরত্ব দেখানো একাধিক মুসলিমের নাম উল্লেখ রয়েছে ভুবনচন্দ্র সন্দিকৈয়ের বইতেও। অসমিয়া মুসলিমদের বীরত্বে কথা আওরঙ্গজ়েবের সেনাপতি মীরজুমলার করণিক সিহাবুদ্দিন তালিশের লেখাতেও রয়েছে। অসমের ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা মোগলদের সাহায্য না করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন তালিশ। বাঘের ব্যবহার করা তরবারিও সংগ্রহশালায় আছে।

শিবসাগরের লাচিত উৎসবে অংশ নিয়ে তাই গবেষণা ও অধ্যয়ন কেন্দ্রের সঞ্চালক ও সাহিত্যিক যোগেন ফুকন বলেন, “লাচিত মুসলমান বা হিন্দুর বিরুদ্ধে নয়, আসলে লড়তে নেমেছিলেন দিল্লির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টার বিরুদ্ধে। ইতিহাস সর্বদাই রাজার ইচ্ছানুসারে লেখা হয়। আহোমদের লেখা ইতিহাসে বাঘ হাজরিকার উল্লেখ না থাকা মানেই তিনি ছিলেন না, তা ঠিক নয়।” যোরহাট কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত শর্মা বলেন, “লাচিতের প্রসঙ্গ এলে বাঘ হাজরিকার নাম আসবেই। লাচিতকে একাংশ নেতা সময়ে সময়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন।’’

Lachit Barphukan India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy