Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ছত্তীসগঢ়ে ফের হামলা, হত ৬

সুকমা, কাঁকেরের পরে দন্তেওয়াড়া। ছত্তীসগঢ়ে ফের আঘাত হানল মাওবাদীরা। দন্তেওয়াড়ার পাশাপাশি কাঁকেরেও আক্রান্ত হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। দু’টি হামলায় নিহত হয়েছেন ছয় জওয়ান। পর পর তিন দিন হামলায় রমন সিংহ সরকারের মাওবাদী দমন অভিযান ও রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাওবাদী দমন অভিযানে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত জওয়ানকে। সোমবার দন্তেওয়াড়ায়। ছবি: পিটিআই।

চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আহত জওয়ানকে। সোমবার দন্তেওয়াড়ায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

সুকমা, কাঁকেরের পরে দন্তেওয়াড়া। ছত্তীসগঢ়ে ফের আঘাত হানল মাওবাদীরা। দন্তেওয়াড়ার পাশাপাশি কাঁকেরেও আক্রান্ত হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। দু’টি হামলায় নিহত হয়েছেন ছয় জওয়ান। পর পর তিন দিন হামলায় রমন সিংহ সরকারের মাওবাদী দমন অভিযান ও রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মাওবাদী দমন অভিযানে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

শনিবার সুকমার পিড়মেল-পোলামপল্লি এলাকার জঙ্গলে মাওবাদী হামলায় নিহত হন রাজ্য পুলিশের সাত জন জওয়ান। গত কাল ফের আঘাত হানে মাওবাদীরা। কাঁকেরে আকরিক লোহা বহনকারী ১৮টি ট্রাক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পরে ফের দু’টি জেলায় হানা দিয়েছে তারা। গত কালই গভীর রাতে কাঁকেরের ছোটে বইঠিয়ায় বিএসএফ শিবিরের কাছে হামলা চালায় মাওবাদীরা। গুলির লড়াইয়ে আহত হন বিএসএফের হেড কনস্টেবল রমেশকুমার সোলাঙ্কি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

এর পরেই আজ সকালে দন্তেওয়াড়ায় ফের মাওবাদী হানার মুখে পড়ে বাহিনী। চোলনার-কিরণডুল এলাকায় একটি রাস্তা তৈরির কাজে নিযুক্ত কর্মীদের পাহারা দিতে যায় রাজ্য পুলিশের একটি মাইন-প্রতিরোধক গাড়ি। বিস্ফোরণে উড়ে যায় গাড়িটি। নিহত হন রাজ্য পুলিশের পাঁচ জন জওয়ান। আহতের সংখ্যা আট। নিহতেরা হলেন কনস্টেবল জয়প্রকাশ পাসোয়ান, আলাউদ্দিন, বংশীধর, শিব ক্যাশপ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কনস্টেবল লাল্লু প্রধান।

ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী সক্রিয়তা হঠাৎ বাড়ায় গত কালই নড়েচড়ে বসেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নতুন খনি নিলাম হওয়ার পরে সেগুলির কাজ শুরু হওয়া রুখতেই মাওবাদীরা হামলা চালাচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, বস্তার-দন্তেওয়াড়ার মতো অনুন্নত এলাকাগুলিতে কোনও উন্নয়ন চায় না মাওবাদীরা। সরকার পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলির উন্নয়ন ঘটিয়ে সেখানে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। যাতে উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয়দের কাছ থেকে মাওবাদীদের বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয়। মাওবাদীদের লক্ষ্য হচ্ছে তা আটকানো। তা না হলে তাদের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘মাওবাদীদের কাছে দুশ্চিন্তার বিষয় হল পাকা সড়ক। পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা এলাকায় মাওবাদীরা বেশি স্বচ্ছন্দ। নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে তা কার্যত অচেনা।’’ ওই কর্তার মতে, এক বার ওই এলাকাগুলিতে পাকা সড়ক তৈরি করতে পারলেই নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষে প্রত্যন্ত এলাকাগুলি যাওয়া সহজ হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে লড়াই একেবারে মাওবাদীদের ঘাঁটিতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। তাই সড়ক-সহ অন্য উন্নয়নমূলক কাজ রুখতে মরিয়া মাওবাদীরা। আজ চোলনার-কিরণডুল এলাকায় রাস্তা তৈরির সুরক্ষায় মোতায়েন বাহিনীর উপরে হামলা তারই উদাহরণ বলে মনে করছে কেন্দ্র।

গত কাল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে ছত্তীসগঢ় নিয়ে বৈঠক করেছিলেন রাজনাথ সিংহ। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফের পশ্চিমবঙ্গ-সহ মাওবাদী অধ্যুষিত সবক’টি রাজ্যকে এক দফা সতর্ক করে দিয়েছে দিল্লি।

তিন দিনে বার বার হামলার ফলে রমন সিংহ সরকারের ভূমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, এই হামলায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও প্রশিক্ষণের অভাব ফের বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে শনিবার সুকমার ঘটনায় রাজ্য পুলিশের ভূমিকায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ কেন্দ্র।

তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দিন রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সের পিছনে কোনও ‘ব্যাক আপ’ দল ছিল না। যা থাকা আবশ্যিক। তাছাড়া পদস্থ কর্তাদের বারণ সত্ত্বেও রাতের অন্ধকারে ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়েই মাওবাদীর আক্রমণের সামনে গিয়ে পড়তে হয় ওই বাহিনীকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জেনেছে, পুলিশের ওই দলটিকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে গিয়েছে প্রায় ২০০ মাওবাদীদের একটি দল। গভীর রাতে এসটিএফ বাহিনী যখন খেতে বসে তখন তিন জন মাওবাদী দলটির উপর প্রথম আক্রমণ শানায়। পাল্টা আক্রমণে ওই তিন জনকে ধাওয়া করতে গিয়ে পরিকল্পনা মাফিক লুকিয়ে থাকা মাওবাদীদের মূল দলটির সামনে গিয়ে পড়ে তারা। গোয়েন্দারা জানান, একে দলটির কাছে মাওবাদীদের সম্পর্কে কোনও তথ্য ছিল না। উপরন্তু জঙ্গলে লড়ার ক্ষেত্রে যে নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে হয় তা নিয়ে প্রশিক্ষণের অভাব ছিল ওই বাহিনীর।

সুকমার হামলার পরে দ্রুত কাছের সিআরপিএফ শিবিরে চলে যায় এসটিএফ বাহিনী। আহতদের দ্রুত হাসপাতালে সরানো গেলেও নিহতদের দেহ উদ্ধার করতে সময় লেগেছে। তা নিয়ে রমন সিংহ সরকারকে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্য ঠিক পদক্ষেপই করেছে বলে মনে করছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE