জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা ‘ফেসবুক’-এ বড়দিনে কেক খাওয়ার ছবি দিচ্ছেন। সংগঠনের সদস্যরা চালিয়ে যাচ্ছে অপহরণ, নাশকতা। কিন্তু পুলিশ, আধা সেনা, সেনার মিলিত বাহিনীও মেঘালয়ের গারো পাহাড়ে জিএনএলএ, এএনএলএ সংগঠনগুলিকে বাগে আনতে পারছে না।
ফের তার প্রমাণ মিলল। এ বার ৭ জন বাঙালি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করল গারো জঙ্গিরা। সকলেই অসমের বাসিন্দা। উত্তর গারো পাহাড়ের ঘটনা।
এসপি রমেশ সিংহ জানান, অসম সীমানা ঘেঁষা দখোংসি সাপ্তাহিক বাজারে কেনাবেচা সেরে শুক্রবার বিকেলে অসমের ১২ জন ব্যবসায়ী দু’টি গাড়িতে গোয়ালপাড়া ফিরছিলেন। ৪টে নাগাদ খারকুট্টার কাছে কালউই এলাকায় ৬-৭ জন সশস্ত্র জঙ্গি পিক-আপ ভ্যানগুলি থামায়। ভ্যান থেকে দু’জন চালক-সহ ১৪ জনকে রাস্তায় দাঁড় করায় জঙ্গিরা। পরে সাত জনকে আটকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, অপহৃতদের নাম টুষ্টু পাল, মনোরঞ্জন সরকার, পুতুল মুখোপাধ্যায়, পীযূষ বিশ্বাস, প্রদীপ দাস, বিজয় সরকার ও গণেশ বসু। সকলেই গোয়ালপাড়ার দারেংগ্রের বাসিন্দা।
দু’মাস আগে একই জেলার ওয়াগিয়াসি গ্রাম থেকে ১৩ জন অসমের ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছিল জঙ্গিরা। সে ক্ষেত্রেও পুলিশ বা সিআরপি ‘কোবরা’ বাহিনী কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, অপহৃতদের পরিবার টাকার বিনিময়ে তাঁদের গোপনে ছাড়িয়ে এনেছেন। প্রাণভয়ে এফআইআরও করা হয়নি। এ বারও একই ঘটনা ঘটতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত যৌথবাহিনী অপহৃতদের কোনও হদিসই পায়নি। জমা পড়েনি লিখিত অভিযোগ। উল্টে পুলিশ দাবি করছে, সকলে ঠিক মুক্তি পাবে। কোনও চিন্তা নেই।
অসমের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ— মেঘালয় পুলিশ কার্যত আম-জনতাকে কোনও নিরাপত্তাই দিতে পারে না। জঙ্গলের পথে গারো পাহাড় থেকে গোয়ালপাড়া ফেরার সময় জঙ্গিরা যে কোনও জায়গায় হানা দিতে পারে। এক বার অপহরণ হলে, জঙ্গলে জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিতে পুলিশ কোনও অভিযানই চালায় না।
গোয়ালপাড়ার এসপি নিতুল গগৈ বলেন, ‘‘মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছি। মনে করা হচ্ছে ‘আচিক ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ বা এএনএলএ জঙ্গিরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।’’ উত্তর গারো হিল জেলার এসপি সিংহ বলেন, ‘‘কোবরা বাহিনী, সোয়াট কম্যান্ডোরাও তল্লাশিতে নেমেছেন। কিন্তু এখনও অপহৃতদের বিষয়ে কোনও সূত্র পাইনি।’’
অসম-মেঘালয় সীমানার খারকুট্টা ও দাদেংগ্রের বাসিন্দারা অপহরণের বিষয়ে একটি শান্তি-বৈঠকও করেন। গারো ছাত্র সংগঠন, রাভা ছাত্র সংগঠন, কোচ-রাজবংশী ছাত্র সংগঠন ও বাজার কমিটির প্রতিনিধিরা বৈঠকে হাজির ছিলেন। ঠিক হয়েছে, স্থানীয় জনতাও নিজেদের মতো করে জঙ্গলে অপহৃতদের সন্ধান চালাবেন। খারকুট্টার বিধায়ক চেরাক মোমিন বলেন, ‘‘জঙ্গিদের এই কাজ কাপুরুষোচিত ও নিন্দনীয়। জঙ্গিদের হঠকারি কাজে আমরা বিপর্যস্ত। এমনটা চলতে থাকলে দু’দিকের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়বে। ব্যবসা মার খাবে।’’
অন্য দিকে পূর্ব গারো পাহাড়ের উইলিয়ামনগর বাজারে সম্প্রতি যে বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার অন্যতম প্রধান অভিযুক্তকে গুলি করে মেরেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জিএনএলএ সংগঠনের বোমা বিশেষজ্ঞ কারক উইলিয়ামনগরের কাছে ডোরাকগ্রের জঙ্গলে ঘাঁটি গেড়েছে জানতে পেরে পুলিশ সেখানে হানা দেয়। দু’পক্ষে সংঘর্ষে দু’জন জঙ্গি জখম হয়েও পালায়। কান্ডেম নামে এক জঙ্গি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পুলিশের দাবি, কান্ডেমই উইলিয়মানগর বাজারে আইইডি রেখেছিল। ওই ঘাঁটিতে মেলা বিস্ফোরক, জিলেটিন, তার দেখে পুলিশের সন্দেহ— জঙ্গিরা পুলিশবাহিনী বা আম-জনতার উপরে ফের আঘাত হানতে তৈরি হচ্ছে।
আজ এক বিবৃতিতে পুলিশের দাবি উড়িয়ে জিএনএলএ জানিয়েছে, উইলিয়ামনগরে মোটেই তারা বিস্ফোরণ ঘটায়নি। তা অন্য কোনও সংগঠন বা খোদ পুলিশেরই কাজ। মেঘালয় পুলিশের আইজি জি এইচ পি রাজু জানান, জিএনএলএ যে আলফার কাছ থেকে বোমা তৈরি শিখছে তার প্রমাণ পুলিশের হাতে আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy