Advertisement
১৯ মে ২০২৪

‘অনুকরণীয়’ ভোটে ৯৭%-ই বিজেপির

ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক প্রথম থেকেই।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৯ ০২:৫৫
Share: Save:

ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলকে বিজেপির সমস্ত রাজ্য নেতৃত্বের কাছে ‘অনুকরণীয়’ হিসেবে দেগে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৬৬৪৬টি আসনের মধ্যে ৬৪৪১টি আসনে বিজেপির এই জয়কে ‘উন্নয়নমূলক রাজনীতির ক্ষমতা’ আখ্যা দিয়েছেন তিনি। অন্য রাজ্যের কর্মীদের ত্রিপুরার কার্যকর্তাদের কাছে শেখার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরেই প্রশ্ন উঠেছে, ত্রিপুরার এই পঞ্চায়েত নির্বাচন কী ভাবে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কি তা জানেন? নাকি জেনেবুঝেই রাজ্যে রাজ্যে দলীয় কর্মীদের বিরোধী-শূন্য নির্বাচন করার নির্দেশ দিলেন তিনি!

ত্রিপুরার পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক প্রথম থেকেই। মনোনয়ন জমার পর্বে বিরোধী সিপিএম, কংগ্রেস, এমনকি শাসক বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি-ও লাগাতার অভিযোগ জানিয়েছে, তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হচ্ছে না। বিজেপির মধ্যেই আদিদের সঙ্গে নব্যদের বিরোধ বেধেছে মনোনয়ন নিয়ে। কিছু কিছু জায়গায় নব্যদের সঙ্গে বিরোধে আদিরা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে মারধর খেয়ে ফিরেছেন। তাঁদের বাড়িঘরে আগুন লাগানোর ঘটনাও ঘটেছে।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেছিলেন, বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে দেখবেন রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়ে আছে। ত্রিপুরার বিরোধীদেরও গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ ছিল, তাদের প্রার্থীদের রাস্তায়, ব্লক অফিসে, মহকুমাশাসকের অফিসে আটকে মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে, মারধর করে বিজেপি কর্মী তথা ‘উন্নয়ন’ ফেরত পাঠিয়েছে। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের ভয়ে বহু জায়গায় মানুষ ভোটে দাঁড়াতেই ভরসা পাননি। মনোনয়ন পর্ব শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের বহু আলোচিত গত পঞ্চায়েত ভোটের রেকর্ড ভেঙে তছনছ করে দিয়েছেন ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। ত্রিপুরায় বিজেপি জিতেছে ৮৫ শতাংশ আসন।

গত ২৭ জুলাই বাকি ১৫ শতাংশ আসনে ভোট নেওয়া হয়। সে দিনও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস। এমনকি ভোট গণনার সময়েও একই অভিযোগ ওঠে। একাধিক জায়গায় গণনা কেন্দ্রগুলি থেকে বিরোধী এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কিন্তু রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা পশ্চিমবঙ্গেও যা ছিল, ত্রিপুরাতেও তার ব্যতিক্রম নয়। বিজেপি মুখপাত্ররা বিরোধীদের অভিযোগ খারিজ করে দাবি করেন, ‘ত্রিপুরার মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে’। ভোটের ফলাফল বেরনোর পর দেখা যাচ্ছে, যে ৯৯৪টি আসনে ভোট হয়েছিল তার মধ্যে ৭৮৯টি আসন বিজেপির দখলে। শতাংশের হিসেবে ৭৯.৩৭। আর ভোট হওয়া আর না-হওয়া, মোট আসনের নিরিখে ৯৬.৯১ শতাংশ আসন একা বিজেপির!

প্রধান বিরোধী দল সিপিএম নেমেছে তিন নম্বরে। মোট ১৬৬টি আসন পেয়ে কংগ্রেস দু’নম্বরে। আর শাসক জোটের ছোট শরিক আইপিএফটি গ্রাম পঞ্চায়েতে মাত্র ৬টি আসন পেয়ে চতুর্থ।

এই জয়কে প্রধানমন্ত্রী ‘উন্নয়নমূলক রাজনীতির শক্তি’ আখ্যা দেওয়ার পরে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের অনুব্রত মণ্ডলের ‘উন্নয়ন’ রাজনীতিকে কী তিনি স্বীকৃতি দিচ্ছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE