E-Paper

রতন থিয়ামকে গান শুনিয়ে ‘ভাইরাল’ গুণচেনবি

প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী রতন থিয়ামের মৃত্যুর পরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী সূরজকুমার ওয়াংখেইরাকপাম ওজা (গুরু) রতনের সামনে বসা স্ত্রী ও দুই কন্যার ছবি এবং ছোট মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৪৯
রোগশয্যায় থাকা রতন থিয়ামের সঙ্গে গুণচেনবি (ডান দিকে)।

রোগশয্যায় থাকা রতন থিয়ামের সঙ্গে গুণচেনবি (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।

‘বেলা বয়ে যায়, ছোট্ট মোদের পানসি তরী, সঙ্গে কে কে যাবি আয়।’ শিথিল পেশিগুলো তাল দিয়ে উঠতে চায়। বিহ্বল চোখে গুরু রতন চেয়ে থাকেন উত্তর প্রজন্মের দিকে। পায়ের কাছে বসে নাতনিসমা গুণচেনবি গেয়ে চলে সদ্য শেখা বাংলা গান। বাঙালি না হয়েও উচ্চারণ, গায়কি, স্বরক্ষেপণে অনায়াল সাবলীলতা অচিরেই তাকে ভাইরাল করে তোলে।

প্রখ্যাত নাট্যশিল্পী রতন থিয়ামের মৃত্যুর পরে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী সূরজকুমার ওয়াংখেইরাকপাম ওজা (গুরু) রতনের সামনে বসা স্ত্রী ও দুই কন্যার ছবি এবং ছোট মেয়ের গান গাওয়ার ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। ছোট্ট মেয়ের সেই অসাধারণ গান, বিশেষ করে বাঙালির মন কেড়েছে। তার রবীন্দ্র ও দ্বিজেন্দ্রগীতি গাওয়া মুগ্ধ করেছে সকলকে। নেটিজ়েনরা বলেন, “এই হল প্রকৃত ভারত, এটাই বিবিধের মাঝে মহান মিলনের সুর।”

অবশ্য মণিপুরের সঙ্গে বঙ্গের যোগ সুপ্রাচীন। অষ্টাদশ শতকে রাজা ভাগ্যচন্দ্র গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের উপাসনা শুরু করেন। রাজবংশের সঙ্গে নবদ্বীপের যোগাযোগ গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত মণিপুরীদের লিপিতেও ব্যবহার হত বাংলা হরফ। মণিপুরী নৃত্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগ সুপরিচিত। রতনের জন্মও নবদ্বীপেই। মণিপুরী নৃত্যশিল্পী তরুণ কুমার ও বিলাসিনীদেবী ছেলেকে ছোটবেলায় ‘নিমাই’ নামেই ডাকতেন। বাংলার সাহিত্য, সংস্কৃতি, নাটক-গানের প্রতি তাঁর টান ছিল আমৃত্যু।

নাচ-গানের টানেই ২০০১ সালে ইম্ফল ছেড়ে কলকাতা পাড়ি দিয়েছিলেন সূরজ। ২০১২ সালে বিয়ের পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন মণিপুরী নৃত্যশিল্পী করুণা দেবী। দু’জনে মিলে লেক গার্ডেনসে গড়ে তোলেন মণিপুরী নৃত্য ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের স্কুল।

গুণচেনবির মা করুণা দেবী নিজে বিশ্বভারতীর ছাত্রী। তিনি জানান, ১২ ও ৯ বছরের দুই মেয়েই কলকাতার স্কুলে পড়ে। বাড়িতে চলে মণিপুরী নৃত্যগীতের চর্চা। পাশাপাশি, তিনি ঢাকুরিয়ায় বেঙ্গল মিউজ়িক কলেজ ও চিল্ড্রেনস লিটল থিয়েটারে ভর্তি করেন মেয়েদের। গুণচেনবি বেঙ্গল মিউজ়িক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।

রতনের হাতে গড়া ‘কোরাস রেপার্টারি’ থিয়েটারে ১৯৯৬ সাল থেকে সাত বছর কাটিয়েছেন করুণা। তিনি বলেন, ‘‘এনএসডিতে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই বাংলা সাহিত্য, নাটক রয়েছেন গুরুর মননে। গরমের ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে ইম্ফল এসে জানতে পারি গুরু খুবই অসুস্থ। বিয়ের পরে কখনও স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে গুরুর কাছে যাইনি। তাই ভাবলাম ঘুরে আসি। মেয়ে গান শেখে জেনে গান শুনতে চাইলেন। মণিপুরি গান তো অনেক শুনতে পান গুরুদেব, তাই মেয়েকে বলি বাংলা গান শোনাতে।”

‘ও রে গৃহবাসী’ শোনানোর পরে আরও গানের অনুরোধ এলে গুণচেনবি ধরে দ্বিজেন্দ্রগীতি— ‘বেলা বয়ে যায়’। গুণচেনবি নামের অর্থ হল গুণ ও ব্যক্তিত্বের আধার। করুণা বলছিলেন, “মেয়েকে সকলে ভাল বলছে, মা হয়ে শুনতে ভাল লাগবেই। কিন্তু গুরু রতনের শিষ্যা হয়ে আরও বেশি ভাল লাগছে, যখন মেয়ের গানের সূত্রে তার বন্ধুরা, এই নতুন প্রজন্মও জানতে চাইছে, কে ছিলেন গুরু রতন থিয়াম। এ শহরকে বড় ভালবাসতেন তিনি। আশাকরি, শহরের পরের প্রজন্মও তাঁকে মনে রাখবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Social Media Viral Video

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy