Advertisement
E-Paper

দিল্লিতে বঙ্গ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিবেশও পুজো ভাবনায় 

বারোয়ারি ভোগ, কলকাতার শিল্পীদের গান, স্থানীয় প্রতিভাদের নিয়ে বিচিত্রানুষ্ঠান—দিল্লির শারদীয় উৎসবের চিরকালীন অঙ্গ। কিন্তু প্রবাসের পুজোয় নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এ বারে যেন এক পালা বদলের পালা। বাংলা সংস্কৃতি ও পরিবেশ বাঁচানোর পাঠও উঠে এসেছে দিল্লির পুজোর শারদীয় রিংটোন হিসেবে। 

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৫
সিংহবাহিনী: দিল্লির পটপরগঞ্জের পূর্বাচল পূজা সমিতির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

সিংহবাহিনী: দিল্লির পটপরগঞ্জের পূর্বাচল পূজা সমিতির প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

বারোয়ারি ভোগ, কলকাতার শিল্পীদের গান, স্থানীয় প্রতিভাদের নিয়ে বিচিত্রানুষ্ঠান—দিল্লির শারদীয় উৎসবের চিরকালীন অঙ্গ। কিন্তু প্রবাসের পুজোয় নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এ বারে যেন এক পালা বদলের পালা। বাংলা সংস্কৃতি ও পরিবেশ বাঁচানোর পাঠও উঠে এসেছে দিল্লির পুজোর শারদীয় রিংটোন হিসেবে।

পূর্ব দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ মাতৃমন্দির নির্মাণ সোসাইটি পা দিল ২৯ বছরে। তাদের থিম সংবাদপত্র। গোটা মণ্ডপটি যেন সংবাদপত্রের বিবর্তনের ক্যানভাস। মুর্তির চালচিত্র তৈরি হয়েছে কাগজের প্রিন্টে। পরিবেশ সচেতনতার বিষয়টি মাথায় রেখে মূর্তি গড়ে উঠেছে কাগজের মণ্ড (পাল্প)দিয়ে। গেটও খবরের কাগজের রোলে তৈরি। এখানকার প্রদর্শনীটিও দেশ-বিদেশের খবরের কাগজের বিভিন্ন বৃত্তান্তে ভরপুর।

বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যোগ ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে— প্রবাসে এমন অভিযোগ প্রায়ই কানে আসে। এই বিষয়টির দিকে নজর দিয়েছে ময়ূর বিহারের মিলনী। তাদের ৫০ বছরের থিম হল গুপি গাইন বাঘা বাইন। মণ্ডপটি সত্যজিৎ রায়ের সেই কালজয়ী ছবির প্রিন্টে ছয়লাপ। এ পুজোর অন্যতম কর্তা মৃণাল বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ‘‘বাজেটের ৪০ শতাংশই খরচ করা হয়েছে মণ্ডপের পিছনে।’’ আর পটপরগঞ্জের পূর্বাচল পূজা সমিতির প্রাঙ্গনে পুজোর পাঁচ দিনই বসছে স্থানীয় বাঙালি ছেলে-মেয়েদের গান, কবিতা, গল্প, নাটক ও
নাচের আসর। পুজো কমিটির সভাপতি দুর্গাদাস দত্ত বলেন, ‘‘বাহ্যিক চাকচিক্য নয় আমরা জোর দিতে চাই মায়ের পুজো ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রসারে।’’

দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের পুজো রাজধানীর সব বাঙালির ‘মাস্ট গো।’ সেই চিত্তরঞ্জন পার্কের নবপল্লি পুজো সমিতির থিম হল বাউল। প্রতিমা সাবেকি। তাকে ঘিরে বাউল জীবনযাত্রার ছবি ফুটে উঠেছে গোটা মণ্ডপে। পুজো কমিটির সভাপতি উৎপল ঘোষ জানালেন, ‘‘বাংলার বাউল গান ও শিল্পীদের জীবনযাত্রাকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’’ অন্য দিকে এলাকার এস ব্লকের মিলনী বারবরই সাবেকি। এ বছরও সেই প্রথা মেনেই পুজো করছে তারা।

দক্ষিণ দিল্লিতে যখন বাউল, তখন শক্তির সাধনায় শান্তিকে খুঁজেছে নয়ডা ৩৪ সেক্টরের বঙ্গীয় সমিতি। দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে মণ্ডপটিকে। এক প্রান্তে বুদ্ধের জীবনকাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। অন্য দিকে রয়েছে মহিষাসুর বধ। উদ্যোক্তা তরুণ বাগচী বলেন, ‘‘সেই জন্য থিম হল শান্তি ও শক্তি। মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে হোগলা পাতা ও পাঠকাঠি দিয়ে।’’

দিল্লিতে পরিবেশ দূষণের বাড়বাড়ন্তের দিকে লক্ষ্য রেখে এ বার বহু পুজো মণ্ডপেই বয়কট করা হচ্ছে প্লাস্টিকের থালা, বাটি, গ্লাস। অনেক স্থানে ভোগ বিতরণ হচ্ছে সুপুরির খোল দিয়ে তৈরি পাত্রে। মণ্ডপের আশপাশে ঘেঁষতে মানা পলিথিনের সামগ্রী। বন্ধ সিন্থেটিক পেন্টও। পরিবেশ রক্ষার ভাবনা থেকেই নয়ডার সেক্টর ৬১-র বলাকা বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে হাওয়া মহলের অনুকরণে। দেখানো হয়েছে ডিজেল-পেট্রলকে এড়িয়ে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়ালে কতটা উপকার।

গ্রেটার নয়ডা (পশ্চিম) গৌড় বেঙ্গল কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোতেও প্রাধান্য পরিবেশেরই। উদ্যোক্তা শুভাশিস দেবরায় বললেন, ‘‘প্রতিমা এমন মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছে যাতে প্রকৃতির উপর ক্ষতিকারক প্রভাব না পড়ে।

পুরনো সংবাদপত্র দিয়ে কাগজের ব্যাগ তৈরি করে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। যাতে পরিবেশ রক্ষার বার্তাকে তুলে ধরা যায়।’’

Durga Puja Durga Puja 2018 Newspaper Environment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy