ফের আমেরিকার আতশকাচের তলায় শিল্পপতি গৌতম আদানির সংস্থা। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিল জার্নাল’-এর একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরান থেকেই তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ভারতে আমদানি করে থাকতে পারে আদানি গোষ্ঠী। বিষয়টির সত্যতা আমেরিকার বিচারবিভাগীয় দফতর খতিয়ে দেখছে বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করার পর ট্রাম্প ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। সেগুলির মধ্যে একটি হল ইরান থেকে তেল কিংবা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ। হোয়াইট হাউসের তরফে বলা হয়, কোনও দেশ ইরান থেকে এই পণ্যগুলি কিনলে, সংশ্লিষ্ট দেশ আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। প্রতিবেদনে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পারস্য উপসাগর দিয়ে এলপিজি নিয়ে জাহাজ আসছে গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দরে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের মুখপাত্র বলেন, “নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার অভিযোগ আমরা খারিজ করে দিচ্ছি। মার্কিন কর্তৃপক্ষের তদন্তের বিষয়ে আমরা অবহিত নই।” আদানির সংস্থার তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “ইরানের পতাকাবাহী বা সে দেশের মালিকানাধীন কোনও জাহাজকে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে না আদানি শিল্পগোষ্ঠী। আমাদের সব বন্দরের ক্ষেত্রেই আমরা এই নিয়ম মেনে চলি।” শিল্পগোষ্ঠীটির দাবি, তাদের সুনাম নষ্ট করতেই এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।
আদানি গোষ্ঠীর বক্তব্য, তারা তৃতীয় কোনও পক্ষের মাধ্যমে তেল কিনে থাকে। যে জাহাজ বা ভেসেলে তেল আমদানি করা হয়, সেগুলির কাগজপত্র যাচাই করা হয় সোহার কিংবা ওমান বন্দরে। তাই এ ক্ষেত্রে তাদের করণীয় কিছু নেই। তবে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয় না বলে জানিয়েছে আদানির সংস্থা।
এর আগেও এক বার আমেরিকার আতশকাচের তলায় এসেছিল আদানি গোষ্ঠীর কার্যকলাপ। অবশ্য সেটা সম্পূর্ণ অন্য অভিযোগে। গত ২১ নভেম্বর নিউ ইয়র্কের ইস্টার্ন ডিসট্রিক্ট কোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ‘প্রমাণ-সহ অভিযোগপত্র’ (ইনডিক্টমেন্ট) পেশ করেছিল সংস্থা এসইসি এবং ন্যায়বিচার দফতর। গৌতম, তাঁর ভাইপো সাগর, সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর বিনীত জৈন এবং তাঁদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, ঘুষ দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বাজারের চেয়ে বেশি দামে সৌরবিদ্যুৎ বিক্রির বরাত আদায় করেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ ওঠে যে, ঘুষের কথা গোপন করে আমেরিকার ব্যাঙ্ক এবং আমেরিকার লগ্নিকারীদের থেকে প্রকল্পের জন্য কোটি কোটি টাকা তোলে ‘আদানি গ্রিন এনার্জি লিমিটেড’ বা এজিএল। সম্প্রতি আমেরিকায় ঘুষের তদন্ত সংক্রান্ত মামলা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে সে দেশে তদন্তের আওতামুক্ত হয়েছে আদানি গোষ্ঠী।