আফগানিস্তানে বিনিয়োগের জন্য ভারতীয় সংস্থাগুলিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিল তালিবান সরকার। আফগানিস্তানে স্বর্ণখনি বা নতুন কোনও ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের জন্য কর ছাড় দেওয়া হবে ভারতীয় সংস্থাগুলিকে। ওই বিনিয়োগের জন্য কোনও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হলে, তাতে মাত্র এক শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে। সোমবার ভারতীয় সংস্থাগুলির উদ্দেশে এমনটাই বার্তা দিল আফগানিস্তান।
২০২১ সালে তালিবান গোষ্ঠী দ্বিতীয় বারের জন্য আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে। এর আগে প্রায় দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে আগে বিভিন্ন বিনিয়োগ করেছে নয়াদিল্লি। ওই দুই দশকে আফগানিস্তানে ভারত থেকে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ হয় সে দেশে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে তালিবান সরকারের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে। এ অবস্থায় ভারতীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আরও জোর দিচ্ছে আফগান সরকার। বর্তমানে ছ’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন তালিবান সরকারের শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রী আলহাজ় নুরউদ্দিন আজ়িজ়ি।
সোমবার দিল্লিতে বণিকসভার সঙ্গে এক আলোচনায় আজ়িজ়ি ভারতীয় সংস্থাগুলিকে আফগানিস্তানে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ করেন। তিনি বলেন, “আফগানিস্তানে (বিনিয়োগের) প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে আপনারা খুব বেশি প্রতিযোগীও পাবেন না। আপনারা শুল্কে সাহায্য পাবেন। আমরা আপনাদের জমিও দেব। নতুন কোনও ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী সংস্থাগুলিকে পাঁচ বছরের জন্য কর ছাড় দেওয়া হবে।” এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য কোনও যন্ত্রপাতি আমদানি করলে, তাতেও মাত্র এক শতাংশ শুল্ক নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিনিয়োগের আহ্বান জানানোর সময়ে আফগানিস্তানের স্বর্ণখনিতে লগ্নির কথাও পৃথক ভাবে উল্লেখ করেন তালিবান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “স্বর্ণখনিতে কাজের জন্য প্রযুক্তিগত এবং পেশাদার দল বা সংস্থার অবশ্যই প্রয়োজন হবে। তাই আমরা অনুরোধ করছি, আগে আপনারা আপনাদের বিশেষজ্ঞ দল পাঠান। তারা আমাদের দেশে গবেষণা করে দেখতে পারে। আগে তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখুক, তার পরে আপনারা কাজ শুরু করতে পারেন।” তবে আফগান মন্ত্রীর শর্ত, এই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াকরণ যেন আফগানিস্তানেই করা হয়। এর ফলে সে দেশে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কও আরও বৃদ্ধি করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। বর্তমানে নয়াদিল্লি এবং কাবুলের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়ে থাকে। কিন্তু এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে আগ্রহী কাবুল। সোমবার বণিকসভার ওই আলোচনাচক্রে নয়াদিল্লির আধিকারিকেরাও ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশে আফগান শিল্প এবং বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, “আমরা ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলতে চাই। ভিসা, বিমান করিডর, ব্যাঙ্কিংয়ের মতো কিছু ছোটখাটো বাধা রয়েছে, যা সামগ্রিক প্রক্রিয়ার উপর সত্যিই প্রভাব ফেলে। তাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এগুলির সমাধান করতে হবে।”
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বিকল্প বাণিজ্যপথ নিয়ে আলোচনা হয়েছে দুই দেশের। ভারত এবং আফগানিস্তানের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানকে এড়িয়েই আকাশ এবং জলপথে বাণিজ্যিক লেনদেন বাড়াতে চাইছে ভারত এবং আফগানিস্তান। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নয়াদিল্লি এবং অমৃতসর থেকে কাবুল পর্যন্ত পণ্যবাহী বিমান চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিষয়টিতে সিলমোহর দিয়েছেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব আনন্দ প্রকাশ। তিনি জানান, কাবুলের সঙ্গে দিল্লি ও অমৃতসরকে আকাশপথে জুড়তে পণ্যবাহী করিডরগুলি সক্রিয় করা হয়েছে এবং ওই রুটগুলিতে খুব দ্রুত পণ্যবাহী বিমান চালু হবে। অন্য দিকে, ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে জলপথে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে আগ্রহী আফগানিস্তান।