মজিদ খানের পথেই হাঁটলেন আরও এক জঙ্গি। হিংসার পথ ছেড়ে ঘরে ফিরলেন জম্মু-কাশ্মীরের ওই যুবক।
সম্প্রতি মায়ের আর্জিতে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন লস্কর ই তইবার সদস্য অনন্তনাগের বাসিন্দা বছর কুড়ির মজিদ। প্রতিশ্রুতিমান এই গোলকিপারকে নিজের স্কুলে রেখে গড়ে তোলার কথা বলেছেন ভাইচুং ভুটিয়া। এর মধ্যেই সোমবার পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও এক জঙ্গি সমাজের মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, মূলস্রোতে ফেরা ওই জঙ্গির নাম নাসের আহমেদ। তিনি কুলগাম জেলার চিমার গ্রামের বাসিন্দা। কুলগামের এসএসপি জানিয়েছেন, গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে নিখোঁজ ছিলেন ওই যুবক। স্থানীয় থানায় তাঁর নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগও জানানো হয়। এক মাসে আগে আহমেদ যোগ দেন হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি গোষ্ঠীতে। সম্প্রতি তিনি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের আইজি মুনির খান আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘আমরা একে গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ— কোনও ভাবেই দেখছি না। ওই যুবক পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেই ফিরে আসার ইচ্ছে জানান। যে কেউ সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারেন। ওই যুবক এখন আমাদের সঙ্গেই। পরিবারের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ হয়েছে।’’
সম্প্রতি জঙ্গিদের পুনর্বাসন নীতি চালু করেছে জম্মু-কাশ্মীর সরকার। তার পরেই দুই জঙ্গি অস্ত্র ত্যাগ করায় স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহিত পুলিশ-প্রশাসন। বস্তুত, মজিদের আত্মসমর্পণের পরেই মুনির খান আবেদন করেছিলেন, ‘‘মজিদের মায়ের পথে হাঁটুন উপত্যকার অন্য মায়েরাও।’’ সোপিয়ানের বাসিন্দা জঙ্গি আশিক হোসেন ভাট এবং পুলওয়ামার বাসিন্দা জঙ্গি মনজুর আহমেদ বাবার মা-বাবাও সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে ছেলেদের আর্জি জানিয়েছেন তাঁদের কাছে ফিরে আসার জন্য। গত সপ্তাহে নিখোঁজ হয়ে যান আশিক হোসেন ভাট। তিনি যোগ দেন লস্কর ই তইবায়। বন্দুক হাতে ভাটের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়। তার পরেই দুই জঙ্গির বাবা-মায়ের এই কাতর আর্জি। তবে সোপিয়ান এবং পুলওয়ামা জেলার এসপি-রা জানান, ভাট বা বাবা, কেউই পরিবারে ফেরেননি। সিআরপিএফের ইনস্পেক্টর জেনারেল জুলফিকার হাসান বলেছেন, ‘‘কোনও জঙ্গি মূলস্রোতে ফিরতে চাইলে তাঁদের সম্মানের সঙ্গেই ফেরানো হবে। আমরা তাঁদের সব রকম সাহায্য করব। পরিবার-পরিজনদের কাছে ফিরে আসা এই মানুষদের কোনও ভাবেই হেনস্থা করা হবে না। এবং প্রত্যাশার চেয়েও তাঁরা বেশি কিছু পাবেন।’’
মূলস্রোতে ফিরে আসা জঙ্গিদের সম্পর্কে নরম মনোভাব নিচ্ছে সরকার। কিন্তু যাঁরা ফিরছেন না, সেই তাঁদের বিষয়ে কড়া মনোভাবই বজায় রাখা হচ্ছে। রবিবার সেনা জানিয়েছে, চলতি বছরে ভূস্বর্গে অভিযান চালিয়ে ১৯০ জন জঙ্গিকে মারা হয়েছে। এই ১৯০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে এটিকে ‘বিরাট ক্ষতি এবং জাতীয় বিপর্যয়’ বলে বর্ণনা করেন হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। সোমবার বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সামরিক শক্তি দিয়ে কাশ্মীরকে দখল করে রাখা হয়েছে। মানুষ এই অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।’’ উপত্যকার নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে ভারত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ করেন গিলানি।
এই চাপান-উতোরেই সোমবার পুলওয়ামার ত্রালে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে এক জঙ্গি নিহত হয়েছেন। জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর পেয়ে তল্লাশিতে বেরোয় নিরাপত্তা বাহিনী। সেই সময় জঙ্গিদের সঙ্গে বাহিনীর গুলির লড়াই শুরু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy