Advertisement
E-Paper

‘ছোঁক ছোঁক করছিল লোকটা, বাড়ি ফিরে দেখি জিন্‌সে বীর্যের দাগ’

যৌন হেনস্থার কথা ফেসবুকে লিখেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তাঁর সেই পোস্ট পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ানক ভাবে ট্রোল করে উল্টে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল তাঁকেই।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ১৬:৫৯

যৌন হেনস্থার কথা ফেসবুকে লিখেছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। তাঁর সেই পোস্ট পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভয়ানক ভাবে ট্রোল করে উল্টে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হল তাঁকেই। আর গোটাটাই হল আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ঠিক পরের দিন!

অথচ নিজের বিচ্ছিরি অভিজ্ঞতাটুকু বাকি দুনিয়ার সঙ্গে শেয়ার করতে চেয়েছিলেন দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অব কমার্সের ইতিহাসের ওই ছাত্রী। নিজেদেরই কলেজ ফেস্টে কী ভাবে তাঁকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছিল ভিড়ের মধ্যে, সেটাই লিখেছিলেন। কিন্তু, সেই অভিজ্ঞতার কথা শুনে বেশ কিছু মানুষই তাঁর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন। প্রশ্নবাণে তিতিবিরক্ত করে দিয়েছেন ওই ছাত্রীকে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় যায় যে, শেষ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশের কাছে যেতে হয়। সেখানে তিনি যৌন হেনস্থার পাশাপাশি সাইবার হেনস্থার অভিযোগও দায়ের করেছেন। পুলিশও তাঁকে ট্রোল করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। এক জন খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া ছাত্রীর পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁকে যে ভাবে ট্রোল করা হল, তা দেখে অবাক সকলেই।

আরও পড়ুন: নগ্ন ধর্ষিতার আকুতি, মুখ ফেরাল রাজধানী, আঁতকে উঠছেন অনেকেই

শ্রীরাম কলেজ অব কমার্সে গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠান করতে এসেছিলেন গায়ক কে কে। বন্ধুদের সঙ্গে সেই কলেজ ফেস্টে কে কে-র গান শুনতে গিয়েছিলেন ওই ছাত্রী। ভিড়ের মধ্যে ঠিক তাঁর পিছনেই এক জন দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথম থেকেই ওই লোকটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর অস্বস্তি হচ্ছিল। বারে বারেই মনে হচ্ছিল, লোকটি তাঁকে কোনও ভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করছে। দু’বার তাঁকে হাতেনাতে ধরেও ফেলেন ওই ছাত্রী। কিন্তু, কনসার্টের ওই বিশাল ভিড়ে গোটাটাকেই অনিচ্ছাকৃত ভেবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

এর কিছু সময় পর পিছন থেকে অস্বস্তিকর একটা গন্ধ নাকে আসে। বন্ধুদের নিয়ে ওই ভিড়ের ভিতর যতটা সম্ভব সরেও যান। কিন্তু, তাতেও পিছু ছাড়েননি ওই লোকটি। শেষে চিত্কার করে তাঁকে সরে যেতে বলায়, তিনি চলে যান। তবে সন্দেহটা থেকেই গিয়েছিল। লোকটি পিছনে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝেই শরীর ছুঁতে চাওয়ার মধ্যে ভিড়ের মধ্যে কিছু করছিল না তো! অস্বস্তিকর গন্ধটা নাকে আসার পর থেকে খটকাটা সন্দেহে বদলে যায়।

এই সেই ফেসবুক পোস্ট। যা ঘিরে এত বিতর্ক। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।

কলেজ ফেস্টে প্রিয় গায়কের গান শুনে ফুরফুরে মনে বাড়িতে ফিরলেও সন্দেহটা রয়ে গিয়েছিল। আর, পোশাক বদলাতে গিয়েই নজরে এসেছিল ছিটছিটে দাগগুলো। গোটা জিন্‌সের পিছনের অংশ জুড়ে বীর্যের ছোপ লেগে রয়েছে। মুহূর্তেই বদলে যায় মেজাজ। সন্দেহটা তা হলে সত্যিই ছিল! পিছনে দাঁড়িয়ে ভিড়ের মধ্যে ‘হস্তমৈথুন’ করছিলেন ওই লোকটি!

আনন্দটা বদলে গেল হতাশায়। আর সেই হতাশার কথা ওই জিন্‌সের ছবি-সহ ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন দিল্লির শ্রীরাম কলেজ অব কমার্সের ইতিহাসের এক ছাত্রী। ভাবেননি, ওই পোস্টের জন্যই তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভয়ানক ভাবে ট্রোল হতে হবে! জিন্‌সের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ওই ছাত্রী লেখেন, ‘স্টেজে যিনি পারফর্ম করছেন কনসার্ট আসলে তাঁর প্রতি শ্রোতাদের ভালবাসা দেখানোর জায়গা। তবে, এর মধ্যেই কিছু মানুষ তাঁদের উত্তেজনা যখন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। ভিড়ের মধ্যে আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে... এবং বাতাসে মিলিয়ে যান। আমি বাড়ি ফিরেছিলাম খুব খুশি মনে। কে কে-র গানেই মত্ত ছিলাম। মর্দ হো গয়া আজ তো ইয়ে বান্দা, একদম মর্দ। থ্যাঙ্কস মর্দও, থ্যাঙ্কস।’

এই ছবি-লেখা ফেসবুকে পোস্ট করতেই ওই ছাত্রীর বন্ধুরা তা শেয়ার-লাইক করতে থাকেন। কিন্তু, কিছু সময় পর থেকেই তাঁকে ট্রোল করা হতে থাকে। প্রশ্নবাণে ঝাঁঝরা হতে থাকে তাঁর ফেসবুক ওয়াল। ওটা যে বীর্য সেটা তিনি কী করে বুঝলেন? অত ভিড়ের মধ্যে কী ভাবে এক জন ‘হস্তমৈথুন’ করতে পারে? স্বেচ্ছায় না কি অনিচ্ছাকৃত ভাবেই লোকটি তাঁর গায়ে ঠেকে গিয়েছিল? এবং সেটা তিনি কী করে বুঝলেন ওই ভিড়ে? আপত্তিকর এমন সব প্রশ্নে জেরবার হয়ে শেষে ওই ছাত্রী ফের এক বার তাঁর মত পোস্ট করেন ফেসবুকে। সেখানে তিনি জানান, বীর্যের দাগ এবং তার গন্ধ বোঝার বয়স তাঁর হয়েছে। কিন্তু, এর পরেও ট্রোল হতে থাকায় তাঁর এক শিক্ষকের সঙ্গে দিল্লির এক থানার সাইবার সেলে অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। পরে সে কথাও ফেসবুকে লেখেন তিনি। তিনি লেখেন, ‘যৌন এবং সাইবার হেনস্থার জন্য অভিযোগ দায়ের করেছি আমি। প্রতিটি হুমকি, হেনস্থা অপমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’

আরও পড়ুন: অরুণাভর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আরও দুই প্রাক্তন কর্মীর

অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষের মতে, এই ঘটনা কলকাতাতেও না হওয়ার কিছু নেই। হয়তো সে ভাবে সামনে আসে না। তবে, ট্রেনে-বাসে-মেট্রোর ভিড়ে অনেক মেয়েকেই এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘এমনও শুনেছি, মেয়েরা মাঠে খেলছে আর সেই মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে এক জন মধ্যবয়স্ক পুরুষ প্রকাশ্যে দেখিয়ে দেখিয়ে হস্তমৈথুন করছে। এ ক্ষেত্রে ওই ছাত্রীটির পাশেই দাঁড়ানো উচিত সকলের। এক জন কিশোরীর এমন ঘৃণ্য একটা অভিজ্ঞতা হল, তার পরেও তাঁকে কী ভাবে ট্রোল করে মানুষজন! নিম্ন রুচির পরিচয়।’’

মনোবিদ মোহিত রণদীপের মতে এটা ‘ইমপালস কন্ট্রোল প্রবলেম’ হতে পারে। আসলে প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারার সমস্যা। তাঁর কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে কেউ তাঁর পৌরুষ দেখাতেই এমনটা করছেন, তা না-ও হতে পারে। কারণ, প্রকাশ্যে এই ধরনের কাজ করা যে যায় না সেই সামাজিক বোধটাই হারিয়ে ফেলেছেন হয়তো। কাজেই এটা ‘ইমপালস কন্ট্রোল প্রবলেম’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’’ পাশাপাশি, যাঁরা ওই ছাত্রীটিকে ট্রোল করছেন তাঁরাও এক ধরনের অসুস্থ মানসিকতার শিকার বলেই মনে করেন মোহিতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এমনিতেই অন্যকে টিজ করে মজা পাওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। আবার কোনও মেয়ের সঙ্গে এমন যৌন হেনস্থার ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে একটা অংশের ছেলেরা যৌন আনন্দ পায়। দুটো মিলিয়েই ওই কিশোরীকে ট্রোল করা হয়ে থাকতে পারে।’’

Du Student Masturbate DU girl’s post outrage College Fest
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy