E-Paper

সামাজিক বিন্যাসের অঙ্কে কেরলে রদবদল কংগ্রেসের

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তার মধ্যেই দিল্লিতে দফায় দফায় আলোচনার পরে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসে রদবদল সেরে ফেলেছে এআইসিসি।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২৫ ০৬:০১
ঐক্যের ছবি: এআইসিসি এবং কেরল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।

ঐক্যের ছবি: এআইসিসি এবং কেরল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। —নিজস্ব চিত্র।

নজির গড়ে পরপর দু’বার রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছিল বাম সরকার। পিনারাই বিজয়নদের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে কেরলে সরকারে ফিরতে এ বার মরিয়া কংগ্রেস। সেই লক্ষ্য মাথায় রেখেই কেরলের প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব বদলে দিয়েছে এআইসিসি। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতিগোষ্ঠীকে জায়গা দিয়ে সামাজিক বিন্যাসের ছবি স্পষ্ট সেই রদবদলে। এই ছকে ভরসা করেই দক্ষিণী এই রাজ্যে প্রথমে পঞ্চায়েত ও কিছু পুরসভা-সহ স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন এবং তার পরে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের ময়দানে নামছে কংগ্রেস।

ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তার মধ্যেই দিল্লিতে দফায় দফায় আলোচনার পরে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসে রদবদল সেরে ফেলেছে এআইসিসি। কে সুধাকরনের জায়গায় নতুন প্রদেশ সভাপতি হয়েছেন সানি জোসেফ। বিধায়ক জোসেফ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। খ্রিস্টানদের মধ্যে বিজেপির বেড়ে চলা প্রভাব মোকাবিলা এবং গির্জার সঙ্গে কংগ্রেসের নতুন করে সেতুবন্ধনের অঙ্ক বিবেচনায় রেখে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট ইউডিএফের নতুন আহ্বায়ক করা হয়েছে সাংসদ আদুর প্রকাশকে। যিনি সিপিএমের বরাবরের শক্তিশালী ভোটব্যাঙ্ক ইজাভা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি। প্রদেশ কংগ্রেসের তিন কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুই বিধায়ক পি সি বিষ্ণুনাদ, এ পি অনিল কুমার এবং সাংসদ শফি পরম্বিলকে। এঁরাও তিনটি জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। সামাজিক বিন্যাস মেনে এই রদবদলের প্রক্রিয়ায় অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক ও কেরলের পর্যবেক্ষক দীপা দাশমুন্সি। সূত্রের খবর, বাংলার এই নেত্রীর দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রদেশ সভাপতি বদলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এআইসিসি।

প্রদেশ নেতৃত্বে সামাজিক বিন্যাসের ছবি দেখতে পাওয়ার পরেই কেরলের বিভিন্ন জেলা থেকে কংগ্রেস নেতারা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল এবং পর্যবেক্ষক দীপার কাছে চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন কমিটি তৈরির সময়েও দলিত, ধীবর, বিশ্বকর্মা, নাদার, মুসলিম, ল্যাটিন ক্যাথলিক-সহ জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। চিঠি দেওয়া হয়েছে নতুন প্রদেশ নেতৃত্বকেও। ঘটনাচক্রে, দিল্লিতে এআইসিসি-র বৈঠকে বাংলার ক্ষেত্রেও এই সামাজিক বিন্যাস দেখে নেতা বাছাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তীর মতো প্রদেশ নেতারা। বঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিও এখনও ঘোষণা হয়নি এবং এ রাজ্যেও কেরলের সঙ্গেই বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা।

কেরলের নতুন প্রদেশ সভাপতি জোসেফ বলেছেন, ‘‘সব দিক বিবেচনা করেই জেলা-সহ নতুন কমিটি গঠন হবে। কোনও নেতার গোষ্ঠীকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে না। বিদায়ী সভাপতি সুধাকরন এবং আমি, দু’জনেই কান্নুর জেলার ভূমিপুত্র। ওঁর সঙ্গে দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। সেখানেও কোনও সমস্যা হবে না। ঐক্যবদ্ধ ভাবেই আমরা ২০২৬-এ জয় আনব।’’

তবে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অন্য গুঞ্জন। প্রয়াত উম্মেন চান্ডি বা বর্তমান কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিতালা, কে মুরলীধরন, শশী তারুর (যদিও এই মুহূর্তে রাজ্যে দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়েছে) মুখ হিসেবে অনেক সুপরিচিত। জোসেফ তেমন নন। চর্চা চলছে, কেরলে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সরকার গড়তে পারলে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বেণুগোপালের মতো নেতার আরোহণের পথ তুলনায় সুগম থাকবে!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Congress AICC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy