দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান! ১৭ বছর পরে জয়ী হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)। বিরাট কোহলিদের দেখতে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। আর তাতেই বিপর্যয়! পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ গিয়েছে ১১ জনের। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের বয়স ৩০ বছরের কম। ১১ জনের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন কৈশোরে। সর্বকনিষ্ঠ ১৪ বছরের এক স্কুলছাত্রী। কেউ কেউ একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে মর্গের সামনে ভেঙে পড়েছেন। কেউ আবার দুষেছেন আরসিবিকে।
বেঙ্গালুরুর বৈদেহী হাসপাতালের মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে আর্তনাদ করছিলেন পবিত্রা গণেশ। তাঁকে সামলে রাখতে পারছিলেন না আত্মীয়েরা। বুধবারের ঘটনায় পবিত্রা ২২ বছরের পুত্রকে হারিয়েছেন। পুত্র প্রোজ্জ্বল জি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তেন। ‘‘আরসিবির জন্য পাগল ছিল। সেই আরসিবির জার্সি পরেই মরল’’, বিড়বিড় করে আত্মীয়দের বলে চলেন পবিত্রা। তিনি আরও বলেন, ‘‘আরসিবি জিতলে নাচানাচি করত। এখন ও নেই। আরসিবি কি ওকে ফেরাতে পারবে?’’
এই আরসিবির জয় উদ্যাপন করতেই তিন বন্ধুকে নিয়ে বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়েছিলেন ১৮ বছরের মনোজ কুমার। বন্ধুরা যেতে চাইছিলেন না। জোর করে তাঁদের নিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র মনোজ, জানালেন বন্ধু সাত্ত্বিক। মনোজের বাবা দেবরাজ কুমার যদিও একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে তাঁদেরই দুষছেন। বেঙ্গালুরুর বাওরিং হাসপাতালের মর্গের বাইরে দাঁড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন আর বলছিলেন, ‘‘ওরাই নিয়ে গেছে ছেলেটাকে।’’ দেবরাজ পেশায় ফুচকা বিক্রেতা। বার বার বলে চলেন, ‘‘ফুচকার দোকানে নিজে খেটেছি। ছেলেটাকে একটা প্লেটও কখনও ধুতে দিইনি। এত যত্নে মানুষ করলাম। ও চলে গেল!’’
আরও পড়ুন:
মা, কাকিমা, ছোট বোনের সঙ্গে বুধবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে গিয়েছিল ১৪ বছরের দিব্যাংশী। বেঙ্গালুরুর কান্নুরের বাসিন্দা সে। তার ঠাকুরমার আক্ষেপ, ‘‘বাকিরা ফিরে এল। শুধু নাতনিই ফিরল না।’’ দিব্যাংশীর কাকিমার অভিযোগ, ‘‘স্টেডিয়ামে কোনও পুলিশ ছিল না। কেউ সাহায্য করার জন্য ছিলই না। দিব্যাংশীকে গাড়িতে চুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। মুখ্যমন্ত্রী এলে এত পুলিশ থাকে। স্টেডিয়ামে কিছুই ছিল না।’’
বেঙ্গালুরুর বাওরিং হাসপাতালে যাঁদের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন দেবী (২০), দিব্যাংশী (১৪), অক্ষতা (২৬), শিবলিঙ্গু (১৭), শ্রাবণ কুমার (২৬), মনোজ কুমার (১৮)। বৈদেহী হাসপাতালে যাঁদের দেহ শনাক্ত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ভূমিক (১৮), সাহানা (২১), প্রোজ্জ্বল জি (২২), পূর্ণ চন্দ্র (২৫), মণিপাল হাসপাতালে চিন্নাইয়া (১৯)-কে শনাক্ত করা গিয়েছে।