সওয়ারি: গুজরাতে লার্সেন অ্যান্ড টুবরোর অস্ত্র কারখানায় শনিবার তোলা এই ছবি টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে বিরোধী নেতারা ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছিলেন সকালেই। বিষয়বস্তু: একজোট বিরোধীদের শক্তি দেখে কী বলতে পারেন নরেন্দ্র মোদী? ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হুবহু মিলে গেল সেই চিত্রনাট্য। দাদরা ও নগর হাভেলির সিলভাসা থেকে নরেন্দ্র মোদী বললেন, ‘‘ওই জোট বিজেপির বিরুদ্ধে নয়, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে। ওই লড়াই উন্নয়নের বিরুদ্ধে দুর্নীতির।’’
ঠিক এটাই বলেছিলেন ডিএমকে নেতা এম কে স্ট্যালিন, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু-রা। শুধু মোদী নন, আজ বিজেপির সারা দিনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা-ও কার্যত মিলিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ব্রিগেডে স্ট্যালিন বলেন, ‘‘যে মোদী আগে বিরোধী জোটের অস্তিত্ব স্বীকার করতেন না, তাঁরই মুখে এখন জোট নিয়ে ভয়।’’ চন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘বিরোধী জোটকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পাচ্ছেন মোদী-অমিত শাহ জুটি।’’
আর ব্রিগেডের সভা শুরু হতেই বেলা ১টায় সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন সদ্য বিজেপি মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজীবপ্রতাপ রুডি। তার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সিলভাসা থেকে মুখ খুলেছেন মোদী। সন্ধ্যায় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। রাতে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। তারও পরে, রাত ১০টায় টুইটারে ফের মোদী। লেখেন, ‘‘কলকাতায় যারা একজোট হয়েছে, তাদের বিজেপিকে সরানো ছাড়া কোনও কর্মসূচি নেই।’’ একটি সভা ঘিরে অস্বস্তি ঢাকতে এ ভাবেই দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয় প্রধানমন্ত্রী-সহ ছোট বড় বিজেপি নেতাদের।
মোদী আজ বলেছেন, ‘‘যারা আগে উঠতে-বসতে কংগ্রেসকে অভিশাপ দিত, তারাই এখন কংগ্রেসের সঙ্গে এক মঞ্চে। আসলে বর্তমান সরকারের স্বচ্ছতা, স্পষ্ট নীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে জনগণের টাকা লুট বন্ধ করা— এ সবের জন্য কারও কারও সমস্যা হচ্ছে।’’ নাম না-করে পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রা বাতিল নিয়েও সরব হয়েছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘যে পশ্চিমবঙ্গে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির উপরে বাধা-নিষেধ জারি করা হয়, সেই রাজ্যেই সব দল এক হয়ে গণতন্ত্র বাঁচানোর কথা বলছে!’’ পশ্চিমবঙ্গে নিচু তলার ভোটও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হয় না বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। রাজ্য বিজেপিকে চাঙ্গা করতে লোকসভা ভোটের মুখে আচমকা টেনে আনেন বিধানসভার প্রসঙ্গ। বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এক জন মাত্র বিজেপি বিধায়ক (সংখ্যাটা আসলে তিন)। সেই রাজ্যে বিজেপির হাত থেকে বাঁচার জন্য সব বিরোধী দল এক হয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ করছে। এক জন মাত্র বিজেপি বিধায়ক বেআইনি কারবারিদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছেন।’’ অন্যতম বিজেপি বিধায়ক তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আজ মমতাকে ‘শাড়ি পরা হিটলার’ বলে কটাক্ষ করে বলেছেন, ৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মোদীর জনসভায় মাঠ ভরিয়ে দেবেন তাঁরা।
মোদীর দাবি, অনেকে এখনও জোটের মঞ্চে এসে না-বসলেও ‘দরদাম’ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধী জোটের নেতা কে হবেন, সেই প্রশ্ন তুলে এত দিন বিবাদ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে বিজেপি। আজ কিন্তু ব্রিগেডের মঞ্চ বার্তা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কে হবেন সেটা বড় কথা নয়। আসল হল মোদী-অমিত শাহ জুটিকে হটানো।
আরও পড়ুন: রাহুল-কেজরীতে উচ্ছ্বসিত, বিদ্রোহেও অঙ্ক বিহারিবাবুর
ঘরোয়া মহলে বিজেপি নেতারাও মানছেন, লড়াই ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। ক’দিন আগে মোদী নিজেই কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তথাকথিত মোদী-ঝড়ের উপরে তাঁর নিজেরই আর ভরসা নেই। রাতে টুইটারে মোদী লিখেছেন, ‘‘ওদের দিন শুরু হয় মোদী দিয়ে, শেষও হয় মোদী দিয়ে। ভারত নিয়ে কোনও দিশা নেই।’’ বিরোধীদের কটাক্ষ, মরিয়া প্রধানমন্ত্রী নিজেই তো আজ ব্রিগেড নিয়ে পড়ে রইলেন সকাল থেকে রাত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy