পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় এখনও জিএসটি চালুর জন্য সংবিধান সংশোধনী বিলে সিলমোহর না পড়ায় মুশকিলে পড়েছেন অমিত মিত্র। তাঁকে জিএসটি পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান করা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন বিজেপি-শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা।
অমিতবাবু এত দিন রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। সকলে ভেবে রেখেছিলেন, জিএসটি পরিষদ গঠন হওয়ার পর তাঁকেই এর ভাইস-চেয়ারম্যান করা হবে। কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এখন প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় জিএসটির সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হয়নি। সেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কী ভাবে ভাইস-চেয়ারম্যান হতে পারেন! সরকারি সূত্রের খবর, ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিজেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন এ নিয়ে। মমতা সরকার কেন ওই বিল পাশের বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছে, তা বুঝতে চাইবেন।
গত সপ্তাহে বৃহস্পতি ও শুক্রবার জিএসটি পরিষদের বৈঠক বসেছিল। সেখানেই ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু বৈঠক শেষে পরিষদের চেয়ারম্যান জেটলি বলেন, ‘‘পরে কোনও বৈঠকে ওই পদে নির্বাচন হবে। নিয়োগ হতে পারে ঐকমত্য বা ভোটাভুটির মাধ্যমে।’’
জিএসটি পরিষদে অ-বিজেপি রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা প্রায় সকলেই অমিতবাবুকে এই পদে বসানোর পক্ষে। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরাও এত দিন তাঁর বিরোধী ছিলেন না। কারণ প্রথম থেকেই তৃণমূল জিএসটি-র সব থেকে জোরালো সমর্থক। অমিতবাবুও ‘এমপাওয়ার্ড কমিটি’র চেয়ারম্যান হিসেবে জিএসটি-র কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলেন। জেটলির সঙ্গে তাঁর বোঝাপড়াও ভাল। গত শুক্রবার পরিষদের বৈঠকের শেষেও জিএসটি-র কিছু খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে জেটলি অমিতবাবুর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন।
কিন্তু অগস্টে সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর এ পর্যন্ত ২০টি রাজ্য তাতে সিলমোহর বসিয়েছে। দিল্লি, বিহার, মিজোরাম, ওড়িশার মতো অ-বিজেপি রাজ্যের বিধানসভাতেও এটি অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু রাজ্যের নাম বদলের জন্য ডাকা বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে কার্যসূচিতেও জিএসটি- কে রেখেও পরে তা বাদ দিয়েছে মমতা সরকার। বিজেপির একাংশ নেতা মনে করছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি করতে চাইছেন। বিজেপিও তাই পাল্টা চাপ দিতে চাইছে।
দলীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অবশ্য অমিতবাবুর দাবি, পশ্চিমবঙ্গ মোটেই জিএসটি নিয়ে পিছু হটছে না। রাজ্যের নাম বদলের জন্য ডাকা বিশেষ অধিবেশনে জিএসটি বিল নিয়ে আলোচনার সময় হয়নি। কিন্তু তার পরেও তিনি জিএসটি নিয়ে এমপাওয়ার্ড কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন বলেও যুক্তি দিয়েছেন অমিতবাবু।
কবে রাজ্যের বিধানসভায় জিএসটি-র সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ হবে? এই প্রশ্নে অমিতবাবুর জবাব, ‘‘আগামী অধিবেশনেই আমরা বিলটি আনব। যদিও বাস্তবে এখন আর তার প্রক্রিয়াগত প্রয়োজন নেই। এটি আর বাধ্যতামূলকও নয়। কারণ রাষ্ট্রপতি ইতিমধ্যেই বিলে সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন।’’ পাশাপাশি অমিতবাবুর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কেন্দ্রের বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য চললেও তার সঙ্গে জিএসটি-র সম্পর্ক নেই। যেমন একশো দিনের কাজে রাজ্য ৬ হাজার কোটি টাকা পায়নি। রাজ্যে বন্দর তৈরি নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু সে সব আলোচনা দুই সরকারের মধ্যে অন্য পথে, নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy