মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে অপ্রকৃতিস্থ আচরণ করে ফেলছেন। দলের অনেকের মতে, মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। খোদ জেডিইউ নেতৃত্ব নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে থাকলেও আজ বিহার সফরে গিয়ে কিন্তু নীতীশকেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার ইঙ্গিত দিলেন অমিত শাহ।
এ বছরের শেষে বিহারে নির্বাচন। ওই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে আজ থেকে নির্বাচনী বিউগল বাজিয়ে দিলেন অমিত। গত কালই রাতে পটনা পৌঁছেছিলেন তিনি। গত রাতে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে আজ শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। জনসভার মাধ্যমে প্রচারের জন্য আজ তিনি বেছে নিয়েছিলেন বিহারের এনডিএ শিবিরের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী লালুপ্রসাদের গড় বলে পরিচিত গোপালগঞ্জকে। আজ ওই অনুষ্ঠানে বিজেপি ও জেডিইউ নেতৃত্ব ছাড়াও উপস্থিতি ছিলেন এনডিএ-র অন্যান্য দলের শীর্ষ নেতারা। আজ ওই মঞ্চ থেকে অমিত দাবি করেন, ‘‘আমি আশা করব এ বছরের শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে ফের ক্ষমতায় আসবে এনডিএ জোট।’’
এ কথা ঠিক, আজ অমিত শাহ সরাসরি নীতীশই মুখ্যমন্ত্রী হবেন এ কথা বলেননি। কেননা ছোট শরিক হয়েও নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করা নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বেই। কারণ কুড়ি বছর শাসনে থেকেও বিজেপির কোনও নেতা মুখ্যমন্ত্রী হননি বিহারে। তাই রাজ্য নেতৃত্ব চাইছেন, সেই খরা কাটিয়ে এ বার নিজস্ব কোনও প্রার্থীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হোক। কিন্তু আজ যে ভাবে নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমারের নেতৃত্বে জোট লড়বে বলে অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, তা থেকে স্পষ্ট, এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী পাল্টানোর পরিকল্পনা নেই বিজেপির।
আজকের সভা থেকে লালুপ্রসাদ তথা আরজেডি নেতৃত্বকে আক্রমণ শানান শাহ। তিনি বলেন, ‘‘বিহারে যখন লালুপ্রসাদ ও রাবড়ী দেবীর সরকার ছিল, তখন বিহারে জঙ্গলরাজে পরিণত হয়। ওই সময়ে বিহারে খুন ডাকাতি, জাতিগত নিধনের সাক্ষী থেকেছে দেশ।’’ পাশাপাশি ক্ষমতায় থেকে লালুপ্রসাদ কী ভাবে কেবল নিজের পরিবারের উন্নতিতে মাথা ঘামিয়েছেন, সেই অভিযোগেও সরব হন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘লালুপ্রসাদ নিজে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তাঁর স্ত্রী হয়েছেন। ছেলেরা মন্ত্রী হয়েছে। মেয়ে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। যাদব পরিবারের ধারাবাহিক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিহারের মানুষ ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছেন। উল্টো দিকে নীতীশের নেতৃত্বে গত কুড়ি বছরে উন্নয়নের চাকা ইতিবাচক দিকে ঘুরেছে। কেন্দ্রও বিহারের উন্নতিতে আন্তরিক ভাবে তৎপর রয়েছে।’’
তবে আজ সভামঞ্চ থেকে বিহারে ফের এনডিএ সরকার গড়ার যে স্বপ্ন ফেরি করেছেন অমিত, তা এ যাত্রায় অন্তত সফল হবে না বলে দাবি করেছেন আরজেডি মুখপাত্র শক্তি সিংহ যাদব। তাঁর কথায়, ‘‘অমিত শাহ জঙ্গলরাজের কথা বলছেন, অথচ তিনি নিজে তো গুজরাতের জঙ্গলরাজের অন্যতম (খল)নায়ক। গত কুড়ি বছরে রাজ্যের কোনও উন্নয়ন হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে নিত্যদিন। মানব উন্নয়ন সূচকের তালিকায় বিহার ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। অথচ গোটা দেশে পরিযায়ী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে সে শীর্ষ স্থানে। মানুষ পরিবর্তন চাইছেন। পরিবর্তন হবেই।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)