বিধানসভা কিংবা সংসদ আলোচনার জায়গা ঠিকই, কিন্তু বিরোধীদের ক্ষুদ্র রাজনৈতিক লাভের কারণে অধিবেশনের পর অধিবেশন তাকে অচল রাখা আদৌ কাম্য নয় বলে আজ দিল্লিতে স্পিকারদের সম্মেলনে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। একশো বছর আগে কেন্দ্রীয় আইনসভার স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন বিঠলভাই পটেল। সেই ঘটনার একশো বছর পূর্তিতে দেশের সব বিধানসভার স্পিকারদের নিয়ে দু’দিনের সম্মেলনের আয়োজন করেছে দিল্লি বিধানসভা। আজ প্রথম দিনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধিবেশন অচল রাখা নিয়ে ওই মন্তব্য করেন অমিত শাহ।
গত সপ্তাহেই শেষ হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। ভোটার তালিকায় সংশোধন-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা চেয়ে বিরোধীদের হট্টগোলের কারণে কার্যত ভেস্তে গিয়েছে গোটা অধিবেশন। রাজনীতিকদের মতে, আজ স্পিকার সম্মেলনে সেই বিষয়টি উল্লেখ করেই বিরোধীদের আক্রমণ শানিয়েছেন শাহ। তাঁর কথায়, ‘‘সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধ, কোনও বিল বা বিষয় নিয়ে বিতর্ক সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষণ। কিন্তু বিরোধীদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য যদি সংসদ বা বিধানসভা একের পর এক অধিবেশন অচল করে রাখা হয়, তা হলে তা গণতন্ত্রের জন্য ঠিক নয়। বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর যেমন চিন্তা করা উচিত, তেমনই যাঁরা জনপ্রতিনিধি, তাঁদেরও চিন্তা করা উচিত।’’ শাহের পরামর্শ, ‘‘জনগণের সমস্যাকে তুলে ধরার জন্য আমাদের একটি নিরপেক্ষ মঞ্চের প্রয়োজন হয়। সংসদ বা বিধানসভাগুলিতে সরকার ও বিরোধীদের জনগণের মঙ্গলের জন্য নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করা উচিত। জনপ্রতিনিধিদের নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংসদ বা বিধানসভার কাজ সংশ্লিষ্ট সদনের নিয়ম মেনেপরিচালিত হচ্ছে।’’
শাহের এই মন্তব্যের জবাবে কংগ্রেসের কটাক্ষ, গোটা বাদল অধিবেশনে বিরোধীরা ভোট চুরির মতো বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি তুলে সরব ছিলেন। যা জনগণের অধিকারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু কুকীর্তি ফাঁসের ভয়ে সরকার ওই বিতর্ক এড়িয়ে গিয়েছে। উল্টে আলোচনা ছাড়াই একের পর এক বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে। তাই এই সরকারের মুখে অন্তত গণতন্ত্রের কথা মানায় না।
মোদী সরকারের আমলে বিরোধীরা যখন বারবার তাঁদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ তুলে সরব, তখন আজ শাহ বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্ক ও বিরোধিতার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর মতে, বিতর্কের পরিসর না থাকলে সংসদ বা বিধানসভাগুলি প্রাণহীন কাঠামোয় পরিণত হয়। শাহের কথায়, ‘‘বিরোধিতার জায়গা থাকাতেই ভারতীয় গণতন্ত্র স্বাধীনতার ৭৮ বছর পরেও সজীব রয়েছে। তাই প্রতিবেশী দেশগুলিতে ক্ষমতা দখল নিয়ে রক্ত ঝরলেও এ দেশে রক্তপাতহীন ভাবেই সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর নয়।’’
আজ সংসদ ও বিধানসভার স্পিকারদের ‘প্রধান সেবক’ হিসাবে উল্লেখ করে শাহ বলেন, ‘‘কোনও বিধানসভা বা সংসদ চালানোর প্রশ্নে স্পিকারদের ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের নিরপেক্ষ থাকা সবথেকে প্রয়োজন। কারণ এই হস্তিনাপুরের সভা এক দিন নিরপেক্ষতার অভাবে তার মর্যাদা হারিয়েছিল। যার ফলে পরবর্তী সময়ে এ দেশ মহাভারতের মতো যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছিল।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)