Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Valentine's Day

দেশ জুড়ে সমালোচনা, পিছু হঠল কেন্দ্র, চাপের মুখে প্রত্যাহার করে নেওয়া হল গরুকে আলিঙ্গনের আবেদন

প্রেমের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি। সে দিন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নয়, গরুকে জড়িয়ে ধরার আবেদন জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের পশু কল্যাণ পরিষদ। প্রবল সমালোচনার মুখে তা প্রত্যাহার করা হল।

image of withdrawal of Cow Hug Day appeal by Animal Welfare Board of India

গো-আলিঙ্গনের কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা প্রত্যাহার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৯
Share: Save:

প্রেম দিবসে জড়িয়ে ধরতে হবে না গরুকে! ব্যাপক সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত গো-আলিঙ্গনের আবেদন প্রত্যাহারই করে নিল কেন্দ্র। শুক্রবার কেন্দ্রের ‘অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড অব ইন্ডিয়া’ (এডব্লুবিআই) জানিয়েছে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি গরুকে আলিঙ্গন করার যে আবেদন জানানো হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। কেন্দ্রীয় সংস্থার এই মর্মে জারি করা নির্দেশিকা ঘিরে দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনা হয়েছে। তার পরেই বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত।

‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ পশ্চিমি সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণ। তা নিয়ে মাতামাতি ভারতীয়দের মানায় না। এমন কথা হিন্দুত্ববাদীদের একাংশের মুখে নতুন নয়। বিজেপিরও অনেকে সেই পথেই হাঁটেন। প্রেম দিবসের দিন বিজেপি বা তাদের ঘনিষ্ঠ কোনও সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্কে, উদ্যানে লাঠি হাতে প্রেম রুখতে নেমে পড়েন যুবকেরা। যুগল দেখলেই হেনস্থা করার অভিযোগ ওঠে। সেখান থেকে আরও এক কদম এগিয়ে প্রেম দিবসের দিন গরুকে জড়িয়ে ধরার আবেদন জানিয়েছিল পশু কল্যাণ পরিষদ। এমনকি, পরিষদ যে মন্ত্রকের আওতায়, বৃহস্পতিবার সেই মন্ত্রকের মন্ত্রী পুরুষোত্তম রুপালা আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘‘বোর্ডের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ প্রেম দিবসের দিন গরুকে আলিঙ্গন করে ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ পালন করবেন।’’

যা নিয়ে তুমুল হাসিঠাট্টা শুরু হয়ে যায় সমাজমাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত ওই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নিল পরিষদ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, পরিষদের সচিব এসকে দত্ত নোটিস জারি করে বলেছেন, ‘‘ভারতের পশু কল্যাণ পরিষদ ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ হিসাবে পালন করার যে আবেদন জানানো হয়েছিল তা ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’

১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা প্রেম দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেই দিনটিতে ভালবাসা উদ্‌যাপন করেন অনেক যুগল। তাকেই এ বার ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ পালন করার আর্জি কেন্দ্রীয় সংস্থার। গত সোমবার জারি করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘‘আমরা সকলেই জানি যে, গরু ভারতীয় সংস্কৃতি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আমাদের জীবন বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি গবাদি পশু সম্পদ এবং জীববৈচিত্রের প্রতিনিধিত্বও করে। গরু আমাদের মায়ের মতো। গরু ‘কামধেনু’ এবং ‘গোমাতা’ নামেও পরিচিত। গরু মানবতাকে সমৃদ্ধ করে।” পশু কল্যাণ পরিষদের যুক্তি ছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমি সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে বৈদিক ঐতিহ্য প্রায় বিলুপ্তির পথে। আর সে কারণেই, গরুকে আলিঙ্গন করলে মানসিক সমৃদ্ধি আসবে। যা আমাদের ব্যক্তিগত সুখ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তাই ১৪ ফেব্রুয়ারি সকল গো-প্রেমী গরুকে জড়িয়ে ধরে ‘গো-আলিঙ্গন দিবস’ উদ্‌যাপন করতে পারেন বলে আর্জি ছিল কেন্দ্রের। প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে যে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হল।

এই প্রসঙ্গেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে পরিষদের যুক্তি। পশ্চিমি সংস্কৃতিকে অন্ধ ভাবে অনুকরণ না করার কথা বলে গরুকে আলিঙ্গন করার কর্মসূচির প্রবর্তন করার চেষ্টা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। দাবি করা হয়েছিল, এটা একে বারেই ভারতীয় সংস্কৃতি। কিন্তু পশ্চিমি সংস্কৃতিরই অন্যতম ধারক ও বাহক নেদারল্যান্ডসে রয়েছে গরুকে জড়িয়ে ধরার রীতি! সে দেশের ‘কো নাফেলেন’ (ডাচ ভাষায় গরুকে আলিঙ্গন করা) বলে রীতিতে গরুকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দেন গো-পালকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Valentine's Day Animal Welfare Board BJP cow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE