Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

খনির কাজ রুখতেই হানা, ধারণা কেন্দ্রের

ছত্তীসগঢ়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের আঘাত হানল মাওবাদীরা। আজ কাঁকের জেলায় ১৮টি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহ সরকারকে কোনও উন্নয়ন, বিশেষত নতুন খনির কাজ করতে দেবে না বলে সম্প্রতি হুমকি দিয়েছিল মাওবাদীরা। এ বার তারা সেই হুমকি কার্যকর করছে বলেই ধারণা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। কারণ, আজ খনি-সমৃদ্ধ কাঁকেরে যে ট্রাকগুলি পোড়ানো হয়েছে সেগুলি আকরিক লোহা নিয়ে যাচ্ছিল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪২
Share: Save:

ছত্তীসগঢ়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের আঘাত হানল মাওবাদীরা। আজ কাঁকের জেলায় ১৮টি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। ছত্তীসগঢ়ে রমন সিংহ সরকারকে কোনও উন্নয়ন, বিশেষত নতুন খনির কাজ করতে দেবে না বলে সম্প্রতি হুমকি দিয়েছিল মাওবাদীরা। এ বার তারা সেই হুমকি কার্যকর করছে বলেই ধারণা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। কারণ, আজ খনি-সমৃদ্ধ কাঁকেরে যে ট্রাকগুলি পোড়ানো হয়েছে সেগুলি আকরিক লোহা নিয়ে যাচ্ছিল।

গত কাল সুকমার পিড়মেল-পোলামপল্লি এলাকায় মাওবাদীদের হামলায় নিহত হন রাজ্য পুলিশের সাত জওয়ান। ১২ জন জওয়ান আহতও হন। আহতদের কালই কপ্টারে রায়পুর ও জগদলপুরের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু নিহতদের দেহ উদ্ধার করা যায়নি। আজ তা নিয়ে রমন সিংহ সরকারকে তোপ দেগেছে কংগ্রেস। তাদের মতে, ৭ জওয়ানের দেহ ২৪ ঘণ্টা ওই এলাকায় পড়ে থাকা জাতীয় লজ্জা। রমন সিংহ সরকার শহিদদের অপমান করছে।

কিন্তু নিরাপত্তাবাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে, খারাপ আবহাওয়া ও দুর্গম এলাকার জন্যই দেহ উদ্ধারে দেরি হয়েছে। দেহ উদ্ধারে সিআরপিএফের দল গেলে ফের গুলিবর্ষণ করে মাওবাদীরা। ওই জঙ্গল মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি। তাই সতর্ক হয়ে এগোতে হয়েছে নিরাপত্তাবাহিনীকে। কপ্টারে আহতদের আনা গেলেও পরে আবহাওয়া খারাপ হয়ে যায়। তাই দেহগুলি কাঁকেরলঙ্কা এলাকাতেই রেখে দিতে বাধ্য হয় বাহিনী। আজ নিহত জওয়ানদের দেহ জগদলপুরে নিয়ে আসা হয়েছে।

মাওবাদী হামলা নিয়ে আজ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন রমন সিংহ। পরে জগদলপুরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি জওয়ানদের দেখতে যান রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রামসেবক পাইকরা, শিক্ষামন্ত্রী কেদার কাশ্যপ ও পুলিশ-প্রশাসনের বড় কর্তারা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আহতদের অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে।

ছত্তীসগঢ়ের পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৈঠক হয়েছে দিল্লিতেও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন ইউরোপে। তাঁর অনুপস্থিতিতে সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মতো শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, মাওবাদীদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নতুন খনি নিলামের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, কিছু দিন আগে রমন সিংহ সরকারকে নতুন খনির কাজ করতে দেবে না বলে হুমকি দিয়েছিল মাওবাদীরা। ছত্তীসগঢ়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক খনির কাজ নতুন নিলামের পরে দ্রুত শুরু করতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্য। কাঁকের-সুকমার মতো এলাকায় তার বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে মাওবাদীরা। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ওই খনিতে কাজ করলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষতি হবে বলে প্রচার করছে তারা। স্থানীয় মানুষের স্বার্থেই তারা এই প্রকল্পগুলির বিরোধিতা করছে, এই প্রচার করে জনদরদি সাজার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ মাওবাদী নেতৃত্ব।

আজ রাজনাথের বাড়িতে শীর্ষ মন্ত্রীদের বৈঠকে স্থির হয়েছে, মাওবাদীদের মোকাবিলা করতে তিন দিক থেকে এগোবে সরকার। উন্নয়নের কাজ দ্রুত এগোতে রমন সিংহ সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মাওবাদীদের জনদরদি সাজার চেষ্টা রুখতে পাল্টা প্রচারে নামবে সরকার। গতকাল সুকমার হামলায় নিহত জওয়ানদের দু’জন কাঁকের ও দু’জন নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা। সরকার পাল্টা প্রচারে জানাবে, মাওবাদীরা স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশে থাকার কথা বলে তাঁদেরই খুন করছে। মাওবাদীদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযানের কথাও ভাবছে কেন্দ্র।

কিন্তু তাতে কিছু অসুবিধেও রয়েছে বলে ধারণা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একাংশের। কারণ, রমন সিংহ সরকারের মাওবাদী দমন অভিযান সম্প্রতি কিছুটা গতি হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। গত শীতের শেষে এক বার মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছিল ছত্তীসগঢ় সরকার। কিন্তু তাতে কতটা গতি ছিল তা নিয়ে সন্দিহান কেন্দ্র। কয়েক মাস ছত্তীসগঢ় পুলিশের কোনও উচ্চপদস্থ অফিসার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় অভিযানে যাননি বলেও জানতে পেরেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দীর্ঘদিন ধরে ওই রাজ্যে অভিযান চলার ফলে রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে কিছুটা দায়সারা মনোভাব এসেছে বলে মনে করছেন দিল্লির কর্তারা। এই পরিস্থিতিতে সুকমা বা বস্তারের মতো এলাকায় হঠাৎ বড় অভিযানে নামলে জওয়ানদের আরও বড় বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হবে কি না তা বিবেচনা করতে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, ওই সব এলাকার এখনকার পরিস্থিতি রায়পুরের কর্তারা জানেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দিল্লির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘যদি উপযুক্ত গোয়েন্দা-তথ্যের অভাবে অনেক জওয়ান প্রাণ হারান তবে মাওবাদীদের মনোবল বহু গুণ বেড়ে যাবে।’’

ছত্তীসগঢ়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আজ রায়পুরে গিয়েছেন সিআরপিএফের বিশেষ ডিজি কে দুর্গাপ্রসাদ। মাওবাদী অধ্যুষিত ১০টি রাজ্যে মোতায়েন বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE