আমেরিকা সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে দিন ভারতে ফিরবেন, তার পরের দিনই অর্থাৎ শনিবারই আমেরিকা থেকে বেআইনি ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে দ্বিতীয় বিমানটি ভারতের মাটি ছোঁবে। এ মাসের গোড়ায় আমেরিকা ১০৪ জন ভারতীয় অভিবাসীকে বেআইনি বলে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠায়। সেনাবিমানে শিকল দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ভারতীয়দের ফেরানোর ছবি দেখে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। মোদীর ‘বন্ধু’ ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয়দের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কী ভাবে করলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। মোদীর সফরের পরে সেই ছবিটা বদলায় কি না, শনিবার সে দিকেই নজর থাকবে দেশবাসীর।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, বেআইনি ভারতীয় অভিবাসীদের মোট তিন দফায় ফেরত পাঠাতে চলেছে আমেরিকা। প্রথম বিমানটি এসেছে ৫ ফেব্রুয়ারি। ১৫ তারিখ আসার কথা দ্বিতীয় বিমানের। আগের বারের মতো এ বারেও সেটি অমৃতসর বিমানবন্দরেই নামবে। পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী হরপাল চিমা অবশ্য এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীশাসিত রাজ্যকে বদনাম করতেই বারবার অমৃতসরে
বিমান নামানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘বিতাড়িত ভারতীয়দের নিয়ে আসা বিমান অমৃতসরে নামিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পঞ্জাবের বদনাম করতে চায়। এটা স্পষ্টই পঞ্জাবের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য বিজেপির একটি চেষ্টা। কেন হরিয়ানা বা গুজরাতে বিমান নামছে না? এ বারের বিমানটির আমদাবাদে অবতরণ করা উচিত।’’
ভারতের বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী অবশ্য জানিয়েছেন, আমেরিকার প্রশাসন ভারতকে বলেকয়েই সব কিছু করছে। আমেরিকায় নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এ পর্যন্ত মোট ৪৮৭ জন ভারতীয়কে বেআইনি অভিবাসী বলে চিহ্নিত করেছে এবং বিতাড়নের নির্দেশিকাও জারি হয়েছে। প্রথম বিমানে যে ভাবে হাত-পায়ে শিকল বেঁধে ১০৪ জনকে পাঠানো হয়েছিল, সেটা যে ‘যথার্থই উদ্বেগের’ বিষয়, মিস্রী তা অস্বীকার করেননি। একই ভাবে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিজে রাজ্যসভায় পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছিলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৫৬৬৮ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য ছিল, আমেরিকা থেকে বেআইনি অভিবাসনের দায়ে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো কোনও নতুন ঘটনা নয়।
কিন্তু অননুমোদিত অভিবাসী প্রত্যর্পণ নতুন না হলেও প্রত্যর্পিতদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, সেটাতে আপত্তির কিছুই নেই, এ কথাও সরাসরি বলতে পারছে না ভারত সরকার। বিমানের মধ্যেও যে ভাবে তাঁদের শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল এবং অবতরণের আগে পর্যন্ত তা খুলতে দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে পুরোপুরি চোখ বুজে থাকাটা মুশকিল সরকারের পক্ষে। যে কারণে জয়শঙ্করকে বলতে হয়েছে, সরকার অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রতি ন্যায্য আচরণ নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আর মিস্রী বলেছেন, ভারত সরকার বিষয়টি মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করবে।
এখন মোদী স্বয়ং বিষয়টি আমেরিকা প্রশাসনের কানে তুলবেন কি না এবং পরিস্থিতি বদলাবে কি না, সেটা ১৫ই দ্বিতীয় বিমান নামলেই বোঝা যাবে। নইলে ট্রাম্পের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের’ দাবি নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলার সুয়োগ পেয়ে যাবে বিরোধী শিবির।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)