চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাওয়া আকাশে উড়ে যাচ্ছে একটার পর একটা আগুনের গোলা। ‘বুম... বুম’ আওয়াজে খানখান হয়ে যাচ্ছে নৈঃশব্দ্য। আজ রাত সওয়া ৯টা নাগাদ ভিডিয়োটা এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা লিখলেন, ‘এ তো সংঘর্ষবিরতি নয়। শ্রীনগরের আকাশ-হামলা প্রতিরোধ ব্যবস্থা এইমাত্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।’
আজ বিকেলে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরে রাত নামতেই কাশ্মীরবাসী টের পেলেন, পাকিস্তান আছে পাকিস্তানেই। রাত সওয়া ৮টা নাগাদ জম্মু সীমান্তে ফের গুলি চালাতে শুরু করল পাক বাহিনী। আরএস পুরা-য় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিএসএফের সাব ইনস্পেক্টর মহম্মদ ইমতিয়াজ়। বিএসএফ জানিয়েছে, একটি বর্ডার আউটপোস্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমতিয়াজ় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাহিনীকে।
আরও রাতে খবর পাওয়া যায়, নাগরোটা সেনা ছাউনিতে এক সন্দেহভাজনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সেনা গুলি চালায়। ওই সন্দেহভাজন পাল্টা গুলি চালালে রক্ষী জওয়ান আহত হন। সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
আজ রাত ৯টা নাগাদ শ্রীনগরের লাল চকের পাশাপাশি বাদামি বাগের সেনা ক্যান্টনমেন্ট, সাফাপোরার মতো এলাকায় শোনা যায় বিস্ফোরণের শব্দ। বিকেলে সংঘর্ষবিরতি ঘোষণার পরে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছিল। ঝলমলে আলো জ্বলছিল ডাল লেকের হাউসবোটগুলোতে। এ বার সেই আলোগুলো দপ দপ করে নিভতে থাকে। নিষ্প্রদীপ হয়ে যায় গোটা কাশ্মীর, সেই সঙ্গে জম্মুরও বিভিন্ন এলাকা। পরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়, শ্রীনগর-সহ উপত্যকার নানা এলাকার আকাশে আবার ড্রোন দেখা গিয়েছে। শ্রীনগরের বাটওয়ারায় এবং অনন্তনাগে সেনার পরিকাঠামোকে নিশানা করতে আসা দু’টি ড্রোনকে গুলি করে নামানো হয়েছে বলেও সেনাকর্তাদের উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়।
গত রাতে শ্রীনগর বিমানবন্দরে হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল পাকিস্তান। গত কয়েক দিনের পাক-হামলায় জম্মু-কাশ্মীরে অন্তত কুড়ি জন মারা গিয়েছেন। আজ ভোরে পাক সেনার গোলা সটান এসে পড়ে রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার (এডিডিসি) রাজকুমার থাপার বাড়িতে। বছর পঞ্চান্নর রাজকুমার গুরুতর আহত হন। পরে তাঁর মৃত্যু হয়। শোনা যাচ্ছে, তিনি উত্তরবঙ্গের আদি বাসিন্দা।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর বলেন, ‘‘গত কালই উনি উপমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। আমার একটি বৈঠকেও যোগ দেন। আর আজ পাকিস্তানি গোলাবর্ষণে ওঁকে হারালাম।’’ রাজকুমার ছিলেন এক জন ডাক্তারও। ওমর তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করেন। জম্মুর উপকণ্ঠে রাইপুরের একটি বাড়িতেও পাকিস্তানের গোলার আঘাতে জ়াকির হুসেন নামে এক ব্যক্তি মারা যান।
আজ বিকেলেই সংঘর্ষবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে ওমর বলেছিলেন, ‘‘আলোচনার পথ আগে খুললে অনেক প্রাণ বেঁচে যেত।’’ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘‘অবশেষে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে মানুষগুলো।’’ পাক সীমান্ত লাগোয়া কুপওয়ারা, বারামুলা, গুরেজ়, গুলমার্গ, কেরন সেক্টরের মতো এলাকা থেকে শুক্রবার রাতেও দলে দলে লোক পালিয়েছে। ঘরছাড়াদের জন্য ত্রাণশিবির খুলেছে সরকার। ছাপোষা সাধারণ কাশ্মীরিরা অনেকে আজও মনে করাচ্ছিলেন, শান্তির কোনও বিকল্প নেই। যেমন তরুণ কলেজ শিক্ষক আব্দুলরশিদ। বলছিলেন, ‘‘ড্রোন নয়,ডায়লগ (আলোচনা) চাই। গোলাগুলির রাতের পরে স্তব্ধতা এলে বড় পবিত্র মনে হয় তাকে।’’
আজ সন্ধ্যায় ভূস্বর্গের আকাশেও ছিল ক্ষণিকের সেই স্তব্ধতা। কিন্তু গভীর রাতের জ্যোৎস্না বেয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম নামল কি?
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)