উত্তর ভারতের পাহাড়ি রাজ্য হিমাচলপ্রদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে অন্তত ৮৩টি তুষার চিতাবাঘ বা স্নো লেপার্ড। আগের বছরের তুলনায় যে সংখ্যা ৩২টি বেশি। সম্প্রতি হিমাচলপ্রদেশের বন দফতরের সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে। সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্পিতি, তাবো-সহ ছ’টি জায়গায় মোট ৪৪টি সাবালক তুষার চিতাবাঘের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। ২০২৪ সালের সমীক্ষায় হিমাচলপ্রদেশে মোট ৪৪টি তুষার চিতাবাঘের অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষায় সেই সংখ্যাবৃদ্ধিকে আশাব্যঞ্জক হিসেবেই মনে করছেন হিমাচলের বনকর্তারা। প্রসঙ্গত, তুষার চিতা (প্যান্থেরা উনসিয়া) আদতে চিতাবাঘ গোত্রেরই প্রাণী। উঁচু পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করে এরা।
২০১৯ সালে দেশে প্রথম তুষার চিতার সুমারি শুরু হয়েছিল। চলেছিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ২০২৪ সালে সুমারি রিপোর্ট প্রকাশ হয়। সূত্রের খবর, লাদাখ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ, সিকিম, অরুণাচলপ্রদেশ-সহ বিস্তীর্ণ হিমালয় পার্বত্য এলাকা জুড়ে ৭১৮টি তুষার চিতার খোঁজ মিলেছিল। এর মধ্যে লাদাখেই (৪৭৭টি) সর্বাধিক পরিমাণে এই প্রাণী পাওয়া গিয়েছিল। তারপর ন্যাশনাল কনজ়ারভেশন ফাউন্ডেশন (এনসিএফ) নামে একটি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় পর্যায়ের গণনা শুরু করে হিমাচলপ্রদেশ বন দফতর। সে রাজ্যের বনকর্তাদের বক্তব্য, উঁচু পাহাড়ি এলাকার বাস্তুতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণী। সংরক্ষণের নিরিখেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞদের মতে, পাহাড়়ি এলাকায় অনিয়ন্ত্রিত ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের জেরে তুষার চিতাদের বাসস্থান এবং অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছে। তুষার চিতার বাসস্থানের বড় অংশ এখনও অসংরক্ষিত বলেও ওই বিশেষজ্ঞদের দাবি। এই পরিস্থিতিতে হিমাচলে তুষার চিতার সংখ্যাবৃদ্ধিকে দেশের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন তাঁরা। হিমাচলের বন দফতর এবং এনসিএফ জানিয়েছে, তুষার চিতার সংরক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশকেও যুক্ত করা হয়েছিল। এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে সংরক্ষণের কাজকেও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই সমীক্ষায় ক্যামেরার ফাঁদে তুষার চিতার পাশাপাশি আরও কিছু প্রাণীরও সন্ধান মিলেছে। এনসিএফ জানিয়েছে, কিন্নরে পাল্লাসাসেস ক্যাট (এক ধরনের বন্য বেড়াল, স্থানীয় ভাষায় মানুল বলা হয়) দেখা গিয়েছে। এই প্রথম হিমাচলে এই বেড়ালের দেখা মিলল। লাহুলে উলি ফ্লাইং স্কুইরেল (এক ধরনের উড়ুক্কু কাঠবেড়ালি) ফের দেখা গিয়েছে। আগে দেখা গেলেও বহু বছর হিমাচলে এর দেখা মিলত না। বাদামি ভাল্লুক, হিমালয়ের নেকড়ে-সহ অন্যান্য প্রাণী সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এই সমীক্ষা থেকে উঠে এসেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)