Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রায়ের আগেও উকিলকে ডাক, ‘আশ্রমে এসো’

পরনে সুতির সাদা লুঙ্গি আর গায়ে জড়ানো শাল। পরিচিত পোশাকেই আজ সকালে বিচারকের সামনে হাজির হয় আসারাম। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত খুব হাসিখুশি ছিল।

সতর্ক: বুধবার জোধপুর জেলের বাইরে পুলিশ। ছবি: পিটিআই।

সতর্ক: বুধবার জোধপুর জেলের বাইরে পুলিশ। ছবি: পিটিআই।

ঊশীনর মজুমদার
জোধপুর শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:৩৭
Share: Save:

‘শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত’। আসুমল সিরুমলানী হরপালনী ‘আসারাম’-কে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে এই কথাই বললেন জোধপুর বিশেষ আদালতের বিচারক মধুসূদন শর্মা। সাড়ে চার বছর ধরে চলা মামলার আজ ছিল শেষ দিন। সাজা ঘোষণার কিছু ক্ষণ আগেই নাবালিকাকে ধর্ষণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এই স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে। যৌন হেনস্থা থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য ২০১২ সালে যে পকসো আইন আনা হয়েছে, সেই আইনেরই আওতায় আজ আসারামের সাজা ঘোষণা করা হয়।

পরনে সুতির সাদা লুঙ্গি আর গায়ে জড়ানো শাল। পরিচিত পোশাকেই আজ সকালে বিচারকের সামনে হাজির হয় আসারাম। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত খুব হাসিখুশি ছিল। নির্যাতিতার আইনজীবীকে বলে, ‘‘হরিদ্বারে আমার আশ্রমে এক বার ঘুরে যেয়ো।’’ ছবিটা অবশ্য বদলে যায় সাজা ঘোষণার পরেই। দৃশ্যতই ভেঙে পড়ে ৭৭ বছর বয়সি স্বঘোষিত ধর্মগুরু।

২০১৭-র অগস্ট মাসে আর এক ধর্ষক ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের সাজা ঘোষণার সময়ে হরিয়ানার পঞ্চকুল্লায় ব্যাপক গোলমাল হয়েছিল। জোধপুর পুলিশের লক্ষ্য ছিল, যে করেই হোক আজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জয়পুর হাইকোর্টের জোধপুর বেঞ্চে আগেই তারা আবেদন জানিয়ে রেখেছিল, আদালতে নয়, সাজা ঘোষণা করা হোক আদালত চত্বরের মধ্যেই। সেই আর্জি মেনে নিয়ে ছিল জয়পুর হাইকোর্ট।

আসারাম মামলা ঘিরে হিংসা কম হয়নি। ইতিমধ্যেই খুন হয়ে গিয়েছেন মামলার চার প্রধান সাক্ষী। আসারামের সঙ্গী, পরে পুলিশের সাক্ষী হয়ে যাওয়া আর এক ব্যক্তি দু’বছর ধরে নিখোঁজ। জোধপুর পুলিশের শীর্ষ অফিসারদেরও নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাই আজ নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনও ফাঁক রাখেনি পুলিশ। যে কোনও জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। জেল চত্বরে সাংবাদিক ছাড়া আর কোনও বাইরের লোক ঢুকতে দেওয়া হয়নি। জেলের পাশেই রেল স্টেশন। সেই স্টেশনেরও কিছুটা আজ বন্ধ রাখা হয়। আসারামের কয়েক জন ভক্ত গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছিল। তাই শহর জুড়েই ছিল কড়া নজরদারি।

অভিযোগকারিণীর পরিবারের বাড়িতেও বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। জেল চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়নি তাঁদের। আসারাম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে নিজেদের আইনজীবীকে ফোন করে কেঁদে ফেলেন অভিযোগকারিণীর বাবা। আর সাজা ঘোষণার পরে বলেন, ‘‘এত দিন পরে আজ আমার মেয়েকে একটু খুশি দেখছি।’’

এর পরে আসারামকে সম্ভবত অমদাবাদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আর একটি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত সে। সেই অভিযোগকারিণীর বোনকে ধর্ষণের দায়ে আপাতত সুরাতের জেলে রয়েছে আসারাম-পুত্র নারায়ণ সাই।

(লেখক সাংবাদিক, আসারাম বাপুকে নিয়ে বই লিখছেন)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE