Advertisement
E-Paper

‘হাত’ নিয়েই ফ্যাসাদে, হাল ছাড়ছেন না জোগী 

হাঁফাতে হাঁফাতে পার্টি অফিসে ঢুকলেন অরুণা জয়সওয়াল। ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেসের নেত্রী।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২৫

হাঁফাতে হাঁফাতে পার্টি অফিসে ঢুকলেন অরুণা জয়সওয়াল। ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেসের নেত্রী। দলের রাজ্য সম্পাদক ওমপ্রকাশ বাঙ্কা-র সামনের চেয়ারে ধপ করে বসে বললেন, “এ তো মহা বিপদ! কংগ্রেসের লোকেরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বলছেন, অজিত জোগীকে ভোট দিন। হাত চিহ্নে ভোট দিন!”

দু’বছর আগে কংগ্রেস ভেঙে নিজের দল গড়েছেন অজিত জোগী। ছত্তীসগঢ় জনতা কংগ্রেস। এ বার ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে প্রথম পরীক্ষা। কংগ্রেস বনাম বিজেপি দ্বিমুখী লড়াইয়ে তিনিই ‘তৃতীয় শক্তি’। জোট করেছেন মায়াবতী ও সিপিআইয়ের সঙ্গে। কংগ্রেস চিন্তায়। ১৫ বছর পরে বিজেপিকে হারিয়ে, ছত্তীসগঢ়ের ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে তারা। জোগী যদি কংগ্রেসের ভোট কেটে তা ভেস্তে দেন! বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহেরও আশা, “বিজেপির থেকে কংগ্রেসের ভোটই বেশি কাটবেন জোগী।”

কিন্তু জোগীর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র মারওয়াহিতে তাঁর দলের ওমপ্রকাশ, অরুণারাই পড়েছেন চিন্তায়। ছত্তীসগঢ়ে জনতা কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রতীক ‘হাল চালানো চাষি’। এ দিকে নর্মদা নদীর উত্সস্থল অমরকণ্টকের কাছে, মারওয়াহির দেহাতি মানুষের কাছে অজিত জোগী মানেই ‘হাত’ চিহ্ন। কংগ্রেসের কিছু লোক সেই সুযোগই নিচ্ছেন। গোটা রাজ্যে জোগী কংগ্রেসের কতখানি ভোট কাটবেন, তার হিসেব চলছে। আর জোগীর ঘরে ঘুঘু! কংগ্রেসের কিছু লোক এখানে তাঁরই ভোট কাটতে দুষ্টু বুদ্ধি ধরেছে।

আরও পড়ুন: নেতার অভাব মোছা চ্যালেঞ্জ কংগ্রেসের

অজিত জোগী হাল ছাড়ার পাত্র নন। ১৪ বছর আগে দুর্ঘটনায় দু’টো পা-ই বিকল হয়ে যাওয়ার পর থেকে হুইলচেয়ারে বন্দি। অন্য কেউ হলে হয়তো এত দিনে হাল ছেড়ে দিতেন। কিন্তু অজিত জোগী হাল ছাড়েননি। ২০০০ সালে ছত্তীসগঢ় রাজ্য গঠনের পর তিনিই হন রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের ১৮ বছর বয়সে ফের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। ৭২ বছর বয়সে, হুইলচেয়ারে বসেই চষে ফেলছেন গোটা রাজ্য। অনেকের ধারণা, ভোটের পরে ছত্তীসগঢ়ে কে সরকার গড়বে, জোগীর হাতেই তার চাবিকাঠি থাকবে। কংগ্রেস বা বিজেপির গরিষ্ঠতা না পেলে কিছু আসনের জন্য দু’পক্ষকেই জোগীর শরণাপন্ন হতে হবে। তখন তিনিই ‘কিংমেকার’ হয়ে উঠবেন। দলের স্লোগান ‘আব কি বার, জোগী সরকার।’

অজিত নিজেও বলছেন, “কিংমেকার নই। আমিই কিং হব।” কর্নাটকে ভোটের পরে শেষ মুহূর্তে বিজেপিকে আটকাতে জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট করেছিল কংগ্রেস। অনেক কম আসনে জিতেও জেডি(এস)-এর এইচ ডি কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হন। জোগীর অনুমান, ছত্তীসগঢ়েও তেমনই হবে। ৯০ আসনের বিধানসভায় ১০টিতে জিতেও তিনি কংগ্রেস বা বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। তাঁর যুক্তি, “রাজনীতিতে সবই সম্ভব।”

বাবা সতনামী সমাজের দলিত। মা আদিবাসী। গরিব পরিবারের ছেলে অজিত নিজের মেধা ও পরিশ্রমের জোরে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার হন। ২২ বছরেই আইপিএস। তার পরেও হাল ছাড়েননি। তিন বছরের মাথায় আইএএস। রাজীব গাঁধীর নজরে পড়ে যান। কংগ্রেসে আসার পরে রাজ্যসভা, লোকসভা, বিধানসভা—কিছুই বাদ যায়নি।

পাঁচ বছর আগে নিজের মারওয়াহি আসন পুত্র অমিত জোগীকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এ বার পুত্রের আসনে ফের পিতা। পুত্র গোটা রাজ্যে দলের প্রচার দেখভালের দায়িত্বে। পুত্রবধূ রিচা লড়ছেন দলিত-জনজাতি অধ্যুষিত আলাকতারা আসনে, বহুজন সমাজ পার্টির টিকিটে। আর স্ত্রী রেণু মারওয়াহির পাশের আসন কোটা-য় প্রার্থী। কংগ্রেস নেতা টি এস সিংহদেও বললেন, “অজিত জোগী মুখ্যমন্ত্রী হতে ভোটে নামেননি। পারিবারিক দল খুলে বিজেপির হয়ে কংগ্রেসের ভোট কাটতে নেমেছেন।”

অজিত জোগী কান দেন না। তাঁর অভিনব ইস্তাহার স্ট্যাম্পপেপারে ছাপানো। রীতিমতো নোটারির সিলমোহরওয়ালা। মুখ্যমন্ত্রী হলে কী করবেন, তার আইনি প্রতিশ্রুতি। হুইলচেয়ারে বসেই ভোটারদের বলেন, “স্ট্যাম্পপেপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কথার খেলাপ হলে আমাকে জেলে পুরবেন। শুধু মনে রাখবেন, এ বার হাত নয়। হাল চিহ্নে ভোট দিতে হবে।” পুরনো ‘হাত’ ফ্যাসাদে ফেললেও অজিত জোগী হাল ছাড়ার পাত্র নন।

Assembly Elections 2018 Chattisgarh Assembly Election 2018 Ajit Jogi Former Chief minister of Chhattisgarh BJP Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy