বান্টি এখন প্রায় প্রৌঢ়। ২৮ বছর আগে, ১৯৯১ সালে আলাপ হয়েছিল ওর সঙ্গে। অযোধ্যায়। বজরং দলের সদস্য, বছর ২৩-২৪ এর রাগী যুবক। প্রথম আলাপে বলেছিল, ‘বোল্, জয় শ্রীরাম! আবে বোল্।’ সরযূর ও পারে সুলতানপুর জেলার কোনও গ্রামে ওর বাড়ি। যখনই রামজন্মভূমির উদগাতারা ডাক দিয়েছেন, বান্টি অযোধ্যায় হাজির হয়েছে। এক বারও মিস্ নেই। ৯১-৯২, বছর দুয়েকে বহু বার অযোধ্যা যাতায়াতে প্রায় বন্ধুত্ব। করসেবকদের ভিতরের খবর-টবর বলে। কিন্তু সে দিন, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের দুপুরে সেই বান্টিই বাঁশ হাতে তেড়ে এল, ‘ভাগ যাইয়ে দাদা। নেহি তো অনর্থ্ হো জায়গা।’
অনর্থ তখন শুরু হয়ে গিয়েছে। যে বিতর্কিত কাঠামোটিকে কেন্দ্র করে অযোধ্যায় এই আসা-যাওয়া, তার উপরে-নীচে, ডাইনে-বামে, সামনে-পিছনে তখন থিকথিক করছে হাজার হাজার ‘বান্টি’। ও পাশে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অস্থায়ী অফিস থেকে তখন ভেসে আসছে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অশোক সিঙ্ঘলের গলা। করসেবকদের জন্য অনুশাসন-বাহী বার্তা, ‘শান্ত রহিয়ে’, ‘আপকা করসেবা হো গিয়া, অব উতর আইয়ে’ কিংবা ‘রাম কা নাম বদনাম মৎ কিজিয়ে’ গোছের সতর্ক-বার্তা।
কিসের সতর্কতা। উন্মত্ত করসেবকরা বিতর্কিত কাঠামোর বাইরের দিকের লোহার পাইপের বেড়া, লোহার বড় বড় অ্যাঙ্গল ভেঙে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। সেই লোহার টুকরোই তাদের হাতিয়ার। তার আঘাতে একে একে ধসে পড়েছে ভিতর-বাইরের তিন-চার ফুট চওড়া দেওয়াল। কয়েকশো বছর আগে তৈরি সেই দেওয়ালে ইট তো গাঁথা হয়েছে মাটি দিয়ে। কড়ি-বরগার উপরে শুধু ছাদ আর তিনটি গম্বুজ চুন-সুরকির ঢালাই। সেটাই যা শক্ত-পোক্ত। তথাকথিত গর্ভগৃহের থামও লাগাতার আঘাতে জর্জরিত। প্রথম আধ ঘণ্টা গম্বুজে আঘাত হেনেও তাকে বাগে আনতে পারেনি করসেবকরা। এ বারগম্বুজ আর ছাদের ‘জোড়’-এ পড়তে লাগল মূল চক্রী, অন্ধ্র থেকে আসা ‘সশস্ত্র’ দলটির শাবল-গাঁইতি।