ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুতের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। জুন মাসে এই টাকা দেওয়া হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর কর্তারা টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সূত্রের খবর, আদানিদের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সমঝোতাও হয়েছে। সঠিক সময়ে বাকি বকেয়া মিটিয়ে দিলে দেরি করে টাকা দেওয়ার বাড়তি খরচ (লেট পেমেন্ট সারচার্জ বা এলপিএস) করতে হবে না বাংলাদেশকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই দু’টি সূত্র উল্লেখ করে এই খবর জানিয়েছে।
ঝাড়খণ্ডে আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সমগ্র বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের চুক্তি অনুসারে, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে রফতানি করা হয় ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু গত অক্টোবরে এই সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছিল মুহাম্মদ ইউনূস পরিচালিত অন্তর্বর্তী সরকার। তাদের কাছে আদানিদের বিদ্যুতের খরচ বাবদ বকেয়া ছিল সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি। জুন মাসের মধ্যে ৩৭০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। বাংলাদেশ দিয়েছে ৩২০০ কোটি টাকা। জুন মাসে এখনও পর্যন্ত আরও ৫০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
আরও পড়ুন:
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বাংলাদেশে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়েছিল। আদানিদের বকেয়া মেটাতে তখন থেকেই সমস্যায় পড়ে ঢাকা। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছিল। যার ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালের অগস্টে পড়ে যায় শেখ হাসিনার সরকার। এই পরিস্থিতিতে শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকায় গত বছরের শেষ দিকে আদানিদের থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ অর্ধেক করার কথা জানিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সরবরাহ কমে যাওয়ায় নভেম্বর থেকে গোড্ডায় একটিই ইউনিট চালু রেখেছিল আদানি গোষ্ঠী। পরে চলতি বছরের মার্চ থেকে আবার সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হয় বাংলাদেশে। ধীরে ধীরে মাসিক কিস্তিতে বিদ্যুতের বকেয়া মেটাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেরি করে টাকা দেওয়ায় যে বাড়তি খরচ করতে হত বাংলাদেশকে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সেই খরচের পরিমাণ অন্তত ১৭০ কোটি টাকা। সূত্রের খবর, সময়ে বকেয়া মেটালে এই টাকায় ছাড় দিতে রাজি হয়েছেন আদানিরা। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর আলোচনা চলছে। আদানি পাওয়ারের মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে তিনি অর্থপ্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু সমঝোতা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলতে চাননি। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর আদানিদের সঙ্গে পূর্বতন সরকারের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত চুক্তি তদন্তের আওতায় আনা হয়। এই চুক্তি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করেছিলেন ইউনূস।