চাকরি খুঁজতে গিয়েছিল এলাহাবাদের যুবক রাবেন্দ্র সিংহ। কিন্তু চাকরি তো হয়ইনি, উল্টে সে প্রতারকের পাল্লায় পড়ে উল্টে ৮ লক্ষ টাকা খুইয়ে ফেলে। তবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা খোয়ানোই কিন্তু রাবেন্দ্রর সামনে উপার্জনের একটা নতুন পথ খুলে দিয়েছিল।
রাবেন্দ্র টাকাটা খুইয়ে একদম মুষড়ে পড়েনি। প্রতারিত হওয়ার অভিজ্ঞতাকে হাতিয়ার করে নিজেই ফেঁদে বসে প্রতারণার ব্যবসা। ঠিক যে ভাবে সে চাকরির জন্য প্রতারিত হয়েছিল, সে ভাবেই প্রতারিত করতে শুরু করে বেকার যুবক-যুবতীদের। রাবেন্দ্র বুঝেছিল, এই কাজটার মধ্য দিয়ে সহজেই লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া যাবে। ফলে এক দিকে তার খোয়ানো টাকাটাও উঠে আসবে, অন্য দিকে ভাল উপার্জনও হবে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে খড়্গ নিলাম, বিতর্ক
পরিকল্পনা মতো রাবেন্দ্র নিজের ভাইপো ও দুই বন্ধুকে জুটিয়ে নেয় তাকে সহযোগিতা করার জন্য। শুরু হয় তাদের প্রতারণার চক্র। সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে শুরু করেন প্রতারণার ব্যবসা। সিবিআই, ফুড কর্পোরেশন এবং রেলের মতো সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে শুরু করে তারা। কাজ অনুযায়ী টাকাও দাবি করত। এক একটি চাকরির জন্য বেকারদের কাছ থেকে ৪-৫ লক্ষ টাকা করে নিত তারা। শুধু তাই নয়, সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যে যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োজন সব কিছুরই আয়োজন করত। পরীক্ষায় বসানো, ইন্টারভিউ এমনকী নিয়োগপত্রেরও ব্যবস্থা করত রাবেন্দ্ররা। তবে সব কিছুই ছিল ভুয়ো। কিন্তু এমন নিখুঁত ভাবে এ সবের আয়োজন করত যে কেউ তাদের ঠগবাজি ধরতে পারেননি অনেক দিন। এ ভাবে প্রায় ৫০ জনকে তিন বছর ধরে প্রতারিত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় রাবেন্দ্ররা।
আরও পড়ুন: এ বার ‘লকি র্যানসমওয়্যার’-এর হানা, কেন্দ্রের সতর্কবার্তা
আরও পড়ুন: পাক গুপ্তচর সংস্থার সাইবার ফাঁদ! চুরি হয়েছে সেনার বহু গোপন নথি?
এরই মধ্যে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা প্রতারিত হয়ে এক ব্যক্তি পুলিশে অভিযোগ জানান। আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসে দিল্লি ও এলাহাবাদ পুলিশের কাছে। তার পরেই তদন্তে নামে পুলিশ। কিন্তু কিছুতেই বাগে পাচ্ছিল না রাবেন্দ্রদের। অবশেষে গত ২৯ অগস্ট তারা পুলিশের জালে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, চক্র চালানোর জন্য একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছিল রাবেন্দ্ররা। অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে ফেলতেন অজান্তে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, রাবেন্দ্র একটা ছোট সংস্থায় কাজ করত। সাল ২০১৪। যা আয় করত তাতে সংসার খুব ভাল ভাবে চলত না। সরকারি চাকরি খুঁজতে শুরু করে রাবেন্দ্র। সে সময়ই তার আলাপ হয় অভিষেক পাণ্ডের সঙ্গে। অভিষেকই তাকে সরকারি চাকরি পাইযে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই মতো ৮ লক্ষ টাকা দাবি করে। ধার-দেনা করে সেই টাকা জোগাড় করে অভিষেকের হাতে তুলে দেয় সে। ঠিক যে ভাবে রাবেন্দ্ররা ভুয়ো পরীক্ষা, ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করেছিল, ওই সময় রাবেন্দ্রকেও একই ভাবে পরীক্ষা দেওয়ানো করা হয়। পরীক্ষার ছ’মাস পর যখন অভিষেকের আর কোনও পাত্তা পাওয়া যায়নি, রাবেন্দ্র বুঝতে পারে সে প্রতারিত হয়েছে। তার পরই প্রতারণার ব্যবসা ফাঁদার পরিকল্পনা মাথায় আসে রাবেন্দ্রর। যেমন ভাবা অমনি কাজ।