রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ যখন গন্তব্যে পৌঁছলেন ওলা চালক সোমশেখর, চার যাত্রী বললেন, আরও একটু এগিয়ে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিতে। যাত্রীদের প্রতি বিশ্বাসবশত অস্বীকার করেননি সোমশেখর। কিন্তু সেটাই তাঁর জীবনে ডেকে আনল ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন।
খানিকটা এগোতেই চার যাত্রী নিজেদের রূপ ধরল। শুরু হল সোমশেখরকে মারধর। এক সময় তাঁকে চালকের আসন থেকে সরিয়ে পিছনে বসিয়ে চলল লুঠপাট। নগদ, পেটিএম-এ যা টাকাপয়সা ছিল সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েও থামেনি তারা। সোমশেখরের ফোন থেকেই তাঁর স্ত্রীকে তারা ভিডিয়ো কল করে। স্বামীকে খুনের হুমকি দিয়ে তাঁকে নগ্ন হতে বাধ্য করল দুষ্কৃতীরা। সোমশেখর ও তাঁর পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে ওলা কর্তৃপক্ষ।
এমনই রোমহর্ষক ঘটনার সূত্রপাত হয় বেঙ্গালুরুর অদুগরিতে। আর সোমশেখরের প্রাথমিক বিপদ কাটে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কর্নাটকের রামনগর জেলার চান্নাপাটনা এলাকার একটি লজে। অভিযোগ পেয়েই ওই লজে অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু ততক্ষণে এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছেন তদন্তকারী অফিসাররা।
আরও পড়ুন: গলায় চার্জারের তার পেঁচিয়ে খুন রজত! অবশেষে গ্রেফতার স্ত্রী অনিন্দিতা
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অদুগরি থেকে দোমোসান্দ্রা যাওয়ার জন্য ক্যাব বুক করে চার জন গাড়িতে ওঠে। গন্তব্যে পৌঁছনোর পর বাড়ির কাছে নামিয়ে দেওয়ার কথা বলে চালক-সহ ক্যাব অপহরণ করে দুষ্কৃতীরা। তার পর নিজেরাই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় রামনগর জেলার দিকে।
ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনাতে গিয়ে সোমশেখর বলেন, ‘‘প্রায় ১০০ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। আমার কাছে নগদ প্রায় ৯০০০ টাকা ছিল। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০০০০ টাকা ছিল। সেটা পেটিএম-এর মাধ্যমে এক আত্মীয়কে পাঠাতে বলি। সেই টাকাও তুলে নেয় ওই চার জন।’’
আরও পড়ুন: কথার ফাঁকেই মাদক মেশানো খাবার খাওয়ানো হত তরুণীদের
‘‘কিন্তু তার পরও অত্যাচার শেষ হয়নি। এক জায়গায় গিয়ে গাড়ি থামিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। আমার ফোন থেকেই আমার স্ত্রীকে ভিডিয়ো কল করে। আমেকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে স্ত্রীকে নগ্ন হতে বাধ্য করে। কলের সময় প্রচুর স্ক্রিন শট নিয়ে নেয়। তার পর আমার ফোনটিও নিয়ে নেয়। এর পর গাড়ি-সহ আমাকে জোর করে একটি লজে তোলে। সেখানে বাথরুমে যাওয়ার নাম করে জানালা দিয়ে বেরিয়ে কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসি।’’ পুলিশকে জানিয়েছেন সোমশেখর।
ওই অবস্থাতেই স্থানীয় একটি থানায় গোটা ঘটনার কথা জানান সোমশেখর। পরে পুলিশের সাহায্যেই অদুগরি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ঘটনার পর ওলার মুখপাত্রের তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। যে অ্যাকাউন্ট থেকে গাড়ি বুক করা হয়েছিল, সেটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। চালক সোমশেখরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং সাহায্য করা হবে। পাশাপাশি তদন্তকারীদেরও সব রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করা হবে।’’