Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Bihar Election 2020

বিহারে আজ শেষ দফা: অন্তত প্রচারের সুরে ‘জয়’ দেখছে মহাজোট

লকডাউনের পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা, উন্নয়ন ও বেসরকারি লগ্নির বিহারের পিছিয়ে থাকা, এবং করোনা, বন্যা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার নীতীশ-সরকারের কাজ নিয়ে প্রশ্ন।

আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’। ছবি: সংগৃহীত।

আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’। ছবি: সংগৃহীত।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৮
Share: Save:

নীতীশ কুমারই থাকবেন না কি তাঁকে সরিয়ে তেজস্বী যাদব পটনার গদিতে বসবেন, তা আগামী মঙ্গলবার ভোটগণনার পরেই জানা যাবে। আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ‘মহাগঠবন্ধন’-এর নেতারা প্রচার শেষে একটি বিষয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন। তা হল, বিজেপি-জেডি(ইউ) জোট বিহারের বাস্তব সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে পারেনি।

আগামিকাল বিহারে তৃতীয় ও শেষ দফার ভোটগ্রহণ। গোটা প্রচারপর্ব আজ পর্যালোচনার পরে বিরোধী জোটের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার দাবি, “আমরা ওঁদের স্টেডিয়ামে, ওঁদের পিচে খেলা নিয়ে যেতে দিইনি। বিজেপি তথা এনডিএ-কে আমাদের পিচেই খেলতে হয়েছে। এটা অবশ্যই আমাদের সাফল্য।”

আরজেডি-কংগ্রেস নেতাদের কাছে ‘ওঁদের পিচ’ বলতে বিজেপির জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মেরুকরণের অস্ত্র। ‘আমাদের পিচ’ বলতে বিহারে চাকরির অভাবে অন্য রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাওয়ার সমস্যা, লকডাউনের পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেনস্থা, উন্নয়ন ও বেসরকারি লগ্নির বিহারের পিছিয়ে থাকা, এবং করোনা, বন্যা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার নীতীশ-সরকারের কাজ নিয়ে প্রশ্ন।

• মূল লড়াই জেডিইউ-বিজেপি-এইচএএম জোট বনাম আরজেডি-কংগ্রেস-বাম জোটের মধ্যে। একা লড়ছে চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি। হাজির উপেন্দ্র কুশওয়াহার আরএলএসপি, আসাদুদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম, জন অধিকার পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির জোটও।

• ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ৩৭১ জন প্রার্থী। ২৮২ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ।

• মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধে অভিযুক্ত ৩৭ জন। ৫ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ।

• ২০ জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা। ৭৩ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ।

• ৩৬১ জন কোটিপতি প্রার্থী।

• সবচেয়ে ধনী ওয়ারিসনগরে আরএলএসপি প্রার্থী বি কে সিংহ। সম্পত্তির পরিমাণ ৮৫ কোটি টাকা।

• উল্লেখযোগ্য প্রার্থী: বিহারিগঞ্জ কেন্দ্রে শরদ যাদবের মেয়ে সুভাষিনী যাদব। কেওটী কেন্দ্রে প্রবীণ আরজেডি নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকী।

• মহিলা প্রার্থী ১১০ জন।

• প্রচারে মূল বিষয়: পরিযায়ী সমস্যা, বেকারত্ব, দুর্নীতি

আরও পড়ুন: বিহারে ভোটের ফলের আগে লালুপ্রসাদের জামিন নয়, জানাল ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট​

সূত্রের খবর, প্রচার পর্বের পর্যালোচনা করতে বসে মহাজোটের নেতারা সকলেই বলেছেন, এই সব প্রশ্নের সামনে এ বার বিহারে অন্যান্য বারের তুলনায় জাতপাতের অঙ্কও ফিকে দেখাচ্ছে। আরজেডি নেতা মনোজ কুমার ঝা-র যুক্তি, ‘নওকরি, দাওয়াই, পড়াই, সিঁচাই’ (চাকরি-স্বাস্থ্য-শিক্ষা-কৃষি) —এই চারটি বিষয়ে তেজস্বীর নেতৃত্বে তরুণ প্রজন্মের সরকার মন দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আরজেডি নেতাদের দাবি, তেজস্বীর সঙ্গে বিহারের মানুষ যে ভাবে একাত্মবোধ করছে, তা বহু দিন দেখা যায়নি। কংগ্রেসের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “বিহারে পরিবর্তনের ঢেউ উঠেছে। সে কারণেই ক্লান্ত নীতীশ কুমার জানিয়ে দিয়েছেন, এটা তাঁর শেষ ভোট।

বিরোধী জোটের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে বিজেপির নেতারা কখনও কখনও গালওয়ানে বিহার রেজিমেন্টের বীরত্বের কথা বলে, কখনও অযোধ্যার রামমন্দিরের কথা বলে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন। শেষ দফার ভোটের আগে মোদী মহাজোটের শরিকরা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলেও জাতীয়তাবাদ-মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন। যোগী আদিত্যনাথও বিহারে গিয়ে অযোধ্যা থেকে সিএএ টেনে এনেছেন। কিন্তু তাতে ভোটের বিষয় বদলায়নি।

আরও পড়ুন: জানুয়ারিতেই ভারতে পাওয়া যাবে করোনার টিকা, দাবি সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও-র​

কংগ্রেসের যুক্তি, এ বিষয়ে কৃতিত্ব প্রাপ্য তেজস্বী যাদবের। তিনিই শুধুমাত্র বিহারের সমস্যা নিয়ে ১৫ বছর মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থাকা নীতীশ কুমারকে নিশানা করে গিয়েছেন। কেন্দ্রে ও রাজ্যে এনডিএ-র ‘ডাবল ইঞ্জিন’-এর সরকার থেকে বিহারের কী লাভ হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হলে প্রথম দিনেই ১০ লক্ষ চাকরির সিদ্ধান্ত নেবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তা নিয়ে প্রথমে কটাক্ষ করলেও বিজেপিকেও ইস্তাহারে পাল্টা ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। তেজস্বীর প্রশ্নের জবাবে নীতীশকে নিজের কাজের ফিরিস্তি দিতে হয়েছে। মহাজোটের নেতাদের দাবি, এতে জাতপাতের অঙ্কও কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE