দুই স্ত্রী। প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে না জানিয়েই দ্বিতীয় সংসার পাতেন বিহারের পূর্ণিয়ার এক বাসিন্দা। তা নিয়ে অভিযোগও জমা পড়ে পুলিশের কাছে। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, দুই স্ত্রী-ই ভাগাভাগি করে নেবেন স্বামীকে! সপ্তাহে তিন দিন ওই ব্যক্তিকে থাকতে হবে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে। বাকি তিন দিন থাকবেন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে। সপ্তম দিনটি নিজের মতো কাটাতে পারবেন অভিযুক্ত স্বামী।
পূর্ণিয়ার রূপাউলি থানা এলাকার ওই বাসিন্দার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর বক্তব্য, তাঁর দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু দুই সন্তানের ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতে চাইছেন না স্বামী। উল্টে বছর সাতেক আগে প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে না জানিয়েই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেন ওই ব্যক্তি। এই নিয়ে পূর্ণিয়ার পুলিশ সুপার কার্তিকেয় শর্মার কাছে অভিযোগ জানান মহিলা। পুলিশ সুপার বিষয়টি বিহার পুলিশের পরিবার পরামর্শ কেন্দ্রে পাঠান।
অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশের পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র থেকে ডেকে পাঠানো হয় স্বামীকে। ডাকা হয় দুই স্ত্রীকেও। সেখানে অভিযুক্ত স্বামী নিজের দোষ স্বীকার করেন। তিনি পরিবার পরামর্শ কেন্দ্রের সদস্যদের জানান, প্রথম স্ত্রীর কাছে ফিরতে চাইলেও দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে বাধা দেন। দ্বিতীয় সংসারেও তাঁর সন্তান রয়েছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে তিনি কী করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না। স্বামীর বক্তব্য, তিনি যখনই প্রথম স্ত্রীর কাছে ফিরতে চান, তখনই দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেন। দুই স্ত্রীর ঝগড়ায় কার্যত অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন তিনি।
প্রথম স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবার পরামর্শ কেন্দ্রের সদস্যেরা ভর্ৎসনা করেন অভিযুক্ত স্বামীকে। কেন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় সংসার পেতেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় অভিযুক্তকে। বোঝানো হয়, এটি আইনত অপরাধ। দ্বিতীয় স্ত্রীকেও ধমক খেতে হয় পরিবার পরামর্শ কেন্দ্রে। অভিযুক্ত ব্যক্তি বিবাহিত জানার পরেও কেন ওই মহিলা তাঁকে বিয়ে করলেন, তা-ও জানতে চান পরামর্শ কেন্দ্রের সদস্যেরা।
আরও পড়ুন:
তবে পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র যখন জানায়, এই অপরাধের জন্য স্বামীর জেল হতে পারে, তখন দুই স্ত্রীই ঘাবড়ে যান। স্বামী এবং দুই পক্ষের স্ত্রীর সহমতের ভিত্তিতে পরিবার পরার্শ কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, দুই স্ত্রীই ভাগাভাগি করে নেবেন স্বামীকে। প্রথমে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে চার দিন এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তিন দিন থাকবেন তিনি। তাতে দুই স্ত্রীর মধ্যে আবার ঝগড়া বেধে যায়। শেষে সিদ্ধান্ত হয়, দুই স্ত্রীর কাছেই তিন দিন করে থাকবেন স্বামী। সপ্তম দিনটি নিজের ইচ্ছা মতো যে কোনও একজনের সঙ্গে কাটাতে পারবেন তিনি। পাশাপাশি পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র জানিয়েছে, প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তানের পড়াশোনা এবং ভরনপোষণের জন্য মাসে ৪০০০ টাকা করে দিতে হবে স্বামীকে।
বিহার-সহ বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র রয়েছে। পারিবারিক বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে এই কেন্দ্রগুলি। ঘটনাগুলিতে আইনি পদক্ষেপ না করে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র বার করাই এর উদ্দেশ্য। তবে পূর্ণিয়ার এই ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযুক্ত স্বামীর আইনি বিবাহ হয়েছিল কি না, তা প্রকাশ্যে আসেনি।